দেশের সময় ওয়েবডেস্ক : দেশে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২৭ হাজার। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের হিসেব বলেছিল, লকডাউন না হলে এই আক্রান্তের সংখ্যাই বেড়ে দাঁড়াত অন্তত ২ লাখে। মে মাসের ৩ তারিখের পরেও লকডাউন থাকবে কিনা সে বিষয়ে এখনও কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত সামনে আসেনি। সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের দিকে তাকিয়ে গোটা দেশ। তবে আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে দিন দিন বাড়ছে তাতে লকডাউনের পরবর্তী পর্যায়ে কী প্রভাব দেখা দিতে পারে সেই নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে জনমানসে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক আগেই জানিয়েছিল, মে মাসের মাঝামাঝি থেকে আক্রান্তের সংখ্যা একটা পর্যায়ে গিয়ে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছবে। তারপরে ফের সংখ্যা কমতে শুরু করবে।
শুক্রবারের সাংবাদিক বৈঠকে ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ডিরেক্টর ডক্টর সুজিত কুমার জানিয়েছিলেন, লকডাউনের সরাসরি প্রভাব পড়েছে ভারতে করোনা সংক্রমণের ডাবলিং রেট অর্থাৎ দ্বিগুণ হওয়ার সময়ে। ২১ মার্চ ভারতে কোভিড ১৯ ডাবলিং রেট ছিল ৩ দিন। তারপরে লকডাউনের ফলে তা ধীরে ধীরে বেড়ে ৮.৬ দিন হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে সে হার বেড়ে হয়েছে ১০ দিনের কাছাকাছি।
কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসের পর থেকে করোনা আক্রান্তের ‘ডাবলিং রেট’ অর্থাৎ দ্বিগুণ হওয়ার সময় কমবে। ফলে পজিটিভ কেসের সংখ্যা কমদিনেই দ্বিগুণের বেশি হবে। বর্তমানে যে হারে সংখ্যা বাড়ছে সেই অনুযায়ী হিসেব করলে আগামী ১৫ মে-র মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছতে পারে ৬৫ হাজারে। তখন ডাবলিং রেট দাঁড়াবে ১৫ দিনের কাছাকাছি।
১৫ মে-র পর থেকে আক্রান্তের সংখ্যা সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছবে। ডাবলিং রেট কমতে থাকবে, অর্থাৎ আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হতে আরও কম সময় লাগবে। কেন্দ্রের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ১৫ মে থেকে ৩১ মে ও ফের ১৫ জুন পর্যন্ত ডাবলিং রেট দাঁড়াবে ১২ দিনে। আক্রান্তের সংখ্যা এক ধাক্কায় পৌঁছবে ৩ লাখ ৯৫ হাজারে।
১৫ জুনের পর থেকে ডাবলিং রেট স্থির হবে ১০ দিনে। জুন, জুলাই ও অগস্ট মাসে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড করতে পারে। হিসেব বলছে, ১৫ অগস্টের মধ্যে করোনা পজিটিভ কেস ২ কোটির সীমা পেরোতে পারে। আক্রান্তের সংখ্যা হতে পারে ২ কোটি ৭৪ লক্ষ। সেই হিসেবে প্রতিদিন আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে এক লক্ষেরও বেশি।
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক আগেই জানিয়েছিল,এই মুহূর্তে ভারতে কোভিড ১৯ সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। তার কারণ অবশ্যই টেস্টিং। টেস্ট বেশি হচ্ছে বলে আক্রান্তের খোঁজও পাওয়া যাচ্ছে বেশি। বস্তুত, অন্যান্য দেশের সঙ্গে তুলনা করলে এখনও ভারতে আক্রান্তের বৃদ্ধির হার বেশি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছিলেন তখন ভারতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল মোটামুটি ৫০০। প্রতিদিন আক্রান্ত বাড়ছিল ২১.৬ শতাংশ হারে। সেটাই এখন কমে হয়েছে ৮.১ শতাংশ। এই হারেই যদি ভারতের আক্রান্তের বৃদ্ধির হার চলতে থাকে তবে আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে দেশে কোভিড-১৯ রোগীর সংখ্যা ৪০ হাজারের কাছাকাছি চলে যেতে পারে। মে মাসের মাঝামাঝি ৭০ হাজার ও অগস্টের মাঝে গিয়ে সেটাই দাঁড়াবে ২ কোটির বেশি। তবে করোনা প্রতিরেধে ভারতে বেশ কিছু রাজ্যের সাফল্য চোখে পড়ার মতো। আর তার জেরেই দেশের গড় আক্রান্ত বৃদ্ধির হার আগামী দিনে কমবে বলেই আশা করা হচ্ছে।
বস্তুত, ভারতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের হার এখন যা দেখা যাচ্ছে, তার উপর ভিত্তি করে লকডাউন পরবর্তী পরিস্থিতিতে কত মানুষ কোভিড পজিটিভ হতে পারেন তা অঙ্ক কষে বের করা হয়েছে। এ ধরনের অঙ্ক কষে রাখা হয়, সংক্রমণ মোকাবিলায় আগাম ব্যবস্থা নিয়ে রাখার জন্য। এমন নয় যে এটাই বাস্তব হতে চলেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত এটাই যদি বাস্তব হয়ে ওঠে তা হলে যেন সরকারের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি থাকে। এই হিসেব মিলবে কী মিলবে না, তা নির্ভর করবে লকডাউনের প্রভাব, লকডাউনের পরবর্তী পরিস্থিতি এবং আরও কিছু সুনির্দিষ্ট বিষয়ের উপর।