দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একদিকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মন পেতে হবে। সামনে দাঁড়িয়ে দিতে হবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার রূপরেখা। মূলত সেটা করতেই আজ বৃহস্পতিবার বঙ্গসফরে আসছেন অমিত শাহ। তবে ঠাকুরনগরে মতুয়া সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে কোচবিহারেও কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। সেখানেও রাজবংশী ভোট পদ্মশিবিরে টানার অঙ্ক কষতে হবে তাঁকে। সেখানেও রয়েছে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চাপ।
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান ঠিক কী? আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সফরে তা স্পষ্ট ভাবে জানতে চায় মতুয়ারা।
আজ বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগরে সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘের সভায় যোগ দেওয়ার কথা অমিত শাহের। সে জন্য বাঁধা হয়েছে মঞ্চ। সেই প্রস্তুতি বুধবার খতিয়ে দেখেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। সঙ্গে ছিলেন বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মন্ডল।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের ব্যাখ্যা, সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের ‘গড়িমসি’র জেরে নাগরিকত্বের প্রশ্নে ‘ধীরগতি’ চলছে মতুয়া সম্প্রদায়ের মধ্যে। তাই শাহের-বার্তার অপেক্ষায় অধীর আগ্রহে রয়েছেন গোটা মতুয়া সমাজ। এ দিন শান্তনু জানান, ‘‘এর আগে কেউ সিএএ নিয়ে ভাবেননি। মতুয়ারা এই দাবি দীর্ঘ দিন ধরেই জানিয়ে আসছে। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর ভাষণে সিএএ নিয়ে তাঁদের অবস্থান আরও স্পষ্ট করে দেবেন।’’
উল্লেখ্য, দিল্লিতে বিস্ফোরণের কারণে ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারির বঙ্গসফর বাতিল হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিতের। তবে ৩১ তারিখের ‘খামতি’ পূরণ হয়ে গিয়েছিল চার্টার্ড বিমানে চাপিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিজেপি-তে যোগদান সম্পন্ন করিয়ে এবং ডুমুরজলার সভায় ‘ভার্চুয়ালি’ উপস্থিত থেকে। কিন্তু মতুয়াপাড়ার খামতি ‘ভার্চুয়ালি’ মেটানো সম্ভব নয়। তাই তাঁকে সেই দিনই ফোনে ‘আসছি’ বলে কথা দিতে হয়েছিল। বুধবার থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আসছেন ঠাকুরনগরে। কারও মাধ্যমে নয়, সকলেই অমিতের মুখ থেকে নাগরিকত্ব আইনের রূপরেখা নিয়ে নির্দিষ্ট আশ্বাস শুনতে চান।
পর্যবেক্ষকদের মতে। ঠিক এই জায়গাতেই ‘কামড়’ বসিয়েছে তৃণমূল।আজ বৃহস্পতিবার ঠাকুরনগর সফরকালে সিএএ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বার্তা দেওয়ার সম্ভাবনা। কিন্তু এমনটা বাস্তবে আদৌ ঘটবে কি না তা নিয়ে ঘোরতর সন্দেহপ্রকাশ করছে বনগাঁর তৃণমূল শিবির।
প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের মতে, ‘‘অমিত শাহ রাজনৈতিক সভা করতে আসছেন। উনি সিএএ নিয়ে কিছুই বলবেন না। কারণ উনি জানেন, এটা কখনই এভাবে করা সম্ভব নয় ।’’
মমতাবালার সুরে রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, ‘‘অমিত শাহ এনপিআর, এনআরসি এবং সিএএ নিয়ে কী বলেন আগে শুনি। মতুয়াদের দাবি মতো, নির্বাচনের আগে উনি কী করে এটা চালু করবেন জানি না। বিষয়টায় সম্পূর্ণ ভাবে ধোঁয়াশা রয়েছে। অমিত শাহের এই সফর মতুয়ারা কতটা গ্রহণ করবেন তা-ও জানি না। শান্তিপ্রিয় মতুয়াদের হয়তো উনি ভুল বুঝিয়ে চলে যেতে পারেন।’’
মতুয়া সম্প্রদায়ভুক্ত আশিস বিশ্বাস বলেন, অমিত শাহের উপরে মতুয়া সমাজ বড় আশা করে আছে সিএএ নিয়ে, আমাদের বিশ্বাস এবং ভালবাসাকে তিনি নিশ্চই মর্যাদা দেবেন, দেখি আজ কী বলেন।’’
