মৃত সন্তানকে বুকে আঁকড়ে ৪৮ কিলোমিটার পথ হাঁটলেন মা

0
1590

দেশের সময় ওয়েবডেস্ক: হাসপাতালের দোরে দোরে ঘুরেছিলেন কয়েক ঘণ্টা। অ্যাম্বুলেন্স নেই। পায়ে হেঁটেই এ হাসপাতাল থেকে ও হাসপাতাল। প্রবল জ্বরে কোলেই নেতিয়ে পড়েছিল ছোট্ট ছেলেটা। বাঁচাতে পারলেন না মা। ক্লান্ত শরীর আর চিকিৎসার অভাবে মায়ের কোলেই চোখ বুজল ছেলে। সন্তানের মৃতদেহ আঁকড়ে ৪৮ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরলেন সন্তানহারা মা।
সর্দি-কাশি থেকে জ্বর হয়েছিল ছেলের, বলেছেন বাবা গিরেজ কুমার। বিহারের শাহোপারের বাসিন্দা। গ্রামেরই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রথম নিয়ে গিয়েছিলেন ছেলেকে। তবে জ্বর কমেনি। দু’দিন পরে অবস্থা আরও খারাপ হয় ছেলের। গ্রামেরই একটি টেম্পো চালককে অনুরোধ করে জেহানাবাদের সদর হাসপাতালে পৌঁছেছিলেন। এর পরেই একের পর এক তিক্ত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় দম্পতিকে।
শিশুটির মা বলেছেন, হাসপাতালে ভর্তি নিতে চায়নি তাঁর ছেলেকে। আরও দু’টি হাসপাতালে প্রথমে রেফার করা হয়। সেই হাসপাতাল দুটির দূরত্বও ছিল অনেক। এদিকে সদর হাসপাতাল কোনও অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করেনি। ছেলেকে কোলে নিয়ে পায়ে হেঁটেই হাসপাতালের দরজায় দরজায় ঘুরতে হয় দু’জন। কোথাও ঠাঁই না মেলায় ফের ফিরে আসেন সদর হাসপাতালেই।
অভিযোগ, হাসপাতালকর্মীরা কোনও সহযোগিতা করেননি। উল্টে ডাক্তার তাঁদের পটনা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যেতে বলেন। জেহানাবাদ থেকে পটনার দূরত্ব প্রায় ৪৮ কিলোমিটার। শিশুটির মায়ের অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স দিতে সাফ মানা করে দেওয়া হয়। বলা হয় অ্যাম্বুলেন্সের সংখ্যা কম। শুধুমাত্র জরুরি অবস্থার জন্যই অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া যাবে।
“সদর হাসপাতাল থেকে ফের হাঁটা শুরু করি। ততক্ষণে ছেলেটাও নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছিল। একটা সময় দেখি ওর শ্বাস আর পড়ছে না, আমার কোলেই প্রাণ যায় ছেলেটার,” হাহাকার সন্তানহারা মায়ের। জানিয়েছেন, আরও কোনও অ্যাম্বুলেন্স বা গাড়ির জন্য মানুষের হাতেপায়ে ধরেননি। ছেলের দেহ বুকে আঁকড়েই ৪৮ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পটনায় পৌঁছন।
মৃত শিশুর দেহ কোলে চেপে এক মা কেঁদে চলেছেন এমন ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ভিডিও দেখে নড়েচড়ে বসেছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, সদর হাসপাতালের ওই ডাক্তার ও কয়েকজন হাসপাতাল কর্মীকে শোকজ করা হয়েছে।

জেহানাবাদের জেলাশাসক নবীন কুমার বলেছেন, লকডাউনের এই সময়ে রোগীদের জন্য দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়েছে সব হাসপাতালকেই। কীভাবে এমন ঘটল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Previous articleসম্পাদকীয়ঃপ্রদীপ জ্বালাবার পর যে প্রশ্নগুলো থাকে
Next articleদেশের সময়/Desher Samay

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here