দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃসোমবার দেশজুড়ে পালিত হচ্ছে রাখি পূর্ণিমা। করোনা আবহেও ভাই-বোনের এই উত্‍সব উদযাপিত হচ্ছে ঘরে ঘরে। বোন ভাইয়ের হাতে তাঁর দীর্ঘ নীরোগ জীবন কামনা করে রাখি বেঁধে দেন। আর ভাই অঙ্গীকার করে সারাজীবন বোনকে রক্ষা করার। সঙ্গে থাকে বিপদে-আপদে সারাজীবন এক অপরের পাশে থাকার অঙ্গীকার।

রাখি পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে সোমবার ট্যুইট করে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা।

রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সোমবার সকালে ট্যুইট করেন, ‘রাখির অনেক শুভেচ্ছা সবার জন্য। রাখি হল ভালোবাসা ও বিশ্বাসের পবিত্র সুতো। এই সুতো ভাই ও বোনের সম্পর্ককে বেঁধে রাখে। আসুন, এই দিনে আমরা সবাই মহিলাদের নিরাপত্তা ও সম্মান সুরক্ষিত রাখার অঙ্গীকার করি।’

নিজের ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে সোমবার রাখি উপলক্ষ্যে নারী ক্ষমতায়নের পক্ষে সওয়াল করেন দেশের উপ-রাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নায়ডু। তিনি বলেন, ‘রাখি বন্ধনের পবিত্র উত্‍সব উপলক্ষ্যে আমার শুভেচ্ছা ও মঙ্গলকামনা সবার প্রতি। এই উত্‍সব ভাই ও বোনের অমূল্য সম্পর্ককে যে ভালোবাসার বন্ধন বেঁধে রেখেছে, তাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে।’ তাঁর আরও সংযোজন, ‘এই পবিত্র উত্‍সব উপলক্ষ্যে আমরা সবাই মহিলাদের যে সম্মান ও শ্রদ্ধা করার রীতি আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ তাকে তুলে ধরি। তার সঙ্গে নারী ক্ষমতায়নকে আরও মজবুত করে তুলি। এই উত্‍সব আমাদের দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি নিয়ে আসুক।’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী  রাখি উপলক্ষ্যে ট্যুইট করেন, ‘সকল দেশবাসীর প্রতি রাখির শুভেচ্ছা।’ রাখি উপলক্ষ্যে ট্যুইট করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহও। তবে বর্তমানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন তিনি। হিন্দিতে ট্যুইট করে শাহ লিখেছেন রাখি পূর্ণিমার পবিত্র উত্‍সব উপলক্ষ্যে আমাদের সকল দেশবাসীকে হার্দিক শুভেচ্ছো।

রাজ্যবাসীকে রাখির ক শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে রাখি বন্ধন উত্‍সবের সূচনা করেন, নিজের ট্যুইটে সেই বিষয়টির উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

বনগাঁয় পুরসভার উদ্দ্যোগে করোনা–‌আবহে আজ রাখিবন্ধনে রাখির বদলে দেওয়া হলো মাস্ক, গাছের চারা এবং স্যানিটাইজার। অন্যান্য বারের মতো রাখি কেনারও হিড়িক নেই। রাখি বিক্রির বাজারও মন্দা। রংবেরঙের রাখি নিয়ে এইদিনে যে উচ্ছ্বাস থাকে তা একেবারেই নেই। কারণ করোনার ভয়। তবে, রাখিবন্ধন উৎসব একেবারে বন্ধ ছিল না। বাড়িতে বাড়িতে বোনেরা তাঁদের ভাইদের হাতে রাখি বেঁধেছেন৷ তবে সোমবার বস্তুত রাখিবন্ধন উৎসবকে ঘিরে করোনা সচেতনতার প্রচারই করা হল গোটা বাংলায়। রাখির সঙ্গে দেওয়া হয়েছে মাস্ক, স্যানিটাইজার। কোথাও বা রাখি নয়, দেওয়া হয়েছে শুধুই মাস্ক। 

