বেলডাঙায় বিসর্জনে মৃত ৫ জনের পরিবারকে ২ লক্ষ করে সাহায্যের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর

0
846

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দশমীতে বেলডাঙার হাজরাবাড়ির দুর্গা প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকা ডুবে মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনের। সোমবার বিকেলে স্থানীয় ডুমনিদহ বিলে এই ঘটনায় বেশিরভাগ মানুষ সাঁতরে পারে পৌঁছলেও পাঁচ জন আর উঠতে পারেননি। প্রায় ঘণ্টা তিনেক পর স্থানীয় যুবকরা তল্লাশি চালিয়ে চার জনের দেহ উদ্ধার করে। পরে জাল ফেলে আরও এক জনের দেহ উদ্ধার হয়। বেলডাঙা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও তাঁদের আর বাঁচানো যায়নি। আর এই ঘটনাতেই এবার মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।

বুধবার রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতরের তরফে ট্যুইট করে লেখা হয়, ‘মুর্শিদাবাদের বেলডাঙ্গা ১ ব্লকে দুর্গাপুজোর বিসর্জনে নৌকাডুবির ফলে যে পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের পরিবার পিছু ২ লক্ষ টাকা দিচ্ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এক লপ্তেই সেই টাকা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

দুর্ঘটনার পর মঙ্গলবার মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে ময়না তদন্তের পর পরিবারের হাতে দেহগুলি তুলে দেওয়া হয়। মৃতরা হলেন সুখেন্দু দে (২১), পিনকন ওরফে রোহন পাল(২৩), অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায় (২০), সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় (২২) ও নিপুন হাজরা(৩৭)। ওই ঘাটে ঠাকুর বিসর্জন হলেও পুলিশ, প্রশাসন বা পুরসভার তরফে আলো বা ডুবুরির কোনও ব্যবস্থা ছিল না বলে অভিযোগ।

এ ধরনের দুর্ঘটনার খবর তাদের জানা ছিল না বলে সাফাই দিয়েছেন বেলডাঙা পুরসভার প্রশাসক ভরত ঝাওর। তিনি বলেন, ‘আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উদ্ধারকার্য শুরু করি। লাইটেরও ব্যবস্থা করা হয়।’ এ দিন সকালে হাজরাপাড়ায় এলাকায় ছিল শোকের ছায়া। একই পাড়ার পাঁচ জনের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না গ্রামবাসীরা। জেলার পুলিশ সুপার কে শাবেরী রাজকুমার বলেন, ‘পুজোর দিনে এই দুর্ঘটনা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।’ পুলিশ ও ডুবুরিরা ব্যবস্থা ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। সোমবার বিকেলে একই নৌকায় চেপে ছেলে সোমনাথকে সঙ্গে নিয়ে ঠাকুর বিসর্জন দিতে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ বন্দোপাধ্যায়। বাবা কোনও ভাবে বেঁচে ফিরলেও ছেলে বিলের জলে তলিয়ে যায়। রবীন্দ্রনাথ বলেন, ‘আমাকে ডুবতে দেখে অন্য একটি নৌকার লোকজন তুলে নেয়। ছেলে যে উঠতে পারেনি তা বুঝতে পারিনি। একসঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়ে ছেলে আর ফিরল না, বাবা হয়ে এটা আর সহ্য করতে পারছি না।

প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন হাজরাবাড়ির দুর্গাপুজো। ঐতিহ্য মেনে হাজরাবাড়ির প্রতিমা মন্দির থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার দূরে ডুমনিদহ বিলে বিসর্জনের পর অন্য মণ্ডপের প্রতিমা বিসর্জন হয়। সোমবার দুটি নৌকাকে বাঁশ দিয়ে বেঁধে দুর্গাপ্রতিমাকে তোলা হয়েছিল নৌকার উপর। বিলের একদিকে বেশি জল না থাকলেও অন্যদিকে, যেখানে ডুমনি মায়ের মন্দির রয়েছে, সেখানে ডুবন্ত জল। সেই জায়গায় যাওয়ার পর বাঁশের কাঠামো খুলতেই প্রতিমা একটি নৌকায় ঝুঁকে পড়লে সেটি কাত হয়ে জলে তলিয়ে যায়। পরে অন্যটিও ডুবে যায়। ভয়ে নৌকা থেকে জলে ঝাঁপ দেন অনেকে। এরপর সাঁতরে বেশিরভাগ মানুষ পারে ওঠেন। দুটি নৌকার মাঝে পড়ে যান ওই পাঁচ জন। এলাকার যুবকরা জলের মধ্যে তল্লাশি চালিয়ে চারটি মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে জাল দিয়ে আরও একটি মৃতদেহ উদ্ধার হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, ‘নৌকা দুটিতে প্রায় ৫০-৫২ জন জোর করে উঠে পড়ে। নৌকার মাঝি আত্মারাম হালদার বলেন, ‘১০ জনের বেশি নেব না বলার পরেও নৌকা ভর্তি লোক উঠে যায়।’ প্রত্যক্ষদর্শী সুস্মিতা দাস বলেন, ‘নৌকা ডুবে যাওয়ার পর সকলেই পারে উঠেছেন এমন ভাবা হলেও পরে নিখোঁজের খবর জানার পর তল্লাশি শুরু হয়। ততক্ষণে অবশ্য দু’ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। অনেকটা দেরি হওয়ায় এই মৃত্যু।

Previous articleআগামী মাসেই আম্বালায় আসছে আরও তিনটি রাফাল, এপ্রিলে হাসিমারায়
Next articleগাইঘাটায় স্বামীকে খুন করে প্রেমিকের ঘরে খাটের নিচে পুঁতল স্ত্রী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here