দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ দেখুন ভিডিও:
- করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে গোটা দেশ যে অভূতপূর্ব আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে তা থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। যার নাম দেওয়া হয়েছে আত্মনির্ভর ভারত যোজনা।
- তিনি জানিয়েছিলেন, ধাপে ধাপে এই ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজের উপাদানগুলি ঘোষণা করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।
- সেই মোতাবেক গত বুধবার প্রথম দফায় ঘোষণা করেছিলেন নির্মলা। সেদিন মূলত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন।
- গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি পরিযায়ী শ্রমিক এবং কৃষকদের জন্য প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
- আজকের ঘোষণারও মুখ্য বিষয় হল: কৃষি। সেই সঙ্গে প্রাশসনিক সংস্কারের লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপও ঘোষণা করা হবে।
- খাদ্যশস্য মজুত করার জন্য ১ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। এই অর্থ দিয়ে কোল্ড স্টোর, সাপ্লাই চেইন পরিকাঠামো ইত্যাদি এই তৈরি করা হবে। কৃষি সমবায় বা সেই ধরনের সংগঠনের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হবে।
- প্রধানমন্ত্রী বারবারই বলেছেন, লোকালের জন্য ভোকাল হতে হবে। সে কথা মাথায় রেখেই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হচ্ছে। ২ লক্ষ ছোট খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ সংস্থা এর ফলে উপকৃত হবে।
- তবে কোনও একটি শিল্প সংস্থাকে আলাদা করে অর্থ দেওয়া হবে না। এ ধরনের শিল্প তালুককে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে।
- প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদা যোজনা খাতে ২০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ৫৫ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। আশা করা হচ্ছে এর ফলে মৎস্য সংক্রান্ত রফতানির অঙ্ক বেড়ে ১ লক্ষ কোটি টাকা হবে।
- প্রকল্প খাতে মৎস্যজীবীদের মাঝ ধরার নৌকো দেওয়া হবে, মৎস্য বন্দর গড়ে তোলা হবে। সেই সঙ্গে তাঁদের বিমার ব্যবস্থাও করা হবে। তা ছাড়া বছরের অনেকটা সময় প্রাকৃতিক কারণে মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে যেতে পারেন না। সেই সময়েও তাঁদের আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে।
- পশুপালনের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা হল পশুদের ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ। সেই কারণে বিপণনের ক্ষেত্রেও চাষীরা সমস্যা পড়ছেন। তাই ১৩ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা খরচ করে ৫৩ কোটি পশু অর্থাৎ গরু, বাছুর, ছাগল, ভেড়াকে ১০০ শতাংশ টিকা দেওয়া হবে। এতে দুধ উৎপাদন বাড়বে। রফতানি বাজারও অটুট থাকবে।
- ডেয়ারি শিল্পে পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য ১৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহ দেওয়া হবে। এমনকি এক্ষেত্রে আধুনিক শিল্প কারখানা স্থাপনেও উৎসাহ দেওয়া হবে। যে সব প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ মানের ডেয়ারি প্রোডাক্ট বিদেশে রফতানি করা যেতে পারে।
- ভেষজ চাষের জন্য চার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে। ২.২৫ লক্ষ হেক্টর জমিতে ভেষজ উদ্ভিদ চাষে উৎসাহ দেওয়া হবে।
- গঙ্গার দু’ধারে ভেষজ উদ্ভিদ উৎপাদনে জোর দেওয়া হবে। গঙ্গার দু’ধারে এরকম ৮০০ হেক্টর জমি চিহ্নিত করা হবে।
- মৌমাছি চাষে উৎসাহ দেওয়ার জন্য ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। এই পদক্ষেপ গ্রামে মহিলাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
- লকডাউনের জন্য কৃষি পণ্যের সাপ্লাই চেনে ক্ষতি হয়েছে। আলু, পেঁয়াজ, টমেটো চাষিদের ক্ষতি হয়েছে। কারণ প্রচুর কৃষিপণ্য পচে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় চাষীদের কৃষি পণ্যের পরিবহণের জন্য ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে। আর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি কোল্ড স্টোরেজে মজুত করার জন্য দেওয়া হবে। মোট ৫০০ কোটি টাকা এজন্য বরাদ্দ করা হয়েছে।
সংস্কারের লক্ষ্যে যা যা পদক্ষেপ হবে।
- অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইনে সংশোধন করা হবে। খাদ্যশস্য, ভোজ্য তেল, তৈলবীজ, পেঁয়াজ এবং আলুর মজুতের উপর কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। একমাত্র অতিশয় ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে এই সব পণ্যের মজুতে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।
- একই ভাবে কোনও খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেও মজুতে কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। যাতে তাদের উৎপাদনে কোনও বাধা না আসে।
কেন্দ্রীয় আইন প্রনয়ণ করা হবে, যাতে আন্তঃরাজ্য বাণিজ্যে কোনও অসুবিধা না থাকে। তাদের পণ্য ই-ট্রেডও করতে পারে। অন্য কোনও শিল্পে শিল্প সংস্থার উৎপাদিত পণ্য কোনও নির্দিষ্ট লাইসেন্সধারীকে বিক্রি করতে হয় না। একমাত্র কৃষকদের ক্ষেত্রেই এই নিয়ম থাকবে কেন? চাষিরা যেখানে দাম পাবে সেখানে পণ্য বিক্রি করবে।
চাষিরা যাতে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, রফতানিকরণ, এগ্রিগেটর, রিটেল বিক্রেতার সঙ্গে চুক্তি চাষ করতে পারে সে ব্যাপারে একটি আইনি পরিকাঠামো তৈরি করে দেবে সরকার। যাতে ফসলের গুণমান কী হবে, তার কী দাম চাষীরা পাবেন সে ব্যাপারে আগে থেকেই নির্ধারিত থাকবে।