দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারতে করোনার টিকা চলে এলে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে সবচেয়ে আগে দেওয়া হবে বাংলাদেশকেই। এমনটাই জানিয়েছেন বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। বাংলাদেশের অগ্রনী ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের সঙ্গে চুক্তি করেছে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রজেনেকার ভেক্টর ভ্যাকসিনের ফর্মুলায় ভারতে কোভিশিল্ড টিকা তৈরি করেছে সেরাম। দেশে এই টিকার দ্বিতীয় পর্বের ট্রায়াল চলছে। সেরাম কর্ণধার আদর পুনাওয়ালা এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, বন্ধু ও প্রতিবেশী দেশগুলিকে সবচেয়ে আগে করোনার টিকা সরবরাহ করবে ভারত। অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে বাংলাদেশকেই সবচেয়ে আগে টিকা দেওয়া হবে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের সঙ্গে চুক্তি হয়ে গেছে। এই চুক্তির ভিত্তিতে বাংলাদেশের কোম্পানি বাণিজ্যিকভাবে এই টিকা উৎপাদনও করতে পারবে। আদর বলেছেন, এই চুক্তি দুই দেশের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রকে আরও প্রসারিত করবে।
বাংলাদেশ সফরে গিয়ে সে দেশের বিদেশসচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন ভারতের বিদেশসচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা। করোনার টিকা তৈরির বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হয়েছিল বলে জানা গিয়েছে। শ্রিংলা জানিয়েছিলেন, করোনাকালে আর্থিক সঙ্কট ও অন্যান্য নানা বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ককে কীভাবে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়, সেই নিয়ে আলোচনা হয়েছিল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও এ বিষয়ে কথা হয় তাঁর। শ্রিংলা জানান, বিশ্বের ৬০ শতাংশ ভ্যাকসিনই তৈরি হয় ভারতে। তাই করোনার টিকা তৈরি হলে প্রতিবেশী দেশগুলিকে তা সরবরাহ করতে কোনও কার্পণ্য করবে না ভারত। কোভিড পরিস্থিতিতেও দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে।
বিশ্বের সম্ভাব্য কোভিড ভ্যাকসিনগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশা জাগিয়েছে ব্রিটেনের অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি ও অ্যাস্ট্রজেনেকার ভ্যাকসিন। অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন ভারতে তৈরি করেছে সেরাম। এই ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও চলছে। বছরের শেষেই টিকা নিয়ে আসতে পারে সেরাম। দেশের বাজারে করোনার টিকা চলে এলে বাংলাদেশকেই সবার আগে দেবে ভারত।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালের প্রিন্সিপাল শায়ন এফ রহমান জানিয়েছেন, ভারতের বিদেশসচিব শ্রিংলার সফরের দশ দিনের মাথায় টিকার চুক্তি হয় সেরামের সঙ্গে। ভারতের বাজারে কোভিশিল্ড টিকা চলে এলে সেটা পৌঁছে দেওয়া হবে বেক্সিমকোকেও। এই টিকা বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনও করতে পারবে তারা। সেই লাইসেন্সও দেওয়া হয়েছে।
করোনার টিকা নিয়ে ভারতের সঙ্গে চুক্তি এখন বাংলাদেশের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে দুই দেশে মালবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। বাণিজ্যিক দিকে যা দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বের এক নতুন পথ খুলে দিয়েছে। অন্যদিকে, ‘এয়ার বাবল’ তৈরি করে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল শুরু করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। প্রচুর বাংলাদেশী নাগরিক ভারতের হাসপাতালগুলিতে চিকিৎসার সুবিধা পান।
কিন্তু কোভিড মহামারীর কারণে আন্তর্জাতিক উড়ান বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এই যাতায়াত স্থগিত হয়ে গিয়েছিল। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ‘এয়ার বাবল’ চালু হলে বাংলাদেশের রোগীরা যেমন এই পরিষেবার সুবিধা নিতে পারবেন, তেমনি ভারত থেকেও বিভিন্ন ব্যবসায়ী বা উপদেষ্টারা নানারকম প্রকল্পের কাজে বাংলাদেশে আসতে পারবেন।
তাছাড়া, রোহিঙ্গা শরণার্থীর ব্যাপারেও ভারতের সাহায্য চেয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকা চায়, নিরাপত্তা পারিষদে অস্থায়ী সদস্যপদ পেয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানোর ব্যাপারটা পারিষদে তুলে ধরুক ভারত। শ্রিংলা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে যে অপ্রীতিকর বিষয়গুলো আছে সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে। করোনার টিকার চুক্তি পারস্পরিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারবে বলেই আশা।
ভারতে এখন মোট ১৭টি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে টিকার ট্রায়াল করছে সেরাম। যার মধ্যে রয়েছে, দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ (এইমস), পুণে বি জে মেডিক্যাল কলেজ, পাটনার রাজেন্দ্র মেমোরিয়াল রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল কলেজ, চণ্ডীগড়ের পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ, যোধপুর-এইমস, গোরক্ষপুরের নেহরু হাসপাতাল, বিশাখাপত্তনমের অন্ধ্র মেডিক্যাল কলেজ, মাইসোরের জেএসএস অ্যাকাডেমি অব হাইয়ার এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ।
পুণের ভারতী বিদ্যাপীঠ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে এখনও অবধি দু’জন স্বেচ্ছাসেবককে টিকা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী ১৬০০ জনকে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হবে। প্রথম যে দু’জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে তাঁদের বয়স ৩২ বছর ও ৪৮ বছর। দু’জনেই বেসরকারি সংস্থার কর্মী। টিকার ডোজ ০.৫ মিলিলিটার। ইন্ট্রামাস্কুলার অর্থাৎ পেশিতে টিকার ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। এখনও অবধি কোনও সাইড এফেক্টস এখনও দেখা যায়নি বলেই জানা গিয়েছে। সব ঠিক থাকলে চলতি বছরের শেষেই টিকা আনতে পারে সেরাম।