দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বাড়িতে জল নেই,পাম্প অচল। আলো জ্বলছে না, পাখা চলছে না। মোবাইলের চার্জ শূন্য।
আমপান-বিভীষিকার দু’দিন পরেও বনগাঁ মহকুমার বহু অঞ্চলে ফেরেনি বিদ্যুৎ সংযোগ। তাই চাল-ডাল-আলু নয়। মদ নয়। জলের জন্যও অতটা নয়। বৃহস্পতিবার যে দুটো জিনিসের চাহিদা সব চেয়ে বেশি, তার নাম মোমবাতি আর জেনারেটর!
শুক্রবার বার সকাল ১oটা। মোটরবাইকে করে দু’জন যুবক বনগাঁ মতিগঞ্জ এলাকায় একটি মুদির দোকানের সামনে থেমে বললেন, ‘কাকু চারটে মোমবাতি দিন তো!’ দোকান-মালিক সন্তোষ দেবনাথ বিস্মিত, ‘মোমবাতি! যা ছিল, সকাল ৮ টার মধ্যে সব শেষ হয়ে গিয়েছে।’ দুই যুবক তবু নাছোড়, ‘একেবারে ছোট মোমবাতি হলেও চলবে। দেখুন না একটু।’ দোকানদার এ বার বিরক্ত, ‘বললাম তো, একটাও নেই!’ জয়পুরে নিবেদিতা সাহা বাড়ির সামনে গাছের ভাঙা ডাল,বিদ্যুতের খুঁটি ঠেলে পাড়ার দোকানে ছুটেছেন মোমবাতির ব্যবস্থা করতে। অনেক সাধাসাধি করে পেলেন মাত্র দুটো।
ট বাজারে মন্দিরের সামনে মোমবাতির পসরা সাজিয়ে বিক্রি করছিলেন মানষী বিশ্বাস।
কালীপুজো-দেওয়ালিতে যেগুলো বিক্রি হয়নি, এদিন সেই সব মোমবাতি সাজিয়ে বসেছিলেন । এক ঘন্টায় সব শেষ বিক্রি হয়ে যায়। যে প্যাকেটটার গায়ে দাম লেখা ২০ টাকা, তার দাম দোকানি হাঁকছেন ৫০ টাকা। ১০০ টাকা দামের এক পিস বড় মোমবাতি এদিন ২০০ টাকা! তবু একবাক্যে রীতিমতো লাইন দিয়ে সে সব কিনে নিলেন পাড়ার-বেপাড়ার বহু লোক। মানষীর কথায়, ‘কে জানত, মোমবাতির এখন এত চাহিদা হবে!’
এ তো গেল মোমবাতির চাহিদা। জেনারেটরের চাহিদাও একই রকম। পেট্রাপোল এলাকায় থাকেন ব্যাবসায়ী প্রনব ঘোষ। এদিন সকালে পরিস্থিতি বুঝেই তিনি পাড়ার অন্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনারেটর ভাড়া করিয়ে এনেছেন। তাঁর কথায়, ‘বিদ্যুৎ আজও আসবে না বলে নিশ্চিত হওয়ার পর জেনারেটর ভাড়া করলাম। প্রতি পয়েন্ট পিছু পরিবার টাকা দেবে। তাতে অন্তত পাখা আর আলো তো জ্বলবে। হাতে টেনে যে জেনারেটর চালাতে হয়, স্বাভাবিক সময়ে সেগুলি ৭০০-৮০০ টাকা ভাড়া নেয়। তেল আলাদা। এখন শুধু সেই খালি জেনারেটর ভাড়া ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা।’
মতিগঞ্জের বাসিন্দা প্রদীপ দের বাড়িতে জেনারেটর চালু ছিল বৃহস্পতিবার ভোররাত পর্যন্ত। তার পরই তা দেহ রেখেছে। বিকল্প আলোর জন্য প্রদীপ বাবু ছুটেছেন দোকানে। ইছামতী নদী পাড়ার বাসিন্দা বিশ্বজ্যি কুন্ডু হাজার টাকা দিয়ে রিচার্জেবল আলো কিনতে পেরে হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ফ্যান্সি মার্কেট, চাঁদনি চক বাজারে যাতায়াতের সুবাদে জানি, এই ধরনের চার্জের আলো ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়। কিন্তু এখন সে উপায় নেই। তাই বাধ্য হয়ে এত দামেই কিনতে হল।’