আজ থেকে ৭০ শতাংশ দাম বাড়ল মদের! ভিড় ঠেকাতে ও আয় বাড়াতে ‘বিশেষ করোনা ফি’, ঘোষণা কেজরিওয়াল সরকারের

0
1944

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ বিশৃঙ্খলার ছবিটা স্পষ্ট ছিল গতকালই। যেন ঝাঁপ খোলারই অপেক্ষা ছিল। তার পরেই কার্যত ঝাঁপিয়ে পড়েন মদ্যপায়ী নাগরিকরা। এতদিন লকডাউনে যে নেশার জিনিস মেলেনি, তা সংগ্রহ করতে মানুষের বোপরোয়া আচরণ ছিল চোখে পড়ার মতো। কোথাও থিকথিকে ভিড়ে লাঠি চালাতে হল পুলিশকে, কোথাও বন্ধই করে দিতে হল মদের দোকানের ঝাঁপ। কোথাও আবার মানুষ রীতিমতো বাজি ফাটাতে লাগলেন মদ খাওয়ার আনন্দে। এই অবস্থায় মদের দাম বাড়িয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল দিল্লি সরকার। একলাফে ৭০ শতাংশ দাম বাড়ানো হল রাজধানীতে।

আজ, মঙ্গলবার থেকেই এই অতিরিক্ত ৭০ শতাংশ ‘স্পেশাল করোনা ফি’ বসানো হচ্ছে মদের দামে। এর ফলে মানুষের ভিড় একটু কমতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বাড়বে সরকারের রেভিনিউ। জানা গেছে, মদের এমআরপি-র উপরেই এই ফি বসানো হচ্ছে। অর্থাৎ যে মদের দাম ১০০০ টাকা বলে লেখা রয়েছে, সেটাই এবার বিক্রি হবে ১৭০০ টাকায়।

এমনিতেই করোনা আর লকডাউনের জেরে ব্যাপক ধাক্কা খেয়ে অর্থনীতি। এই অবস্থায় আবগারি দফতরের অতিরিক্ত রাজস্ব একটু হলেও জোয়ার আনতে পারে অর্থনীতিতে। তাই মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, সোমবার মদের দোকানগুলির অবস্থা দেখে রীতিমতো উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। মদ-সহ অন্যান্য দোকান খোলার ব্যাপারে অনেক শর্ত দিয়েছিল দিল্লি সরকার। কিন্তু মদের ক্ষেত্রে কোনও শর্তই মানতে চাননি ক্রেতারা। গায়ে গায়ে লেগে থাকা লাইন দেখা যায় এদিন। কেজরিওয়াল ঘোষণা করেন, নিয়ম না মানলে লকডাউনের ছাড় তুলে নিতে বাধ্য হবে দিল্লি সরকার।

সোমবার থেকেই ভারতে তৃতীয় দফার লকডাউন শুরু হয়েছে। এই সময়ে লকডাউনের মধ্যেই একাধিক ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া যেতে পারে বলে রাজ্যগুলিকে জানায় কেন্দ্র। তার মধ্যে রয়েছে মদের দোকানও। প্রায় ৪০ দিন পরে মদের দোকান খুলল। সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল সামাজিক দূরত্বের তোয়াক্কা না করে এক একটি দোকানে জড়ো হয়েছেন শয়ে শয়ে মানুষ। শুধু দিল্লি নয়, দেশের অনেক শহরেই দেখা গিয়েছে এই ছবি। বাদ নেই কলকতা-সহ বাংলার অন্যান্য শহরও।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক যে নির্দেশ দিয়েছে তাতে, , কনটেনমেন্ট জোনের বাইরে রেড, অরেঞ্জ ও গ্রিন জোনে সোমবার থেকে মদের দোকান খোলা যেতে পারে। তবে কোনও শপিং কমপ্লেক্স নয়, শুধুমাত্র এককভাবে (ওয়ান-স্ট্যান্ড) থাকা দোকানগুলোই খোলা যাবে। একই সঙ্গে বলা হয়েছিল সেখানে ক্রেতাদের লাইন দিতে হবে। দু’জন ক্রেতার মধ্যে কমপক্ষে দু’গজ বা ছ’ফুট দূরত্ব রাখতে হবে।

