দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ এক মাসের উপর দৈনিক সংক্রমণে বিশ্বে এক নম্বরে রয়েছে ভারত। দেশে দৈনিক সংক্রমণ এক লাখ ছুঁই ছুঁই। সেইসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও সংক্রমণের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি। কিন্তু তার মধ্যেই করোনাভাইরাস চলে গিয়েছে বলে দাবি করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। কিন্তু তা সত্ত্বেও শুধুমাত্র বিজেপিকে আটকানোর জন্য রাজ্যে লকডাউন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
করোনা এখন আর নেই। সব অতীত। সামনের বছর বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে বাংলায় বিজেপি–র সমাবেশ আটকানোর জন্যই লকডাউন করছেন মমতা। দাবি করলেন পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি প্রধান দিলীপ ঘোষ।
হুগলিতে একটি ভিড় জনসভায় দাঁড়িয়ে তিনি বললেন, ‘করোনা চলে গেছে। শুধু দিদি সমাবেশ বন্ধ রেখে লকডাউন করছেন, যাতে বিজেপি সভা না করতে পারে।
আমাদের কেউ আটকাতে পারবে না।’ দিলীপ ঘোষ যেদিন দাঁড়িয়ে এসব কথা বললেন, সেদিন ২৪ ঘণ্টায় বাংলায় করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩০০০ জনেরও বেশি। এমনকী কমিশনার অনুজ শর্মাও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৪১ জন। রাজ্যে মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১,৯৩,১৭৫। মৃত্যু ৩,৭৭১।
বৃহস্পতিবার বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডাও লকডাউন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে খোঁচা দিয়েছেন। বলেছেন, রাজ্যে তাঁর সব নীতি মুসলিম তোষণের জন্য। সেগুলো ‘হিন্দু–বিরোধী’ বলেও দাবি করেছেন তিনি। তাঁর কথায়, ‘যখন সারা দেশ ভূমিপুজো দেখছিল (অযোধ্যার রাম মন্দিরের), তখন, ৫ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন করে রাখা হল। যাতে স্থানীয় স্তরে মানুষ এই উৎসবে যোগ দিতে না পারেন।’
এখানেই থামেননি তিনি। বললেন, ‘উল্টোদিকে বকরি ইদের দিন লকডাউন তুলে নেওয়া হল। এর থেকেই বোঝা যায় রাজ্য সরকারের নীতিগুলো হিন্দু–বিরোধী, আসলে তোষণের রাজনীতি।’ নাড্ডার পর এবং লকডাউন নিয়ে ক্ষোভ দিলীপের। কারণ সেই ভোটই।
কেন্দ্রের তরফে আনলক চার পর্যায় শুরু হলেও রাজ্যে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট কিছু দিন লকডাউনের ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেপ্টেম্বর মাসের ৭, ১১ ও ১২ তারিখ লকডাউনের ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু ১৩ সেপ্টেম্বর নিট পরীক্ষা থাকায় ১২ সেপ্টেম্বরের লকডাউন বাতিল করেছে সরকার।
নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বারবার বলেছেন, সংক্রমণের চেন ভাঙার জন্যই এই লকডাউনের সিদ্ধান্ত। তার ফলও মিলেছে। রাজ্যে মাঝে একটা সময় আক্রান্তের থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যা বেশি হচ্ছিল। সুস্থতার হার বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮৬ শতাংশ।
তৃণমূল সরকারের এই যুক্তি মানতে নারাজ বিজেপি সভাপতি। এর আগেও বারবার তিনি রাজ্যের করোনা পরিস্থিতির জন্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ অমান্য করে নিজের মতো রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলেই রাজ্যে সংক্রমণ বেড়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। আবার রাজ্যে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কম হচ্ছে বলেও মমতা সরকারকে দুষেছেন তিনি। গত ৫ অগস্ট রামমন্দিরের ভূমিপুজোর দিন রাজ্যে লকডাউন ছিল। সেটাও মমতা সরকার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে করেছিল বলে অভিযোগ করেছিলেন দিলীপ। ফের একই ধরনের অভিযোগ শোনা গেল তাঁর মুখে।
এদিকে বৃহস্পতিবারই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশবাসীকে অনুরোধ করেছেন, করোনাকে হালকা ভাবে না নিতে। ভ্যাকসিন আবিষ্কার না হওয়া পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রকের নির্দেশিকা মেনে চলা, মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করেছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কথা থেকেই পরিষ্কার, দেশে এখনও সংক্রমণ রয়েছে। অথচ তার ঠিক উল্টো কথা শোনা গেল বাংলার বিজেপি সভাপতির মুখে।