দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় যখন ফের জনজীবন সংকটের মুখে তখন সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল শিক্ষা দফতর। মঙ্গলবার থেকে রাজ্যের সমস্ত সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা দফতর। বেসরকারি স্কুলগুলির উদ্দেশেও একই আবেদন জানিয়েছে রাজ্য সরকার।
এমনিতে স্কুল গত বছর মার্চ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই বন্ধ ছিল। তারপর নিউ নর্মালে নবম-দ্বাদশ শ্রেণির ক্লাস শুরু হয়েছিল সরকারি স্কুলগুলিতে। এবার সেটাও বন্ধ করে দিতে হল। সূত্রের খবর, শিক্ষা দফতর যে বিজ্ঞপ্তি জারি করতে চলেছে, তাতে বলা হয়েছে শিক্ষক, শিক্ষিকাদেরও স্কুলে যেতে হবে না।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কায় সিবিএসই-র দশম শ্রেণির পরীক্ষা বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে ইতিমধ্যেই। পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে দ্বাদশের পরীক্ষাও। গতকাল জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ডও এবারের পরীক্ষা অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। এই পরিস্থিতিতে বাংলায় মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা কবে অনুষ্ঠিত হবে তা নিয়েও সংশয় তৈরি হয়েছে। যদিও এ ব্যাপারে শিক্ষা দফতর এখনও কোনও সিদ্ধান্ত জানায়নি। সোমবার দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করবেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে তিনি কী কী ঘোষণা করেন সেটাই দেখার।
দেশের অন্য রাজ্যের পাশাপাশি বাংলাতেও বেলাগাম করোনা পরিস্থিতি । দৈনিক সংক্রমণের পরিসংখ্যান ছাপিয়ে গিয়েছে সাড়ে আট হাজারের গণ্ডি। চারিদিকে অপ্রতুল জীবনদায়ী ওষুধ। সমস্ত হাসপাতালে বেড ভর্তি। এই অবস্থায় রাজ্য সরকার করোনা মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিচ্ছে বলেই জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মানুষকে রক্ষা করার বার্তা দিলেন তিনি। সোমবার সকালে পরপর দুটি টুইট করেন মমতা । জানান, দুপুর ২টোয় সাংবাদিক বৈঠকে বাংলার সার্বিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যা জানাবেন মুখ্যসচিব।
With the massive surge in #COVID19 cases across India, GoWB is taking all necessary steps to protect its people. I've reached out the PM to help us with additional medicines and vaccines required. (1/2)
— Mamata Banerjee (@MamataOfficial) April 19, 2021
এদিন প্রথম টুইটে মমতা লেখেন, ‘ভারতে করোনা সংক্রমণের ব্যাপক বৃদ্ধির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকার রাজ্যের জনগণকে রক্ষা করার জন্য সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অতিরিক্ত ওষুধ ও টিকা দিয়ে সাহায্য করার আর্জি জানিয়েছি।’ দ্বিতীয় টুইটে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিটি স্তরে মোকাবিলার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে আমি সব উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের নির্দেশ দিয়েছি। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও অন্যান্য আমলা দুপুর ২টোয় সাংবাদিক বৈঠক করে সেই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেবেন।’
এদিকে, প্রয়োজন ভ্যাকসিন। ক্রমশই অপ্রতুল জীবনদায়ী ওষুধ। ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চিঠিতে তিনি তিনটি বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাজ্যে এই মুহূর্তে ৫.৪ কোটি ভ্যাকসিন প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও করোনায় জীবনদায়ী ওষুধ টসিলিজুমাব ও রেমডেসিভিরের অপ্রতুলতা রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার রেমডেসিভিরের ভায়াল ও এক হাজার টসিলিজুমাবের ভায়াল কেন্দ্রের কাছে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
একদিনে রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা আট হাজারের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত ৮৪১৯ । সক্রিয় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৫০ হাজার। করোনায় মৃত্যুর সংখ্যাবৃদ্ধিও উদ্বেগজনক। গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বাংলায় অর্থাৎ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে একজন। রাজ্যের মধ্যে করোনা সংক্রমণে শীর্ষস্থানে মহানগর। কলকাতায় নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে৷ গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় নতুন করে সংক্রামিত হয়েছেন ২১৯৭ জন, মৃত্যু হয়েছে ৫ জনের৷ গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উত্তর চব্বিশ পরগণা। সেখানে আক্রান্ত হয়েছেন ১৮৬০ জন, মারা গিয়েছেন ৬ জন৷