এদিন বনগাঁ মণীষাঙ্গণে রবীন্দ্র মূর্তীতে রাখি বেঁধে উৎসবের সূচনা হয়৷

বনগাঁ ডি এন ৪৪ বাস ওনার্স এ্যাসোসিয়েশন এবং বনগাঁ মহকুমা অসংগঠিত শ্রমিক ইউনিয়ন এর পক্ষ থেকে এদিন কয়েক হাজার মাস্ক এবং স্যানিটাইজার তুলে দেওয়া হয় স্থানীয় মানুষের হাতে৷

বারাসাত সমন্বয়ের পক্ষ থেকে এদিন দত্তপুকুরের জগন্নাথপুর এলাকায় রাখি বন্ধন উৎসব পালিত হলো ।বিহার এবং ঝাড়খন্ড থেকে আসা ইটভাটার শ্রমিক মহিলা যারা রয়েছেন তাদেরকে রাখি পরিয়ে তাঁদের বন্ধনে আবদ্ধ করা হলো সেই সঙ্গে প্রত্যেককে মাক্স স্যানিটাইজার এবং শিশুদের জন্য নতুন জামা মেয়েদের জন্য নতুন জামা এবং মিষ্টি মুখের মধ্যে দিয়ে আজকের অনুষ্ঠানটি পালিত পালন করল বারাসাত সমন্বয় সেই সঙ্গে জগন্নাথপুর এলাকার সমস্ত ইটভাটার এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে করে গোটা এলাকাকে দূষণমুক্ত করল বারাসাত সমন্বয়।

নদিয়ার শিলিন্দা বিবেকানন্দ সংঘ ও পাঠাগারের উদ্যোগে বিভিন্ন এলাকায় জীবানুনাশক স্প্রে করার পাশাপাশি প্রত্যেককে মাক্স স্যানিটাইজার দেওয়া বিলি করা হয়।

গত কয়েক মাস যাবৎ যাঁরা করোনার সঙ্গে লড়ছেন সেই চিকিৎসক, নার্সদেরও আজ সম্মান জানানো হয়েছে। যাঁরা করোনা যোদ্ধা তাঁদের হাতে রাখি পরানো হয়। রাখিবন্ধনের দিনে অনেকে গাছকে রাখি পরান। এদিনও অনেকেই গাছকেও রাখি পরিয়েছেন। স্বদেশ বসু হাসপাতালের পক্ষে আজকের এদিন এক অভিনব কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসক ও নার্সদের হাতে বাঁধা হয়েছে রাখি। হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, এবছর রক্ষাবন্ধন পালিত হল অন্যভাবে। ডাক্তার, নার্স ভাইবোনদের জন্য তৈরি করা হয়েছে স্যানিটাইজেশন অটোমেটিক রাখি। স্বাস্থ্যকর্মীদের হাতেও রাখি বাঁধা হয়েছে হাসপাতালের তরফে। ঠাকুরপুকুরে এই অনুষ্ঠান হয়। ‌বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মাস্ক, স্যানিটাইজার উপহার দিয়ে রাখিবন্ধন উৎসব পালন করেছে। এই দিনটিতে বিভিন্ন জায়গায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু, সেই সমস্ত অনুষ্ঠান হবে না। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণেই।‌‌

এ বছর মেট্রো চ্যানেলে রাখি উৎসব হয়নি । কলকাতা পুরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে রাখিবন্ধন উৎসবকে প্রতীকী উৎসব হিসেবে উদ্‌যাপন করা হয়েছে। যুবকল্যাণ ও ক্রীড়া দপ্তর এবং কলকাতা পুরসভার পক্ষ থেকে সমস্ত ওয়ার্ডে একটি সার্কুলার দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ৩ কোটি মাস্ক রাজ্য সরকার তৈরি করেছে। এই মাস্ক সকলকে, ছাত্র–যুবদের হাতেও তুলে দেওয়া হয়। মাস্কের ওপর লেখা হয়েছে— ‘‌বাংলা আমার মা’।‌ নীচে লেখা ‘‌পশ্চিমবঙ্গ সরকার’‌।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here