দেবন্বিতা চক্রবর্তী ,বনগাঁ: কবি বলেছেন , ” In art , man reveals himself and not his object ” এই কথাটা প্রমান করেছে ডি.এল.এড এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী অনুশ্রী ঘোষ |শিক্ষা সূত্রে বনগাঁর বাইরে থাকলেও, চারুকলা মেলার সময় তাকে আসতে ই হয় বনগাঁয় ৷ শিল্পী জীবনে ৪ বছরের ও বেশী সময় ধরে বিভিন্ন ছবি প্রদর্শনীর জন্য প্রস্তুত করেচলেছে সে৷ এবার ছবির টানে হৃদ্যতাপূর্ন বনগাঁ চারুকলা মেলায় অংশগ্রহন করার জন্য ছুটে এসেছে সূদূর সোনার পুর থেকে ৷অনুশ্রীর বাবা পেশায় পুলিশ৷ চাকরি করার সুবাদে বদলি হয়ে বনগাঁ ছেড়ে নতূন জায়গায় চলে গেলেও ফের বনগাঁ শহরে বার বার ফিরে আসতে চায় সে তার শিল্পের সম্ভার নিয়ে ৷তার কথায় ইছামতীর স্রোতের মতো রং,তুলি আমাকে টানে৷ তাঁর ছবি দেখে দর্শকের পছন্দ হলেও টাকার মূল্যে শিল্প বিক্রি করতে চায় না সে ৷চারুকলা মেলাতে এবার বুদ্ধের ছবি এঁকে দিয়েছেন প্রদর্শনীর জন্য৷ অনেকেই বেশ মোটা টাকা দিয়ে কিনতে চেয়েছেন সেই ছবি৷ অনুশ্রীর সাফ কথা , একমাস ধরে নিখুঁত কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা তার ছবি বিক্রয় সে করবে না ,শিল্পী হয়েই দর্শকের মনে স্থান করেতে চায় সে ৷ ২১ বছরে পা দেওয়া বনগাঁ চারুকলা মেলায় নিজেদের বহুগুনের প্রদর্শনের সুযোগ পাওয়ায় খুশি অনুশ্রীর মতো আর ও অনেক চিত্রশিল্পী ৷ শিল্পী বিশ্বজীৎবৈদ্যের কথায় চিত্র শিল্পীদের হাত ধরে রং তুলি ও শিল্পীসত্বায় নতুন করে সেজে উঠুক বনগাঁ শহর , এটাই আমাদের বনগাঁ চারুকলা উৎসবের মুল উদ্যেশ্য ৷
ঐতিহ্য ও পরম্পরা কে পাথেয় করে প্রতি বছরের মতো এই বছরেও “চারুকলা” উৎসব উদ্যাপিত হল বনগাঁ তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবের মাঠে৷। যা এবছর পদার্পণ করলো ২১তম বর্ষে। চিত্র, ভাস্কর্য ও হস্তশিল্প প্রদর্শনীর মেলবন্ধনে যা অনন্য মাত্রা যোগ করেছে মানুষের মনে। “ভালবাসি ছবি, একসাথে পথ হাটি” এই ভাবনাকে সাথী করেই গত ২৫শে ডিসেম্বর মঙ্গলবার বনগাঁ ত্রিকোণ পার্ক থেকে তালতলা অ্যাথলেটিক্স ক্লাব ময়দান পর্যন্ত শেষ হয়েছে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিশিষ্ঠ ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে শুভ সূচনা হয় অনুষ্ঠানের। বৃহস্পতিবার বনগাঁ চারুকলা উৎসব-এর শুভ উদ্বোধন করেন শিল্পী শ্রী রতন আচার্য। পরবর্তীতে মমতা ভট্টাচার্য শারদ চারুকলা সন্মাননা প্রদান। এই বছর উক্ত সন্মানে ভূষিত হন শিল্পী বীথিকা বোস। এছাড়াও সন্ধা থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে উৎসবমুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গন। শুক্রবার সকাল ন’টায় অনুষ্ঠিত হয় বসে আঁক প্রতিযোগিতা। দুপুর দু’টোয় মৃৎ কর্মশালার পাশাপাশি নবীন শিল্পীদের কর্মশালা অনুষ্ঠানকে নতুন মাত্রায় যুক্ত করেছে বলেই মত আয়োজকদের। অন্যদিকে অভিজ্ঞ শিল্পীদের কর্মশালা ও তথ্যচিত্র প্রদর্শন উপভোগ করতে যেন মুখীয়ে ছিলেন বনগাঁবাসী। এরপর ২৭তারিখ রবিবার বিকেল চার’টে শিল্প বিষয়ক আলোচনার আয়োজন করা হয় উৎসব প্রাঙ্গনে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকেন শ্রী তাপস বিশ্বাস। সন্ধাবেলা চারুকলা উৎসব ২০১৮ প্রদর্শনী বিভাগে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। সবশেষে ৩০শে ডিসেম্বর রবিবার দুপুরে মহিলাদের জন্য আলপনা প্রতিযোগিতা ও সন্ধায় পুরস্কার বিতরণী। রাত্রী আট’টায় প্রদীপ প্রজ্জলনের মধ্যে দিয়ে সমাপ্তি ঘটবে অনুষ্ঠানের। উপস্থিত থাকবেন বনগাঁ পৌরসভা-র পৌরপ্রধান শঙ্কর আঢ্য। বনগাঁ উত্তর বিধানসভা-র বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস ও প্রাক্তন বিধায়ক গোপাল শেঠ। অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে চারুকলা পর্ষদের সম্পাদক শঙ্কর মন্ডল আমাদের জানালেন, “এই বছর চারুকলা উৎসব ২১বছরে পদার্পণ করলেও আদতে তা তিরিশ বছরের পুরনো”। “মাঝে কয়েক বছর বিশেষ কারনে এই মেলা বন্ধ থাকলেও চারুকলা উৎসবের পরিচালনায় পুনরায় তা শুরু করা সম্ভব হয়েছে”। “শুধু প্রদর্শনী নয় তার সাথে বহু ভাল মানের ছবি ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতা মূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে এবারের উৎসব”।