এক দেশ-এক ভোটের পথে কেন্দ্র? সাধারণ ভোটার তালিকা তৈরি করার লক্ষ্যে বৈঠক প্রধানমন্ত্রীর দফতরে

0
508

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ  এ যেন ‘যা কথা দিয়েছিলাম, তাই করে দেখাচ্ছি!’

বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহারে যা যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে অনেকগুলিই ইতিমধ্যে বাস্তবায়িত হয়ে গিয়েছে। তিন তালাক তুলে দেওয়া, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পর রামমন্দিরের ভূমিপুজোও হয়ে গিয়েছে গত ৫ অগস্ট। এবার কি তবে এক দেশ এক ভোটের পথে হাঁটতে চলেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদী সরকার?

গত ১৩ অগস্ট প্রধানমন্ত্রীর দফতরে একটি উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে বলে খবর মিলেছে। সেই বৈঠকে সারা দেশের জন্য একটি অভিন্ন ভোটার তালিকা  প্রস্তুত করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ, যে রাজ্যগুলিতে স্থানীয় স্তরের ভোটে আলাদা ভোটার লিস্ট অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া কার্যকর হয় আর তা থাকবে না।

দেশের সংবিধান অনুযায়ী ভোট পরিচালনার জন্য দু’টি সংস্থা রয়েছে। এক, লোকসভা ও বিধানসভা ভোট পরিচালিত হয় জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে। আর দুই, রাজ্যে রাজ্যে পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোট করায় রাজ্য নির্বাচন কমিশন। দেশের বেশির ভাগ রাজ্যে একটি ভোটার তালিকাই ব্যবহার করা হয়। 

তবে ব্যতিক্রম উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, উত্তরাখণ্ড, অসম, মধ্যপ্রদেশ, কেরল, অরুণাচল, নাগাল্যান্ড, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল জম্মু-কাশ্মীর। এই সব জায়গায় স্থানীয়স্তরে নির্বাচনের ক্ষেত্রে পৃথক ভোটার তালিকা ব্যবহার হয়।

এনিয়ে বিভ্রান্তিও রয়েছে বহু জায়গায়। দেখা যায় বিধানসভার তালিকায় কারও নাম রয়েছে তো তিনি পুরভোট দিতে পারলেন না। আবার কেউ পঞ্চায়েতে ভোট দিলেও লোকসভার তালিকায় নাম না থাকার জন্য ভোট দিতে পারেননি। এমন উদাহরণ রয়েছে ভুড়িভুড়ি। তাই একটিই তালিকার পথে হাঁটতে চাইছে কেন্দ্র।

দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে প্রকাশ, মূলত দুটি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে ওই বৈঠকে৷ এক, সংবিধানের ২৪৩কে ও ২৪৩জেড (এ) ধারার সংশোধন করে গোটা দেশে একটিই নির্বাচন করা৷ দ্বিতীয়ত, পুরভোট ও পঞ্চায়েত ভোটের জন্যও নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকা গ্রহণ করা৷ বৈঠকের নেতৃত্বে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রিন্সপ্যাল সেক্রেটারি পি কে মিশ্র৷

২০১৪ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এক দেশ, এক ভোটের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন মোদী। তা নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু উনিশের নির্বাচনী ইস্তেহারে সে কথা খোলাখুলি ঘোষণা করেছিল গেরুয়া শিবির। বিজেপির স্পষ্ট বক্তব্য, বছর বছর ভোট করা মানে দেশের মানুষের পয়সার শ্রাদ্ধ। তা ছাড়া এত বার আদর্শ আচরণ বিধি জারি হয় সে কারণে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়িত হওয়াও থমকে যায়। 

যদিও পর্যবেক্ষকদের মতে , এই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে গেলে ব্যাপক ক্ষোভের মুখে পড়তে হতে পারে সরকারকে। তবে অনেকে এও বলছেন, ৩০০-র বেশি আসন পাওয়া এই বিজেপি অনেক আগ্রাসী। শত ক্ষোভের মুখেও ৩৭০ ধারা প্রত্যাহার করেই ছেড়েছে কাশ্মীর থেকে। অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন, বোধহয় আগুন জ্বলবে উপত্যকায়। কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।

এক দেশ এক ভোট প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত করতে গেলে সংসদে সংবিধান সংশোধনের বিল আনতে হবে। তা দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন নিয়ে তা পাশ করাতে হবে দুই কক্ষে। পর্যবেক্ষকদের বক্তব্য, এই কাজ বিজেপির পক্ষে চ্যালেঞ্জের। কারণ কোনও রাজনৈতিক দলই চাইবে না মেয়াদ ফুরনোর আগে আবার ভোট হোক। তাঁদের মতে, ধরা যাক ২০২৪ সাল থেকেই এই প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইল কেন্দ্র। সেক্ষেত্রে একুশে নির্বাচিত বাংলা, কেরল, অসম সরকারের তখন বয়স হবে তিন বছর।

তারা কি চাইবে দু’বছর আগে সরকার পড়ে যাক? ২০২৩-এর ডিসেম্বরে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগড়ের মতো পাঁচ রাজ্যের ভোট হব। ২০২৪ সালের লোকসভার সময় সেই সরকারগুলির বয়স হবে মাত্র কয়েক মাস। অনেকের প্রশ্ন, তাহলে কি তখনই ভেঙে দেওয়া হবে সেই রাজের সরকারগুলি? তা ছাড়া আরও প্রশ্ন, যদি কোনও রাজ্যে মাঝপথে সরকার পড়ে যায়, এবং অন্য দলগুলির কাছে প্রয়োজনীয় সংখ্যা না থাকে, তাহলে বাকি সময়টা কি রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হবে?

Previous articleরেনাল প্যারামিটারের কিছুটা উন্নতি, ফুসফুসের চিকিৎসা চলছে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের
Next articleদেশের সময় ই-পেপার/Desher Samay e-paper

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here