দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ যত দিন যাচ্ছে, ততই ভয়াবহ হয়ে উঠছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। তার জেরে লকডাউনের দাবি উঠছে দিল্লি এবং মহারাষ্ট্রে। ভোটের মরসুমে লকডাউন করা না গেলেও, সতর্কতামূলক ভাবে এ বার নয়া বিধি নিষেধ জারি করল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। শনিবারই রাজ্যে দৈনিক সংক্রমণ ৭ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৩৪ জন রোগীর। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তাই বিশেষ নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর।
নয়া নির্দেশিকায় মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যেমন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, তেমনই সরকারি দফতরে অর্ধেক কর্মী নিয়ে কাজ করার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। বেসরকারি সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছে, যতটা সম্ভব কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার অনুমতি দিতে।
পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্র দফতরের দায়িত্ব সামলান। রাজ্যে নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার জন্য বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকেই দায়ী করেছেন তিনি। ভিন্ রাজ্য থেকে লোক এনে সভা করে বিজেপি নেতৃত্ব রাজ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। শনিবার তাঁর হাতে থাকা স্বরাষ্ট্র দফতরই নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে। রবিবার সকালে নেটমাধ্যমে সেটি তুলে ধরেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। আপাতত আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নয়া বিধি চালু রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাতে। যা বলা হয়েছে এক নজরে দেখুন—
• বাড়ির বাইরে পা রাখলে, বাস-ট্রেন বা গাড়ি, যে ভাবেই যাতায়াত করা হোক না কেন, সব ক্ষেত্রেই মাস্ক পরা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
• সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, শিল্প-কারখানা এবং সব বাণিজ্যিক ভবনগুলির সপ্তাহে এক বার অন্তত সম্পূর্ণ ভাবে জীবাণুমুক্তকরণ করতে হবে।
• গত বছর চেম্বার অব কমার্স/ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের সহযোগিতায় যে ভাবে বাজারগুলির জীবাণুমুক্তকরণ করা হয়েছিল, এ বারও তা করতে হবে।
• বাজার, সাপ্তাহিক বাজার, সরকারি গণ পরিবহণ এমনকি নিজের গাড়িতেও মাস্ক পরা, জীবাণুমক্তকরণ এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
There is an alarming surge of #COVIDー19.
— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) April 18, 2021
All need to gear up to combat this Covid challenge.
Awaiting response of Chief Secretary @MamataOfficial to update on compliance of directives to sensitise people.
Urge NGOs to take lead in serving society on this aspect. pic.twitter.com/GLrqMqoknu
• দোকান, বাজার, কারখানা এবং বাণিজ্যিক দফতরগুলিতে সব কর্মচারী এবং গ্রাহক মিলিয়ে যেন ভিড় না জমে।
• সরকারি দফতরগুলিকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে (রোটেশনাল বেসিস) ৫০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করতে হবে।
• বেসরকারি সংস্থাগুলিকে ফের কর্মীদের দিয়ে বাড়ি থেকে কাজ করানোর ব্যবস্থা করতে হবে। যত দূর সম্ভব একদিন ছাড়া ছাড়া বা সময়সূচি ধরে, শিফ্ট ভাগ করে বাড়ি থেকে কাজ করাতে হবে।
• অফিসে বসে কাজ করার সময়ও কর্মীদের মাস্ক পরে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। দোকান, বাজার এবং অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য।
• শপিং মল, মাল্টিপ্লেক্স, থিয়েটার, রেস্তরাঁর মতো জায়গায় প্রবেশ এবং বাহির পথে গ্রাহকদের থার্মাল স্ক্যানিং করা, হাত স্যানিটাইজ করা বাধ্যতামূলক।
• স্টেডিয়াম এবং সুইমিং পুলগুলিকে আগের নির্দেশ মতোই সতর্কতা মেনে চলতে হবে।
• কোনও রকম অসতর্কতা এবং বিধি লঙ্ঘন চোখে পড়লে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অন্যদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ফের জ্যামিতিক হারে ছড়াতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা মহানগর অঞ্চলে সমস্ত বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমকে কোভিড বেডের সংখ্যা আগের থেকে ২৫ শতাংশ বাড়ানোর নির্দেশ দিতে চলেছে নবান্ন।
বাংলায় কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নবান্নে শীর্ষ স্তরের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকেই শীর্ষ আমলারা আলোচনা করেছেন যে এ যাত্রায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলিতে আগের তুলনায় বেশি বেডের প্রয়োজন হতে পারে।
স্থির হয়েছে এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ কমিশন বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোমগুলিকে অ্যাডভাইজারি পাঠাবে। তাতে বলা হবে, গত বছর কোভিডের সংক্রমণ যখন সব থেকে বেশি মাত্রায় ছিল, সেই সময়ে যত সংখ্যক কোভিড বেডের বন্দোবস্ত বেসরকারি বা কর্পোরেট হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে ছিল তার থেকেও ২৫ শতাংশ বেশি বেডের সংস্থান করতে হবে।
এ ব্যাপারে একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করেছে নবান্ন। তার নেতৃত্বে থাকবেন স্বাস্থ্য দফতরের সচিব সঞ্জয় বনশন। তিনি বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে সমন্বয় করবেন। নবান্নের কর্তারা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যে কলকাতা মহানগর এলাকায় বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলিতে আরও সাড়ে ৩ হাজার কোভিড বেডের বন্দোবস্ত হয়ে যাবে।
একই ভাবে সরকারি হাসপাতালগুলিতে কোভিড বেডের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য আরও একটি টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। তার নেতৃত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের অপর সচিব সৌমিত্র মোহন। ঠিক হয়েছে, গত বছর কোভিড সংক্রমণ চরমে থাকার সময়ে সরকারি হাসপাতালগুলিতে যত বেডের সংস্থান ছিল, তার থেকে ২০ শতাংশ কোভিড বেড বাড়াতে হবে। নবান্নের কর্তাদের মতে, আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৮ হাজার কোভিড বেড বাড়বে সরকারি হাসপাতালগুলিতে।
এ ছাড়া কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালকে পুরোপুরি কোভিড হাসপাতাল হিসাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই হাসপাতালে ২০০ টি কোভিডের বেডের ব্যবস্থা থাকবে।
এ ছাড়া ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকদের উপর নজর রাখা, প্রয়োজনীয় ওষুধের সরবরাহ অটুট রাখা, কোভিড রোগী সৎকারের যথাযথ বন্দোবস্ত করা ইত্যাদির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সেই সঙ্গে ঠিক হয়েছে প্রতিটি জেলার কোভিড ব্যবস্থাপনার উপর নজর রাখবেন এক জন সচিব পর্যায়ের আইএএস অফিসার। চুম্বকে সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি শুরু করে দিল নবান্ন।