শূন্য রেখায় মিললো দু’ই বাংলা, অমর একুশের’ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারদের স্মরণ করলো ভারত-বাংলাদেশ

0
1190
আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস:পেট্রাপোল সীমান্তে ছবি তুলেছেন- বিশ্বজিৎ কুন্ডু।

দেশের সময় : ফুলে ফুলে ঢেকেছে শহিদ মিনার। দেওয়া হয়েছে আলপনা। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পার হতেই বেজে উঠল গানের সুর, “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী/ আমি কি ভুলিতে পারি”।

আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অমর একুশের অনুষ্ঠান আজ আর কেবল বাঙালির নয়, নয় শুধু বাংলাদেশের। দেশ–কালের সীমানা অতিক্রম করে ভাষা দিবস হয়ে উঠেছে বিশ্বমানের। ২১ ফেব্রুয়ারি এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সূত্রপাত বাংলাদেশে হলেও ইউনেস্কো–র অনুমোদনে এখন সারা বিশ্বজুড়েই উদযাপিত হয়ে আসছে অমর একুশের অনুষ্ঠান।

জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত সব দেশ, সব জাতি ২১ ফেব্রুয়ারি নিজ নিজ মাতৃভাষার কথা স্মরণ করে। উদযাপন করে ভাষা দিবসের অনুষ্ঠান। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি এখন বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মাতৃভাষার প্রতীক। পৃথিবীর নানা জাতি–গোষ্ঠীর ভাষা এবং সংস্কৃতির ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে এবং সংরক্ষণে উৎসাহ যোগানোর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষের সাথে যোগসূত্র স্থাপন করতেও বড় ভূমিকা পালন করেছে। বিশ্ববাসীকে ঐক্য এবং সম্প্রীতির মেলবন্ধনে আবদ্ধ করেছে।

ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যের পাশাপাশি বহুভাষাবাদের প্রসারের লক্ষ্যেই এই দিনটির উদযাপন। ২০২১–এর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের থিম সমাজ ও শিক্ষার একাত্মকরণের জন্য বহুভাষাবাদের প্রসার। করোনা অতিমারির আবহে এবার ম্লান হতে চলেছে অমর একুশের উদযাপন। অন্যান্যবারের মত এবার জাঁকজমকভাবে প্রভাতফেরি হয়নি। সীমিত পরিসরে প্রভাতফেরি আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

নতুন করে যাতে ঢাকায় করোনা সংক্রমণ বেড়ে না যায় সেই জন্য মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সমস্ত অনুষ্ঠানে কাটছাঁট করা হয়েছে।

প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে একে একে আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামান, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র, যুব, শ্রমিক, কৃষক সংগঠনের নেতা-কর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ। ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় শহীদ মিনারের বেদি।

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়।
ছবি: সংগৃহীত

একুশের প্রথম প্রহরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ভাষাশহীদদের শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। 

মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সালাউদ্দিন ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ফুল দেন।

শূন্য রেখায় মিললো দু’ই বাংলা:

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভারত-বাংলাদেশ পেট্রাপোল সীমান্তে বসেছিল দুই বাংলার বাংলাভাষী মানুষের মিলনমেলা।

যশোরের বেনাপোল আর এ পারের পেট্রাপোলের মাঝে সীমান্তের শূন্যরেখা রবিবার একুশের সকাল থেকে মুখর ছিল গান, আবৃত্তি, নাচ আর দুই বাংলার কবি-সাহিত্যিক-শিল্পী-রাজনীতিবিদদের পদচারণায়।

কড়া নিরাপত্তার মধ্যেও ভাষার টানে কয়েক ঘণ্টার জন্য উধাও হয়ে যায় সীমান্তের কাঁটাতার। দুই বাংলার মানুষ মেতে উঠে আড্ডা আর স্মৃতিচারণে।

বনগাঁ পুরসভার পুরপ্রশাসক শঙ্কর আঢ্য জানান , ‘ভারত-বাংলাদেশ গঙ্গা-পদ্মা ভাষা ও মৈত্রী সমিতি’র উদ্যোগে ২০০২ সালে ভাষা শহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে দুই দেশের প্রায় ২০টি সংগঠনের অংশগ্রহণে এই মিলন মেলার সূচনা হয়।  গত ১৯ বছরে এ আয়োজনের পরিধি আরও বেড়েছে।বনগাঁর কিছু সাংস্কৃতিক কর্মী ‘একুশে উদযাপন কমিটি’ গড়ে সীমান্তের শূন্য রেখায় একসঙ্গে মাতৃভাষা দিবস পালন শুরু করেন। সেই থেকে প্রতি বছরই এ দিনে খুলে যায় সীমান্তের ফটক, দুই বাংলার মিলনমেলা বসে।

সকালে অনুষ্ঠান শুরুর আগেই নিজ নিজ ভূ-খণ্ডে অপেক্ষায় ছিলেন আয়োজকরা। তারপর সীমানা পেরিয়ে শূন্যরেখায় পা রাখেন দুই’দেশের প্রতিনিধি দল ৷দুই বাংলার প্রতিনিধিরা নিজ নিজ সংগঠনের পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে স্মরণ করেন ১৯৫২ সালের ভাষা শহীদদের, যাদের আত্মত‌্যাগের স্মরণে পুরো বিশ্ব আজ একুশে ফেব্রুয়ারি পালন করেন মাতৃভাষার দিবস হিসেবে।

বিভূতিভূষণ বি,এড কলেজের কর্ণধার প্রদীপ দে ‘দেশের সময়’কে বলেন, “ভাষার টানে, বাঙালির নাড়ির টানে ভাষাদিবস পালন করতে এসেছি। একুশের গৌরবের উত্তরাধিকারী পৃথিবীর সব বাঙালি। এর ব্যাপ্তি শুধু ভাষার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, অনেক বিস্তৃত।”

পেট্রাপোল স্টাফ এন্ড ক্লিয়ারিং এজেন্ট এ্যাসোসিয়েশন-এর সম্পাদক কার্তিক চক্রবর্তী বলেন, বাঙালির অর্জনকে দুই বাংলা একসঙ্গে পালন করছি, এটা খুবই গর্বের বিষয়। দুই দেশের মৈত্রীতে এটা অনুপ্রেরণা যোগাবে।”তিনি আরও বলেন, “ভাষা আন্দোলন আমাদের অধিকারবোধের জম্ম দিয়েছিল। রক্তের বিনিময়ে সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, এ ঘটনা বিশ্বে বিরল।”

বনগাঁর নাওভাঙা সংস্থার সদস্য জয়দীপ রায়ের কথায়,ওরা আসবে চুপি চুপি
যারা এই দেশটাকে ভালবেসে দিয়ে গেছে প্রাণ…

Previous articleদেশের সময় ই পেপার Desher Samay ePaper
Next articleফোটো ফাইট:PHOTO FIGHT- EDITOR’S CHOICE

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here