গত ডিসেম্বরে শান্তিনিকেতন সফর ছিল অমিতের। বোলপুরে তিনি স্পষ্ট জানিয়েছিলেন, এখনও নাগরিকত্ব আইন পুরোপুরি হওয়া বাকি আছে। এখনই সিএএ নিয়ে ভাবছে না কেন্দ্রীয় সরকার। আপাতত করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই মূল লক্ষ্য। একবার টিকা দেওয়া শুরু হলে পরিস্থিতি সামলানো যাবে। তার পর সিএএ প্রয়োগ নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করবে কেন্দ্রীয় সরকার।
অমিতের এই বার্তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল মতুয়াদের মধ্যে। মুখ খুলেছিলেন শান্তনু ঠাকুর। পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে ‘গোসাকরে’ দলীয় কর্মসূচিও এড়াতে শুরু করেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ। ফের অমিতের ঠাকুরনগর সফরের খবরে ফের ‘চাঙ্গা’ হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু বিধি বাম। সে বারও একে বারে শেষলগ্নে অমিতের সফর বাতিল হয়। দিল্লিতে ইজরায়েলি দূতাবাসের সামনে বিস্ফোরণের কারণে বদলে যায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পশ্চিমবঙ্গ সফরের তারিখ। সেই সিদ্ধান্তে কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়ে রাজ্য বিজেপি-ও।
নাগরিকত্ব প্রশ্নে কেন্দ্রের অবস্থান জানতে ‘অস্থির’ হয়ে উঠেছিলেন শান্তনু। তার উপর অমিতের সফর বাতিল হওয়ায় ঠাকুরনগরে মতুয়াদের ভক্তিকেন্দ্রে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে নামতে হয় এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং বিজেপি-র সর্বভারতীয় সহসভাপতি মুকুল রায়কে। অমিত নিজেও শান্তনুকে ফোন করে জানান, খুব তাড়াতাড়িই ঠাকুরনগরে আসবেন।
সাময়িক ভাবে সেই পরিস্থিতির মোকাবিলা করা গেলেও তা যে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত নয়, সেই বার্তা বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে শান্তনু ভালরকম ভাবেই পৌঁছে দিতে পেরেছেন বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ। বিশেষ করে সম্প্রতি গোটা দেশেই করোনার মারণ প্রভাব এখন অনেক ক্ষীণ। পাশাপাশি, টিকাকরণের কাজও দ্রুতগতিতে চলছে। এই আবহে অমিত আজ বৃহস্পতিবার সিএএ নিয়ে কী বার্তা দেন সে দিকে গোটা মতুয়া সমাজ তো বটেই, অসম, ত্রিপুরার নাগরিকরাও আগ্রহভরে তাকিয়ে।
সিএএ নিয়ে আশ্বাসের পাশাপাশি রাজ্যে বিধানসভা ভোটের প্রাক্মুহূর্তে নতুন একটি দাবি ভাসিয়ে দিয়েছেন শান্তনু। রাজ্যের ৮০টি আসনে মতুয়া ভোট ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁর মত। তাই ওই সব আসনে মতুয়া সম্প্রয়াদের মধ্যে থেকে প্রার্থী বাছাই করার দিকে জোর দিয়েছেন তিনি। সারা ভারত মতুয়া মহাসঙ্ঘ এমনটা চায় বলেও জানিয়েছেন বনগাঁর সাংসদ।
শান্তনুর প্রার্থী বাছাই নিয়ে দাবির সুর পৌঁছেছে রাজ্য নেতৃত্বের কাছেও। এ নিয়ে বনগাঁর বিজেপি নেতা দেবদাস মণ্ডল জানান, ‘‘কত জন মতুয়া ভোটে প্রার্থী হবেন তা নিয়ে দল সিদ্ধান্ত নেবে।’’ তবে শান্তনুর ওই কৌশল কতটা কার্যকর হবে তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল। বনগাঁর প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠের মতে, ‘‘যিনি বাড়ির পাশের লোককে চেনেন না, তিনি ৮০টি বিধানসভা আসনে নির্বাচনে জেতার স্বপ্ন দেখেন কী করে? উনি নামেই সাংসদ। ওঁর কোনও কার্যকলাপ নেই। সেই কারণে ওঁর নাম বনগাঁর মানুষ ভুলে গিয়েছেন।’’ মতুয়ারা তৃণমূলের পক্ষেই রয়েছেন বলে দাবি করেছেন গোপাল।
উত্তরবঙ্গ থেকে মতুয়াগড়, হাইভোল্টেজ সফরের আগে বাংলায় ট্যুইট শাহের:
বাংলায় ট্যুইট করলেন শাহ। বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি লিখেছেন, আমি উৎসুক,বাংলায় উপস্থিত হওয়ার জন্য।
আমি উৎসুক,আগামীকাল বাংলায় উপস্থিত হওয়ার জন্য।
— Amit Shah (@AmitShah) February 10, 2021
কোচবিহার থেকে @BJP4Bengal #PoribortonYatra 'র চতুর্থ পর্যায় সূচিত হবে এবং ঠাকুরনগরে জনসভা অনুষ্ঠিত হবে।
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আমি আমাদের সোশ্যাল মিডিয়ার স্বেচ্ছাসেবীদের সাথেও আলাপচারিতায় অংশগ্রহণ করব। https://t.co/kMOgXqEOHU