আশ্বিনের শারদ প্রাতে
বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জরি,
ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা,
প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত
জ্যোতির্ময়ী জগৎমাতার আগমন বার্তা…
স্নিগ্ধা বন্দ্যোপাধ্যায়: পুজো এবার অপেক্ষার। মহালয়া থেকে ৩৫ দিন পরে।অর্থাৎ হাতে গোনা চল্লিশ দিন।মহালয়ার সকাল হলেই মনে হয় মা’ এসে গেছেন, পুজো এসে যায়। কিন্তু এবার মনে মনে এলেও সত্যি সত্যি আসবে না। অপেক্ষা করতে হবে আরও এক মাসেরও বেশি সময়। জগৎমাতার আগমন বার্তা পেতে অনেকটাই অপেক্ষা করতে হবে এবার।দেবীপক্ষ শুরু হবে ১৭ অক্টোবর। ৩০ আশ্বিন, শনিবার। আর দেবীর বোধন, ২২ অক্টোবর ষষ্ঠী তিথিতে।
দেবীপক্ষ দেরিতে হলেও আমবাঙালি করোনা পরিস্থিতিকে উপেক্ষা করে মনে মনে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছেন করোনা সংক্রমণকে রুখে দিয়ে সমস্ত দুঃখ ভুলে ,ক্ষতি কাটিয়ে ফের আবার চেনা ছন্দে ফিরবে৷
হাতে আর মাত্র মহালয়া থেকে ৩৫ দিন৷ তারপরেই শুরু হয়ে যাবে বাঙালির সেরা উৎসব৷ পুজোর চারটে দিন কে কী পরবেন, কীভাবে নিজেকে অনন্য করে তুলবেন মনের মানুষের কাছে তা নিয়ে চলছে হাজারও জল্পনা ৷ কোন কম্বিনেশনে তাক লাগানো যাবে তা নিয়ে ভাবনার শেষ নেই ছেলেমেয়েদের ৷ যাঁরা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেননি পুজোর সেরা কম্বিনেশন বা সেরা সাজ তাঁদের জন্য রইল দেশের সময় এর ফ্যাশন ডিজাইনার পিয়ারী নন্দীর বিশেষ টিপস৷ সালওয়ার থেকে পলাজ়ো, কুর্তি থেকে লং স্কার্ট বা চিরন্তনী শাড়ি, সাথে “দুর্গামাস্ক” কোনটা আপনার জন্য উপযুক্ত সেটাই জানাচ্ছেন দেশের সময় এর ফ্যাশন ডিজাইনার ৷
তার মতে গত পাঁচ -ছয় মাসে আমজনতা অভ্যস্থ হয়েছে এক নতুন অভ্যাসে। তা হল মুখে মাস্ক পরা। পোশাকের সঙ্গে মাস্কও অঙ্গ হয়ে উঠেছে করোনা বিধ্বস্ত জীবনযাত্রায়। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সব দেশে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হয়েছে। তাই বাংলা ও বাঙালির জন্য তিনি এবার পুজোয় নতুন ফ্যাশন হিসাবে নিয়ে এসেছেন “দুর্গা মাস্ক” ।
উল্লেখ্য,২০১৬ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসে একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, একজন মানুষ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ২৩ বার হাত দিয়ে মুখ স্পর্শ করেন। তাই করোনা সংক্রমণ রোধে নিয়মিত হাতধোয়া এবং মুখে মাস্ক পরার উপর এত জোর দেওয়া। যদিও অনেক বিশেষজ্ঞের দাবি, মাস্ক ব্যবহার করা উপকারী, কিন্তু বাস্তবে হাসপাতালের পরিবেশের বাইরে মাস্ক ব্যবহারের ব্যাপক উপকার পাওয়ার নজির খুব কমই। তাছাড়া, মাস্ক পরলেই হবে না, সেটা থেকে উপকার পেতে হলে জানতে হবে ব্যবহারের সঠিক পদ্ধতি। কোন ধরনের মাস্ক পরলে উপকার পাওয়া যাবে ইত্যাদি। তাছাড়া নির্দিষ্ট সময় অন্তর মাস্ক বদলাতে হয়। এবং এগুলো যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, এক্ষেত্রেও WHO Guideline মেনে চলা উচিত।
করোনা সংক্রমণ রুখতে মাস্ক ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশের পরই দেশজুড়ে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছে। কেউ N95 মাস্ক কিনছেন। কেউ আবার সার্জিক্যাল মাস্কেই কাজ চালাচ্ছেন। কিন্তু জানেন কি N95 এবং সার্জিকাল মাস্কের জোগান তুলনায় কম আর সেই সব মাস্ক স্বাস্থ্যকর্মীদের দরকার, সাধারণ নাগরিকের নয়। আমজনতার জন্য নিতান্ত কাপড়ের মাস্কই যথেষ্ট। তবে তা যেন থ্রি লেয়ার বিশিষ্ট হয়।
