দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের আরও কাছে চলে এল শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আমপান। এই মুহূর্তে আমপান ওড়িশার পারাদ্বীপ থেকে মাত্র ৪৮০ কিলোমিটার দূরে। দিঘা থেকে ৬৩০ কিলোমিটার এবং বাংলাদেশের খেপুপাড়া থেকে ৭৫০ কিলোমিটার দূরে রয়েছে। স্থলভাগে যখন আছড়ে পড়বে ঘূর্ণনের গতিবেগ হবে ১৫৫-৬৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায়। এমনকি তা ১৮০ কিলোমিটারও ছাড়িয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে হবে প্রবল জলোচ্ছ্বাস।
প্রায় দু’দশক আগেকার ভয়াবহ স্মৃতি উস্কে বঙ্গোপসাগরে ফের জন্ম নিল এক ‘সুপার সাইক্লোন’ বা মহা ঘূর্ণিঝড়। তবে দিল্লির মৌসম ভবনের আশ্বাস, আমপান নামের ওই ঘূর্ণিঝড় সুপার সাইক্লোনে পরিণত হলেও সে ওই ভয়াল চেহারা নিয়ে ডাঙায় আছড়ে পড়বে না। কাল, বুধবার সন্ধ্যায় সে দিঘা এবং বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি কোনও জায়গা দিয়ে স্থলভূমিতে ঢুকতে পারে এবং সেই সময় তার যে-রূপ ধরার কথা, আবহবিদদের পরিভাষায় তাকে বলা হয় ‘এক্সট্রিমলি সিভিয়ার সাইক্লোন’ বা মারাত্মক ঘূর্ণিঝড়।
করোনা আতঙ্ক ছিলই। সঙ্গে দোসর এবার আমপান (Amphan) ঘূর্ণিঝড়। শক্তি বাড়িয়ে সোমবার যা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (Super Cyclone) পরিণত হয়েছে। এর সর্বোচ্চ গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় ১৯৫ কিলোমিটার। আগামী বুধবার দুপুরে বাংলায় (West Bengal Weather Forecast) প্রবেশ করতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। এই আমপানের ঝাপটায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে দিঘা, মন্দারমণি, সুন্দরবনের সমুদ্র সৈকত এবং উপকূলবর্তী এলাকায়।
হাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপকূলে ঝোড়ো হাওয়া-সহ বৃষ্টি মঙ্গলবার থেকেই শুরু হতে পারে। বুধবার গাঙ্গেয় বঙ্গের প্রায় সর্বত্র ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হবে। আমপানের (Amphan) প্রভাবে মঙ্গল ও বুধবার কলকাতা, পূর্ব মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হুগলী, নদীয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়ের প্রভাব পড়তে পারে কলকাতাতেও (Kolkata Weather)। ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সব ধরনের লাইভ তথ্য বাংলায় জানতে চোখ রাখুন ‘দেশেরসময় ‘ ডিজিটালের ব্রাউজার এ। এখানে আমরা জানাব, আমপানের (Amphan) প্রতি মুহূর্তের লাইভ আপডেট-
বঙ্গের দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মাঝের অঞ্চল। আজই আছড়ে পড়তে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।
–কলকাতায় সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ১২০ কিলোমিটার/ঘণ্টা:
সুপার সাইক্লোন। ১৯৯৯ সালে পারাদ্বীপ ঘূর্ণিঝড়ের পর বঙ্গোপসাগরে প্রথম সুপার সাইক্লোন। বুধবার স্থলভাগে ঢোকার আগে কিছুটা শক্তি খুইয়ে চরম তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। বুধবার দুপুর বা বিকেলে দিঘা থেকে বাংলাদেশের হাতিয়া দ্বীপের মাঝামাঝি, সুন্দরবনের কাছে আছড়ে পড়তে পারে।
বুধবার সারা দিনে বাড়ির বাইরে না-বেরোনোই ভালো। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার, ওষুধ, পানীয় জল মজুত রাখুন।
– জাতীয় মোকাবিলা বাহিনীর ১৭টি দলকে বাংলায় এবং ওডিশায় মোতায়েন করা হয়েছে। এরমধ্যে ৭টি দল বাংলার ৬টি জেলায় থাকবে।
স্থলভূমিতে আছড়ে পড়ার সময় এর গতিবেগ হতে পারে ১৫৫-১৬৫ কিলোমিটার/ঘণ্টা।
সোমবার সকাল পর্যন্ত দিঘা থেকে ৯০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ছিল এই ঘূর্ণিঝড়।
সোমবার জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
নয়াদিল্লির মৌসম ভবনের মতে, উম্পুনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে ওডিশার উত্তরভাগে।
– ঘূর্ণিঝড় আমপানের (Amphan) নামকরণ করেছে তাইল্যান্ড।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন নবান্নে জানান, ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে বলা হয়েছে জেলাশাসকদের। উপকূলে যাঁরা থাকেন, তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যেতে হবে। ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলিতে যথাসম্ভব বিধি মেনে রাখতে হবে বাসিন্দাদের। বিপর্যয় মোকাবিলায় সব ধরনের ব্যবস্থা রাখতে হবে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফের দল প্রস্তুত আছে। নবান্নেও দিনরাত উপস্থিত থাকবেন প্রশাসনিক কর্তারা। দুই ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনকে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে ঝড়ের বিপদ সামাল দেওয়ার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির বিষয়ে পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সুন্দরবনে নদীর কাছ থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিচ্ছেন বনকর্মীরা। ঝড়ের পরে ত্রাণকাজে নামবে বন দফতর। প্রতিটি বিট ও রেঞ্জ অফিসে চার দিনের রেশন মজুত রাখা হয়েছে। ঝড়ের আগে জলযানের বদলে ক্যাম্প অফিসে থাকতে বলা হয়েছে কর্মীদের। রাজ্যের সব চিড়িয়াখানাকে প্রস্তুত থাকতে বলেছেন রাজ্যের জ়ু অথরিটি।
উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় বিভিন্ন বন্যাত্রাণ কেন্দ্র ও স্কুলভবনে শিবিরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অনেক জায়গা থেকেই বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ দিন সাগরের বিচ্ছিন্ন ঘোড়ামারা দ্বীপ থেকে শ’খানেক বাসিন্দাকে সাগরদ্বীপে সরিয়ে আনা হয়। দুই জেলাতেই বিভিন্ন জায়গায় দুর্বল নদীবাঁধ সারানো হচ্ছে। ক্যানিংয়ে নিকারিঘাটা পঞ্চায়েতের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পের শ্রমিকদের নিয়ে বিপর্যয় মোকাবিলা দল গড়া হয়েছে। ৩০ জনের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী পৌঁছে গিয়েছে হাসনাবাদে। পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকা থেকে রাত পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার বাসিন্দাকে সরানো হয়েছে। কলকাতায় ঝড়ের সময় প্রাণহানি ঠেকাতে সব থানাকে নিজের এলাকার জরাজীর্ণ বাড়ির তালিকা তৈরি করতে বলেছে লালবাজার।