কিন্তু মদের দোকান খুলতেই দেখা গেল অবাক দৃশ্য। সংক্রমণের ভয় ভুলে, বিধিনিষেধের তোয়াক্কা না করে হুড়োহুড়ি করলেন ক্রেতারা। মদের দোকানের সামনে লম্বা লাইন সামলাতে গিয়ে নাভিশ্বাস অবস্থা হয় রাজধানীর পুলিশের। তাতেও সবটা সামলানো যায়নি। বেলা ১২টায় দোকান খোলার কথা ছিল। কিন্তু তার অনেক আগে থাকতেই শুরু হয় ভিড়। আর দোকান খোলার পরে শুরু হয় ঠেলাঠেলি। বেশ কয়েক জায়গায় কিছুক্ষণ পরেই মদের দোকান বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় প্রশাসন।

সোমবার গভীর রাতে দিল্লি সরকারের তরফে বিজ্ঞপ্তি জানিয়ে বলা হয়, মদের যা দাম, তার উপর ৭০ শতাংশ কর বসানো হবে। আজ মঙ্গলবার থেকেই তা কার্যকর হবে। এই করের নাম দেওয়া হয়েছে, ‘‌বিশেষ করোনা ফি।’‌ যেমন ১০০০ টাকার প্রি ট্যাক্স এমআরপি সহ একটি মদের বোতলের দাম এখন দিল্লিতে ১৭০০ টাকা হবে। সোমবার সকালে এই বিষয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন কেজরিওয়াল। তারপর রাতেই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়।


মঙ্গলবার থেকে দিল্লিতে মদের দোকান খোলা থাকবে সকাল ৯টা থেকে সন্ধে সাড়ে ৬টা পর্যন্ত। সোমবার লকডাউনের তৃতীয় পর্যায়ে বেশ কিছু ছাড় দিয়েছিল কেন্দ্র। তার মধ্যে মদের দোকান খোলা রাখার নির্দেশিকাও ছিল। সোমবার সকাল থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন মদের দোকানে ছিল লম্বা লাইন। বেশ কিছু মদের দোকানের সামনেও বিক্ষিপ্ত গন্ডগোলও হয়। তারপর থেকেই সতর্ক প্রশাসন। এবার সেই ভিড় কমাতে ও তার আর্থিক ফায়দা তুলতে মদের দামের সঙ্গে ‘‌করোনা ফি’‌ যোগ করল কেজরিওয়াল সরকার। 


গত রবিবার কেজরিওয়াল বলেছিলেন লকডাউনের জেরে রাজ্য সরকারের আয় কমেছে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের এপ্রিলে রাজ্য সরকারের যেখানে ৩৫০০ কোটি টাকা আয় হয়েছিল। সেখানে এবছরের এপ্রিলে আয় হয়েছে মাত্র ৩০০ কোটি টাকা। যার মূল কারণ লকডাউন। তাই সরকারের আয় বাড়াতে মদের বোতলের উপর ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত কর বাবদ ‘‌করোনা ফি’‌ বসানোর সিদ্ধান্ত নিল কেজরিওয়াল সরকার। যার ফলে সরকারের রাজস্বের পরিমাণ বাড়বে অনেকটাই।  

Previous articleYour Shot 📷 La vita appartiene a coloro che vivono, e coloro che vivono devono essere preparati per i cambiamenti.
Johann Wolfgang von Goethe
Next articleপুলিৎজার পেলেন ভারতীয় পাঁচ চিত্র-সাংবাদিক!তাঁদের তিন জন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে অবরুদ্ধ কাশ্মীরের ছবি তুলেছিলেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here