১৬ হাজার ফুট উচ্চতায় উড়ল ভারতের ‘যোদ্ধা’ ড্রোন, মোতায়েন হবে লাদাখ সীমান্তে

0
937

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারতের যোদ্ধা ড্রোন রুস্তমের পরীক্ষামূলক উড়ান সফল হল। গত বছর যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে উড়ানের কিছু সময় পরেই ভেঙে পড়ে এই আনম্যান্ড এরিয়াল ভেহিকল। এ বছর কর্নাটকের চিত্রদূর্গ জেলায় প্রায় ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি উড়ে নজির গড়েছে আধুনিক প্রজন্মের রুস্তম।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলেন ‘দ্য ওয়ারিয়র’। পোশাকি নাম রুস্তম। ‘মিডিয়াম অল্টিটিউট আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকল’ (ইউএভি) রুস্তমের উন্নত ভ্যারিয়ান্ট হল রুস্তম-২। তৈরি করেছে ভারতের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও)। লাদাখ সীমান্ত সংঘাতের আবহে ইজরায়েল থেকে কেনা হেরন টিপি সশস্ত্র ড্রোন ভারতীয় বাহিনীর বড় হাতিয়ার।

প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হেরনের থেকেও প্রযুক্তিতে উন্নত রুস্তমের এই নয়া ভ্যারিয়ান্ট। লাদাখে ভারতীয় বাহিনীর বড় অস্ত্র হতে পারে এই ড্রোন। চিত্রদুর্গে পরীক্ষামূলক উড়ানে সাফল্যের পরে পূর্ব লাদাখে মোতায়েন করা হতে পারে রুস্তমকে।

২৬ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি উড়ানের ক্ষমতা রাখে রুস্তম

পরীক্ষামূলক উড়ানে ১৬ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি ডানা মেলেছে রুস্তম-২। ডিআরডিও জানাচ্ছে, এই ড্রোনের প্রোটোটাইপ এমনভাবে তৈরি যে ২৬ হাজার ফুট উচ্চতা অবধি ওড়ার ক্ষমতা আছে এই আনম্যানড এরিয়াল ভেহিকলের। ১৮ ঘণ্টার বেশি উড়তে পারে এই ড্রোন।

১৯৮০ সালে অধ্যাপক রুস্তম ডামানিয়ার নেতৃত্বে এই ড্রোনের প্রোটোটাইপ তৈরি করে লাইট কানার্ড রিসার্চ এয়ারক্রাফ্ট। পরে এর ইঞ্জিন ও অন্যান্য প্রযুক্তিতে বদল ঘটায় ডিআরডিও। ইজরায়েলি হেরন ড্রোনের থেকেও আধুনিক ও উন্নতমানের রুস্তম-২, এমনটাই দাবি প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের।

ন্যাশনাল অ্যারোস্পেস ল্যাবরেটরির লাইট কানার্ড রিসার্চ এয়ারক্রাফ্ট বানিয়েছিল রুস্তম-১। রুস্তম-২ হল এর পরবর্তী প্রজন্ম। অধ্যাপক রুস্তম ডামানিয়ার নামেই এই ড্রোনের নাম রাখে ডিআরডিও। রুস্তম-১ ড্রোনের ওজন ছিল ৭২০ কিলোগ্রাম। দুই ডানার বিস্তার ২৬ ফুট। এর পরের ভ্যারিয়ান্ট রুস্তম-এইচ মিডিয়াম অল্টিটিউড লং-এন্ডুর‍্যান্স। দুই ইঞ্জিনের চালকহীন বিমান যা নজরদারি তো বটেই যুদ্ধস্ত্রও বয়ে নিয়ে যেতে পারে। সাড়ে তিনশো কেডি পে-লোড বইতে পারে রুস্তমের এই ভ্যারিয়ান্ট। রুস্তম-এইচের মডেলের উপর ভিত্তি করেই রুস্তম-২ ভ্যারিয়ান্ট তৈরি করেছে ডিআরডিও।

এই ড্রোনে রয়েছে ডিজিটাল ফ্লাইট কন্ট্রোল এবং নেভিগেশন সিস্টেম। উড়ান এবং অবতরণের প্রক্রিয়া স্বয়ংক্রিয়। ডিজিটাল কমিউনিকেশন সিস্টেম এর রুস্তম ড্রোনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূর থেকে শত্রুঘাঁটিতে নজর রাখতে পারে এই ড্রোন। বিভিন্ন রকমের ক্যামেরা ফিট করা আছে রুস্তম ড্রোনে। এর রেডার সিস্টেমও উন্নত। প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিন্থেটিক অ্যাপারচার রেডার, ইলেকট্রনিক্স ইনটেলিজেন্স সিস্টেম এবং সিচুয়েশনাল অ্যাওয়ারনেস সিস্টেম রয়েছে রুস্তম-২ ভ্যারিয়ান্টে। ভারতীয় সেনা, বায়ুসেনা ও নৌবাহিনীর ভরসার অস্ত্র হতে পারে রুস্তম৷

লাদখে এখন মোতায়েন রয়েছে ইজরায়েলের থেকে কেনা সশস্ত্র হেরন টিপি ড্রোন। ১৪ মিটার দৈর্ঘ্যের এই ড্রোন হাই-উইং ক্যান্টিলিভার মোনোপ্লেনের ডিজাইনে তৈরি। এর দুটো ডানার বিস্তৃতি প্রায় ২৬ মিটারের কাছাকাছি। হাজার কিলোগ্রামের বেশি ওজন বইতে পারে এই ড্রোন। এতে রয়েছে ইলেকট্রো-অপটিক্যাল টার্গেট সিস্টেম। রাতের বেলাতেও কাজ করতে পারে এই ড্রোন। এর বিশেষ ক্যামেরা যে কোনও আবহাওয়ার পরিস্থিতিতে যে কোনও সময় শত্রু ঘাঁটির ছবি তুলে আনতে পারে।

ডিআরডিও জানিয়েছে, হেরন ড্রোনের প্রযুক্তিতে আপগ্রেড করলে সেটি স্যাটেলাইট কমিউনিকেশনেও সাহায্য করবে। শীতের সময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর মধ্যে খবরপ্রদানের কাজেও লাগানো যাবে এই ড্রোনকে।  ইতিমধ্যেই হেরন ড্রোনের উন্নত সংস্করণের কাজে নেমে পড়েছে ডিআরডিও। পাশাপাশি, সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বাহিনীর শক্তি বাড়াতে কম পাল্লার ট্র্যাকটিকাল ড্রোন ও অ্যান্টি-ড্রোন সিস্টেমও তৈরি করছে ডিআরডিও।

Previous articleপ্রতিবেশীর কটূক্তিতে গৃহবধূর আত্মহত্যার অভিযোগ গাইঘাটায়
Next articleনারীদের নির্যাতনের ঘটনায় কড়া পদক্ষেপ, সব রাজ্যকে নির্দেশিকা কেন্দ্রের

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here