”চারদিন চারটে বিগ জিরো”না আছে রসগোল্লা,না আছে রাজভোগ,সবটাই কাঁচকলা’, কেন্দ্রের প্যাকেজ নিয়ে কটাক্ষ মুখ্যমন্ত্রীর

0
979

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিশ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ সবিস্তার জানার পর নবান্ন থেকে কী প্রতিক্রিয়া আসতে পারা তা আন্দাজ করা যাচ্ছিল। হলও তাই। সোমবার এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কটাক্ষ করে বলেন, “হ্যাঁ, চার দিন ধরে তো আপনারা অনেক রসগোল্লা, রাজভোগ, বিরিয়ানি দেখলেন। আসলে ওতে না আছে রাজভোগ, না আছে রসগোল্লা, কিংবা জিলিপি বা নিদেন পক্ষে বোঁদে! সবটাই কাঁচকলা। চারদিন চারটে বিগ জিরো।”

শুধু তা নয়, রাজস্ব ঘাটতির সংকট মেটাতে কেন্দ্র যে শর্ত সাপেক্ষে ঋণ নেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে রাজ্যগুলিকে, সেই প্রস্তাব এদিন সাফ নাকচ করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট জানিয়েছেন, সংস্কারের নামে মানুষের উপর তিনি বোঝা চাপাতে পারবেন না। তাঁর কথায়, মানুষের সঙ্গে থেকে যে ক্ষমতা লাভবান হয়, আমি তার দিকে।

কোভিড সংকটের কারণে রাজ্যগুলির রাজস্ব আদায় এখন তলানিতে ঠেকেছে। এই অবস্থায় কেন্দ্রের থেকে আর্থিক প্যাকেজের প্রত্যাশা ছিল কমবেশি সকলেরই। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীও কেন্দ্রীয় প্রকল্প বাবদ বকেয়া পাওনা চাওয়ার পাশাপাশি দাবি করেছিলেন, রাজ্যগুলিকে রিজার্ভ থেকে রেপো রেটে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হোক। সেই সঙ্গে ২৫ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজও চেয়েছিলেন তিনি।

তা ছাড়া তাঁর দাবি ছিল, রাজ্যের উপর যে ঋণের বোঝা রয়েছে, তার সুদের উপর অন্তত এক বছরের মোরাটোরিয়াম তথা স্থগিতাদেশ দিতে হবে। সেই সঙ্গে রাজ্যগুলির এফআরবিএম (ফিসকাল রেসপনসিবিলিটি ও বাজেট ম্যানেজমেন্ট) লিমিট বাড়াতে দিতে হবে। অর্থাৎ মোদ্দা কথা রাজস্ব ঘাটতির সীমা ৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশ করতে দিতে হবে।

কিন্তু রবিবার সাংবাদিক বৈঠকে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন পষ্টাপষ্টি জানিয়ে দেন, “রাজ্যগুলি তাদের এফআরবিএম ‘ম্যানেজ করবে’ সেটা তাদের ব্যাপার। কেন্দ্রের কোনও দায় নেই। তা ছাড়া রাজ্যগুলিকে সরাসরি আর্থিক প্যাকেজ বা নগদ অনুদানের ব্যাপারেও টুঁ শব্দ করেননি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

তবে নির্মলা জানিয়েছিলেন রাজ্যগুলি বর্তমান স্টেট জিডিপি তথা রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের তিন শতাংশ ধরা নিতে পারে। তা বাড়িয়ে শর্ত সাপেক্ষে ৫ শতাংশ করা হচ্ছে। প্রথম ০.৫ শতাংশ ঋণ নেওয়ার জন্য কোনও শর্ত নেই। কিন্তু তার পর আরও ঋণ নিতে গেলে, ‘এক দেশ এক রেশন কার্ড’ স্কিম রাজ্যকে চালু করতে হবে। সেই সঙ্গে ব্যবসা ও লগ্নির পথ প্রশস্ত করতে প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্কার, পুরসভাগুলির আয় বাড়িয়ে স্বনির্ভর করা এবং বিদ্যুৎ ক্ষেত্রের সংস্কার করতে হবে।

এই প্রস্তাব নিয়েও অসন্তুষ্ট মুখ্যমন্ত্রী। সোমবার প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন, কেন্দ্র আমাদের অতিরিক্ত মাত্র ০.৫ শতাংশ ঋণ নেওয়ার সুযোগ দিয়েছে। আর কিছু নেই। তার থেকে বেশি ঋণ নিতে গেলে শর্ত মানতে হবে। কিন্তু আমি তা মানব না। .তাঁর কথায়, “কেউ যদি আমাকে বলে আর্বান ট্যাক্স বাড়াও, আমি বলব পারব না। কেউ যদি বলে তোমার রাজ্যের সব বিদ্যুৎ নিয়ে নেব, আমি বলব পারব না। আর কেউ যদি বলে রেশন কার্ডে ছবি লাগিয়ে পাঠাবে তাও মানব না। আমরা যে টুকু পারব, তাই দিয়েই চলব”। কেন্দ্রের সরকার যে নানা অছিলায় রাজ্যের কাজে অহেতুক নাক গলাতে চাইছে সেই অভিযোগও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এ বছরটা বাংলার ভোটের বছর। কেন্দ্র কোনও আর্থিক প্যাকেজ না দেওয়ায় রাজ্যের অসুবিধা যে হচ্ছে সন্দেহ নেই। আরও একটা বিষয়ও তাৎপর্যপূর্ণ। মুখ্যমন্ত্রী সামাজিক পরিকাঠামো নির্মাণ তথা বাংলা আবাস যোজনা বা বাংলার সড়ক যোজনায় কাজ বাড়ানোর যে কথা বলছেন, সেগুলিতে কেন্দ্রীয় সরকার বড় টাকা অনুদান দেয়। কেন্দ্রের তরফে এ ক্ষেত্রে খুব বেশি সহযোগিতা না পেলেও সমস্যা হতে পারে।

Previous article১৫ দিনে সব শ্রমিককে রাজ্যে ফেরাব, প্রত্যয়ের সঙ্গে বললেন মুখ্যমন্ত্রী
Next article‘ আমফান’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর রিভিউ মিটিং: ১৯৫ কিমি গতিবেগে ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়বে পশ্চিমবঙ্গে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here