দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ ভারতে শিগগির দুটি করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। আর এই দুই ভ্যাকসিন অর্থাৎ কোভ্যাক্সিন ও জাইকভ ডি-এর ট্রায়াল শুরু মানেই দেশে করোনা সংক্রমণের শেষের শুরু বলে জানাল কেন্দ্র। রবিবার কেন্দ্রের তরফে এমনই বার্তা দেওয়া হয়েছে।
রবিবার কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে লেখা রয়েছে, এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ১ কোটি ১২ লাখের বেশি মানুষ করোনা আক্রান্ত। মৃত্যু হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষের। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে ১০০-র বেশি ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে। তার মধ্যে ১১টি ভ্যাকসিনের মানবদেহে ট্রায়াল চলছে।
কেন্দ্রের এই চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, “ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়া ও সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশনের অনুমতি পাওয়ার পরেই ভারতে কোভ্যাক্সিন ও জাইকভ ডি-এর ট্রায়াল শুরু হচ্ছে। এই ট্রায়াল শুরু হওয়া মানেই করোনা সংক্রমণের শেষের শুরু। ইতিমধ্যেই ৬টি কোম্পানি এই ভ্যাকসিনের উপর কাজ করছে। তার মধ্যে দুটি ভারতীয় কোম্পানি। এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে যে ১৪০টি ভ্যাকসিনের কাজ চলছে তার মধ্যে ১১টি ভ্যাকসিন মানব দেহে ট্রায়াল শুরু হয়েছে।”
ইতিমধ্যেই পৃথিবীর দুটি বড় ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি ব্রিটেনের আস্ট্রাজেনেকা ও আমেরিকার মোডের্নার সঙ্গে কথা হয়েছে বলেই জানিয়েছে কেন্দ্র। যদি এই দুই ড্রাগের ট্রায়াল সফল হয়, তাহলে এই দুই কোম্পানি ওই ওষুধ তৈরি করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। এই দুই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালের জন্য সম্মতি দিয়েছে এই দুই কোম্পানি।
সাধারণত কোনও ড্রাগের প্রথম দুই পর্যায়ের ট্রায়ালে দেখা হয় সেই ড্রাগ সুরক্ষিত কিনা। তারপরে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়ালে তার কর্মক্ষমতা দেখা হয়। এক একটি পর্যায় শেষ হতে কয়েক মাস অথবা বছরও লেগে যেতে পারে।
গত শুক্রবার ভ্যাকসিন ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থাকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গবের দেওয়া একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। সেই চিঠিতেই নির্দেশ দেওয়া হয়, কোভ্যাক্সিন ও জাইকভ ডি-এর ক্লিনিকাল ট্রায়াল দ্রুত শেষ করতে হবে। আগামী ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবেসের দিনে ওই ভ্যাকসিন বাজারে আনাই টার্গেট। ওই চিঠিতে এও বলা হয়েছিল যে, ৭ জুলাই থেকে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে। সেই নির্দেশ মতো ভারত বায়োটেক কোভ্যাক্সিন ও জাইকভ ডি-এর পরীক্ষার জন্য সময় পাচ্ছে ৭ জুলাই থেকে ১৫ অগস্ট মানে মাত্র ৩৯ দিন। এত কম সময়ে ট্রায়াল শেষ করা সম্ভব কিনা তা নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই রকম ভাবে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে ভ্যাকসিনের গবেষণা করা যায় না। এই ভাবে ট্রায়াল করে প্রতিশেধক বাজারে আনলে তা কার্যকর নাও হতে পারে। এমনকী এর ফলে ক্ষতিও হতে পারে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানেও বলা আছে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে এক বছর তিন মাস সময় লাগতে পারে। সূত্রের খবর, ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনের প্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বানরের উপরে এবং তাতে ৯৬ শতাংশ সাফল্য মিলেছে। শুরু হয় রাজনৈতিক সমালোচনাও।
এই সমালোচনার মুখে পড়ে পরবর্তীকালে আইসিএমআর-এর তরফে বলা হয়েছে, কোভ্যাক্সিনের প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্বে সাফল্য পেয়েছে। এবার ফেজ ওয়ান ও ফেজ টু’য়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। অর্থাৎ ওই ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই পর্যায়ে লালফিতের ফাঁসে যাতে কোনওরকম বিলম্ব না হয়, সেই কারণেই আইসিএমআর-এর ডিজি ওই চিঠি লিখেছেন। তবে এটা নিশ্চিন্ত থাকা যেতে পারে যে সময় কম থাকলেও ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কোনও প্রয়োজনীর প্রক্রিয়াই এড়িয়ে যাওয়া হবে না। সব রকম নিয়ম মেনেই যত দ্রুত সম্ভব সেই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। আর সেই উদ্দেশ্যেই চিঠি দিয়েছেন ডিজি।