দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সমস্ত রাজ্য সরকারি কর্মচারীকে ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিল স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুনাল তথা স্যাট। স্যাটের পূর্ববর্তী নির্দেশ রাজ্য না মানায় আদালত অবমাননার মামলা করেছিল সরকারি কর্মচারী সংগঠন।
অনেক আগেই রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল (স্যাট) রাজ্য সরকারি কর্মীদের যাবতীয় বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশে বলা হয়েছিল, ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার আগেই ২০০৬ সাল থেকে বকেয়া যাবতীয় পাওনা সরকারি কর্মীদের মিটিয়ে দিতে হবে।
২০১৯ সালের ২৬ জুলাই রাজ্য সরকারকে স্যাট নির্দেশ দিয়েছিল, পরবর্তী ছ’মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ডিএ দিতে হবে। রাজ্য সরকার তা না-দেওয়ায় সরকারি কর্মীদের সংগঠন স্যাটে আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করে। রাজ্য পুনরায় স্যাটে রিভিউ পিটিশন দায়ের করে। গত ৩ মার্চ রিভিউ পিটিশনের শুনানি শেষ হয়। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই নির্দেশ পুরোপুরি মানেনি। রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করে স্যাটে।
জুলাই মাসের ৮ তারিখে স্যাট রাজ্য সরকারের আবেদন খারিজ করে দেয় জানিয়ে দিল রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতেই হবে। এখন করোনা পরিস্থিতির জন্য ডিএ দেওয়া সমস্যা বলে রাজ্যের পক্ষে জানানো হলে স্যাট বলে এনিয়ে ভাবনাচিন্তা করে দেখা হবে।
ষষ্ঠ বেতন কমিশন চালু হলেও বকেয়া ডিএ দেওয়া হবে না বলে যে ঘোষণা রাজ্যের পক্ষে করা হয়েছিল তার পরে এই রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের উপরে নিঃসন্দেহে বড় চাপ তৈরি করেছিল। করোনা পরিস্থিতির জন্য আগামী দেড় বছর কেন্দ্র কর্মীদের মহার্ঘ ভাতা বাড়াবে না বলে জানিয়েছে।
তবে গত ১ জানুয়ারিতেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ৪ শতাংশ ডিএ ঘোষণা হয়েছিল। কেন্দ্রের ওই ডিএ বৃদ্ধির ফলে রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা ২১ শতাংশে পৌঁছয় বলে দাবি বিভিন্ন কর্মচারী সংগঠনের।
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার দাবি তুলে স্যাটে মামলা করেছিল কংগ্রেস সমর্থিত ‘কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্মেন্ট এমপ্লয়িজ়’ ছাড়াও আরও দু’টি সরকারি কর্মীদের সংগঠন। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে স্যাট যে রায় দিয়েছিল তাতে বলা হয়, ডিএ দেওয়া বা না -দেওয়া রাজ্যের ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে। স্যাটের সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় সরকারি কর্মচারিদের সংগঠন।
এর পরে ২০১৮ সালের ৩১ অগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাশিস করগুপ্ত ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রায়ে বলে, ডিএ সরকারি কর্মীদের অধিকার। একই সঙ্গে মামলাটি পুনরায় স্যাটে ফিরিয়ে দিয়ে ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, ডিএ কীভাবে ও কী হারে দেওয়া হবে, তা বিচার করে স্যাট তিন মাসের মধ্যে জানাবে।
এর পরেই রাজ্য সরকার ওই রায় পুনর্বিবেচনা করে দেখার জন্য একটি রিভিউ পিটিশন দাখিল করে ডিভিশন বেঞ্চে। গত বছরের ৭ মার্চ হাইকোর্টের বিচারপতি হরিশ টন্ডন ও বিচারপতি শেখর ববি শরাফের ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের দায়ের করা রিভিউ পিটিশন খারিজ করে দেয়। জুলাইয়ে রায় ঘোষণার পরেও ডিয়ে মেটানোর সিদ্ধান্ত হয়নি।
কিন্তু এই মামলায় বারবারই হারতে হয়েছে রাজ্য সরকারকে। ফের একবার স্যাট জানিয়ে দিল, রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের বকেয়া ডিএ দিতে হবে।