দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। ভোটের ফলাফল প্রকাশ হয়ে যাওয়ার পরেও হিংসা চলছিল মার্কিন মুলুকে। গত ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হলে ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থকদের তাণ্ডবে স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছিল সারা দুনিয়া। শেষপর্যন্ত ভারতীয় সময় বুধবার বেশি রাতে ৪৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিলেন ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন।
শপথ নিয়েই সমগ্র মার্কিনীদের উদ্দেশে বিভেদ, হিংসা ভুলে ঐক্য গড়ে তোলার বার্তা দিতে চাইলেন নয়া প্রেসিডেন্ট। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, গত চার বছরে ট্রাম্প জমানায় আমেরিকা সম্পর্কে সারা বিশ্বের যে ধারণা তৈরি হয়েছে তা থেকে বের করে আনাই তাঁর লক্ষ্য।
এদিন বাইডেন বলেন, “আমরা সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে একটা সুন্দর আমেরিকার গল্প লিখব। যেখানে কোনও বিভেদ, ভয় থাকবে না, থাকবে একতা। যে আমেরিকার গল্পে কোনও অন্ধকার থাকবে না, থাকবে আলো।”
বাইডেনকে শপথ পাঠ করান প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস। হোয়াইট হাউসের ওয়েস্ট ফ্রন্টে শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মিনেসোটা থেকে নির্বাচিত সেনেটর এমি ক্লোবুচার প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে আনুষ্ঠানিক ভাবে স্বাগত জানান। তিনি বলেন, ‘এবার যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উঠে দাঁড়ানোর সময়। সব গ্লানি মুছে সব সময়ের মতো যুক্তরাষ্ট্রের এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়ার দিন আজ।’
Now the real work begins, folks. Follow along at @POTUS as we build back better. pic.twitter.com/fHViqSqwp2
— Joe Biden (@JoeBiden) January 20, 2021
For the people—always. pic.twitter.com/KW0TS1cnUq
— Kamala Harris (@KamalaHarris) January 20, 2021
প্রথা অনুযায়ী মার্কিন মুলুকের প্রধান বিচারপতি জন রবার্টস ক্যাপিটল হিলের ওয়েস্ট ফ্রন্টের সামনে শপথবাক্য পাঠ করান জো বাইডেনকে। ভারতীয় সময় রাত ১০টা ১৮ মিনিট নাগাদ শপথ নেন বাইডেন। পত্নী জিল বাইডেনকে সর্বদা তাঁর পাশে থাকার জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। একইসঙ্গে তিনি জানান ৪৯তম ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে এই প্রথম কোনও মহিলা শপথ নিলেন, যা আরেকটি ইতিহাসের সূচনা করল। প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করা কালো চামড়ার প্রার্থী শেরলি চিসহোলমের প্রতি সম্মান জানিয়ে এদিন নীল রংয়ের ড্রেস পরে শপথ নিলেন ভারতীয় বংশোদভূত কমলা হ্যারিস। যিনি ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠানের অন্যতম মূল আকর্ষণ। শপথ শেষেই হ্যারিস টুইট করে বলেন, ‘আমি প্রস্তুত’।
ট্রাম্প জমানায় জাতিগত ও বর্ণগত মেরুকরণ তীব্রতর হয়েছিল আমেরিকায়। কৃষ্ণাঙ্গদের মানবাধিকার ও সামাজিক অধিকার আক্রান্ত, রক্তাক্ত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বারবার। বহু দেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। পরিস্থিতি যখন এমনই তখন শপথ নিয়ে বাইডেন জানিয়ে দিলেন, তিনি কোনও বিশেষ সম্প্রদায় বা বর্ণের নন, সমগ্র আমেরিকাবাসীর রাষ্ট্রপতি।
অনেকের মতে, ডোনাল্ড ট্রাম্প জমানায় কৃষ্ণাঙ্গ-সহ অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণি যে ভয় নিয়ে জীবনযাপন করছিলেন তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং ভরসা আদায় করতেই এই বক্তব্য রেখেছেন বাইডেন।
ঐক্যের বার্তার পাশাপাশি বাইডেন শপথ নিয়েই কড়া ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন, আমেরিকার অভ্যন্তরে যে উগ্রবাদ মাথা তুলতে চাইছে, ঘরোয়া হিংসা লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেবে নতুন প্রশাসন। এই নৈরাজ্যবাদী শক্তিকে পরাজিত করবেই।
সবচেয়ে বয়স্ক হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে শপথ নিলেন বাইডেন। ৭৮ বছর বয়সে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন তিনি। দ্বিতীয় রোমান ক্যাথলিক হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হলেন বাইডেন। ৩৫ শব্দের শপথবাক্য পাঠ করে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি এই নেতা। কেঁদে ফেলেন তিনি।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস প্রথম মহিলা হিসেবে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, কমলাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে লড়াই করানোর উদ্দেশ্যই ছিল কৃষ্ণাঙ্গদের ভরসা আদায় করা। ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার্সের তপ্ত চাটুতে কৃষ্ণাঙ্গদের সমর্থন ঢেলে পড়েছে বাইডেনের দিকে। শপথ নেওয়ার পর তাই বাইডেনের বার্তা, নীল হোক বা কালো, গোঁড়া হোক বা উদার– নতুন মার্কিন প্রশাসন প্রতিটি নাগরিকের জন্য চলবে।
এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সস্ত্রীক প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, বিল এবং হিলারি ক্লিনটন। ছিলেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সান্ধু। নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট এবং ভাইস প্রেসিডেন্টকে শুভেচ্ছা জানান প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
My warmest congratulations to @JoeBiden on his assumption of office as President of the United States of America. I look forward to working with him to strengthen India-US strategic partnership.
— Narendra Modi (@narendramodi) January 20, 2021
একদিকে, যখন হোয়াইট হাউসে পদার্পণ করতে চলেছেন নতুন প্রেসিডেন্ট, অন্যদিকে তখন সাম্রাজ্য হারিয়ে ফ্লোরিডায় নতুন আস্তানায় পৌঁছলেন জোনাল্ড ট্রাম্প। এদিকে, উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না। বোমা আতঙ্কের গুজব ছড়িয়ে পড়ায় রাতারাতি খালি করা হয় আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট চত্বর।