গোটা রাজ্যে তৃণমূলে রদবদল, প্রবীণদের সরিয়ে নবীনদের বড় দায়িত্ব, জেলা সংগঠনে নতুন পদ হল ‘চেয়ারম্যান’

0
2325

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ গত মঙ্গলবার একুশের মঞ্চে দাঁড়িয়েই দলে রদবদলের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। দিদি বলেন, “আমি চিরদিনই থাকব না। কিন্তু তৃণমূলের কর্মীদের আমি তৈরি করে দিয়ে যেতে চাই।…আমার ছাত্র যৌবন এগিয়ে আসুন। স্বপ্নের ভোর নিয়ে আসুন।”

বিষ্যুদবার বিকেলে সব জেলা সভাপতি ও পর্যবেক্ষকদের ভিডিও কনফারেন্সে ডেকে সেই বদলের স্বরূপই ঘোষণা করে দিলেন তিনি। এখনও পর্যন্ত যা ছবি, তাতে অন্যতম বার্তা হল, প্রবীণদের সরিয়ে সংগঠনের বড় দায়িত্বে নবীনদের নিয়ে এলেন তিনি। একুশে বিধানসভা ভোটের আগে যাঁরা দায়িত্ব নিয়ে গোটা জেলা ঘুরে বেড়াতে পারবেন। তাঁরা কারা? লক্ষ্মীরতন শুক্ল, দুলাল মুর্মু, মহুয়া মৈত্র, পার্থপ্রতিম রায়, শ্যামল সাঁতরা, গুরুপদ টুডু.. প্রমুখ।

হাওড়়ার জেলা (শহর) সভাপতি পদ থেকে সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে উত্তর হাওড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ দফতরের প্রতিমন্ত্রী লক্ষ্মীরতন শুক্লকে। লোকসভা ভোটের পর মহুয়া মৈত্রকে কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন মমতা। এবার তাঁকেই গোটা নদিয়া জেলার সভাপতি করা হল। সেই পদে আগে ছিলেন গৌরীশঙ্কর দত্ত। গোষ্ঠী কোন্দলে বিদীর্ণ কোচবিহার জেলাসভাপতি পদে আনা হল প্রাক্তন সাংসদ পার্থপ্রতিম রায়কে। বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে সরিয়ে তাঁর জায়গা আনা হল অপেক্ষাকৃত তরুণ পার্থকে।

জঙ্গলমহলের তিন জেলা বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়াতেও সভাপতি বদল করেছেন দিদি। শুভাশিস বটব্যালের জায়গায় বাঁকুড়ার সভাপতি করা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রী শ্যামল সাঁতরাকে। পুরুলিয়ায় শান্তিরাম মাহাতোর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন গুরুপদ টুডু। মধ্যবয়সী গুরুপদ রাজ্যের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর স্বামী। ঝাড়গ্রামের সভাপতি পদ থেকে বীরবাহা সোরেনকে সরিয়ে সেখানে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দুলাল মুর্মুকে। বীরবাহাকে ঝাড়গ্রামের চেয়ারম্যান করা হয়েছে।

উত্তরবঙ্গের কেবল একটি জেলাতেই সভাপতি বদল করেছেন দিদি। দক্ষিণ দিনাজপুরের জেলা সভাপতি পদ থেকে অর্পিতা ঘোষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাঁর বদলে জেলা সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গৌতম দাসকে। প্রসঙ্গত, উনিশের ভোটে বালুরঘাটে তৃণমূল হেরেছিল। প্রার্থী ছিলেন ১৪-র ভোটে জেতা অর্পিতা। সেই সময়ে অভিযোগ উঠেছিল তৎকালীন জেলা সভাপতি বিপ্লব মৈত্র প্রার্থী হতে না পেরেই অন্তর্ঘাত করেছেন। বিপ্লববাবুকে সরিয়ে অরপিতাকে জেলা সভাপতি করেছিলেন মমতা। পরে যদিও বিপ্লব বিজেপিতে যোগ দেন। এক বছরের মধ্যে ফের রদবদল হল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়।

“দেশের সময়”আগেই লিখেছিল যে তৃণমূলের জেলা সংগঠনে এ বার নতুন পদ তৈরি করতে চলেছেন দিদি। সে পদের পোশাকি নাম – ‘চেয়ারম্যান।’ যেমন উত্তর কলকাতার চেয়ারম্যান করা হয়েছে সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে, উত্তর ২৪ পরগনার চেয়ারম্যান পদে আনা হয়েছে পাণিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভার মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষকে, দার্জিলিং জেলার চেয়ারম্যান করা হয়েছে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবকে।

দলের অনেকের মতে অবশ্য, নবগঠিত ‘চেয়ারম্যান’ পদটি হল বৃদ্ধাশ্রম। ভোটের আগে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিলেও একটা আলঙ্কারিক পদ দিয়ে রাখা হল। আসল ক্ষমতা থাকবে জেলা সভাপতির হাতেই। এই পদক্ষেপকে ভারসাম্য রাখার চেষ্টাও বলা যেতে পারে। বস্তুত এই ভারসাম্য রাখতে জেলার অনেক নেতা বা মন্ত্রীকে রাজ্য কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কিন্তু সেই পদেরও কতটা গুরুত্ব রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যেমন ডোমজুড়ের বিধায়ক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে রাজ্য কমিটির সভাপতি করা হয়েছে।

এ ছাড়াও এদিন তৃণমূলের যুব সংগঠনেও রদবদল ঘটিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে সংগঠনে নতুন কোর কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে সাত জনকে সদস্য করা হয়েছে,- সুব্রত বক্সী, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম, শুভেন্দু অধিকারী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শান্তা ছেত্রি।

Previous articleসেক্স র‌্যাকেটের মালকিন সোনু পাঞ্জাবনের ২৪ বছর জেল, ১২ বার বিক্রি হওয়া মেয়ে বিচার পেল অবশেষে
Next articleএকুশের টিকিট থেকে সবকিছুই সরাসরি কালীঘাটের হাতে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here