বনগাঁর নিভা টেলর্স এর কর্ণধার তপন চক্রবর্তী দেশের সময়কে’জানিয়েছেন ,থ্রি লেয়ার বিশিষ্ট বিভিন্ন ডিজাইনের “দুর্গামাস্ক” এবার তাঁদের প্রতিষ্ঠানে তৈরী করছেন তাঁরা , যার ডিজাইন করেছেন দেশের সময় এর ফ্যাশন ডিজাইনার পিয়ারী নন্দী। করোনা পরিস্থিতিতে দুর্গাপুজোর দিন গুলিতে সাধারন মানুষকে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য বিধি মানতে সাহায্য করবে আবার অন্যদিকে ফ্যাশনেও থাকবে নতুন চমকও৷ মাস্কের দামও হাতের নাগালেই থাকবে ৷তাই এবার পুজোয় সকলে ”দুর্গামাস্ক “ পড়ে ঠাকুর দর্শন করতে পারবেন বলে আশা করা যায়৷ তপন বাবু আরও জানিয়েছেন ইতি মধ্যেই অনেক বনেদি বাড়ী এবং স্থানীয় ক্লাব থেকে অর্ডার এসেছে এই “দুর্গামাস্ক” এর৷ তাই আমাদের আশা এবারের দুর্গাপুজো এই মাস্কে আরও সুরক্ষিত হোক৷
পুজো মানেই পোশাকের ফ্যাশন ৷ তাই ক্যালেন্ডারের পাতায় চোখ রাখার পাশাপাশি সাজগোজের পশরা নিয়ে চলে পুজোর ফ্যাশন ভাবনা ৷ এনিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফ্যাশন ডিজাইনার পিয়ারী বললেন, এবারের পুজোয় বাজিমাত করবে “দুর্গামাস্ক” সাথে হ্যান্ডলুম পোশাক ৷
তাঁর মতে, এবারের পুজোর ফ্যাশন ট্রেন্ড হ্যান্ডলুম ৷ যে কোনও রকমের হ্যান্ডলুম ড্রেস কেনার দিকে আগ্রহ বেশি ৷ ইন্ডিয়ান, ওয়েস্টার্ন, মেয়েদের শাড়ি এমনকী ছেলেদের কুর্তা সবকিছুতেই হ্যান্ডলুমের ছোঁয়া ৷ বাজারও ছেয়ে গেছে হ্যান্ডলুম ড্রেসে ৷
মেয়েদের পোশাকের মধ্যে হ্যান্ডলুমের শাড়ি সবচেয়ে বেশি চলছে ৷ এছাড়া ট্রাডিশনালের মধ্যে ইক্কত, পোচমপল্লির বিক্রি বেশি ৷ তবে জর্জেটের শাড়ি তুলনামূলকভাবে কম চলছে এবারের পুজোয় ৷
এছাড়া জাম্প শ্যুট, ইন্ডিয়ান টেক্সটাইলের গাউন, ক্রপ টপ, বিভিন্ন ধরনের পলাজ়ো – বেশি ঘের, কম ঘের, স্ট্রেট পলাজ়ো বেশ চলছে৷ সমান তালে পাল্লা দিয়ে চলছে কেপ ৷ তবে পুজোয় অনেকেই বাঙালি ঐতিহ্য বজায় রাখতে চাইলেও শর্ট ড্রেসের চাহিদা কিছু কম নেই ৷
পোশাকের রং – পোশাক তো কিনবেন, রং বাছবেন কীভাবে ? পিয়ারীর পরামর্শ যদি মেনে চলেন তাহলে ইন্টারন্যাশনাল ট্রেন্ডের সঙ্গে তাল মিলিয়ে গোলাপি ও লালের পাশাপাশি কমলা, টেরাকোটার মতো উজ্জ্বল রঙই পুজোয় মানানসই ৷ এবং প্রতিবারের মতো এবারেও এগুলোই চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি৷
মেক আপ – পোশাক তো কিনলেন অনেক ৷ তার সঙ্গে সাজ মানানসই না হলে কিন্তু সব মাটি হয়ে যাবে ৷ তাই এক্ষেত্রেও মেনে চলতে পারেন পিয়ারীর গাইডলাইন ৷ তাঁর মতে, পুজোর দিনগুলিতে সকালে দিকে হালকা মেক আপই ভালো ৷ এখন গরম রয়েছে তাই হালকা মেক আপের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চুলটা স্টাইল করে বেঁধে নিতে পারেন ৷ আর সন্ধেবেলার সাজ হবে ঠিক উলটো ৷ হেভি বা গ্ল্যামরাস মেক আপ ও সুন্দর হেয়ার স্টাইলেই মাত করে দিতে পারেন আপনি ৷
পুজোর সময় একটা দিন অন্তত ফ্যাশন সচেতন ছেলেদের পাঞ্জাবি, পাজামা পরার পরামর্শ দিয়েছে পিয়ারী ৷ সব শেষে কোনটা আপনার জন্য এবারের পৃজোর সবচেয়ে জরুরী তা আরও একবার জানাতে ভোলেন নি ফ্যাশন ডিজাইনার ,সেটা অবশ্যই মাস্ক৷ পুজো স্পেশাল “দুর্গামাস্ক” প্রতিটি মাস্কে থাকছে দুর্গা মায়ের বিভিন্ন রুপ আর রং যা আপনাদেরকে দেবে মনের শক্তি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা৷