দেশের সময় ওয়েব ডেস্কঃ ভারতীয় অর্থনীতির চলতি মন্দার কারণ হিসেবে যে দুটি বিষয়কে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা, তা হল জিএসটি এবং নোটবন্দি। জি এস টি রিটার্ন করার জটিল পদ্ধতি অনেক সমস্যা ডেকে আনছে বলে অনেকেরই মত। আগামী এপ্রিল মাস থেকে জিএসটি রিটার্নের সহজ পদ্ধতি চালু করা হবে বলে আশ্বাস দিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারাামন।
জিএসটি প্রসঙ্গে সীতারামন জানান যে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকেই সহজে জিএসটি রিটার্ন সম্ভব হবে। জিএসটি কিছু বাধার মুখে পড়লেও এর ফলে ৬০ লক্ষ নতুন করদাতা যুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। জিএসটি-র মাধ্যমে মোট ৪০ কোটি রিটার্ন জমা পড়েছে এবং ৮০০ কোটি ইনভয়েস আপলোড হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
জিএসটি চালু হওয়ায় দেশ থেকে ইন্সপেক্টর রাজ মুছে গিয়েছে বলেও দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী। জিএসটি পরিবহণ ক্ষেত্রে প্রচুর উপকার হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। জিএসটি চালুর ফলে বর্তমানে গড়ে প্রতিটি পরিবার মাসিক খরচায় চার শতাংশ সঞ্চয় হয় বলেও দাবি করেছেন সীতারামন।
এক লক্ষ টাকা থেকে ব্যাঙ্ক গ্যারান্টি বাড়ল পাঁচ লক্ষ:
ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের জন্য সুখবর শোনালেন বাজেটে নির্মলা সীতারামন। প্রত্যেক গ্রাহকের জমা খাতে বিমা এক লক্ষ টাকা থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লক্ষ টাকা করবে ডেপোজিট ইন্স্যুর্যান্ত অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন। ব্যাঙ্ক বন্ধ হলে ওই বিমার টাকা পাবেন গ্রাহকরা। শনিবার বাজেটে ঘোষণা করলেন নির্মলা সীতারামন।
তিনি বললেন, ব্যাঙ্কিং পরিষেবার উন্নয়নে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। প্রয়োজন স্বচ্ছতার। পেনশন ট্রাস্ট নিয়ন্ত্রণে স্বচ্ছতা আনতে সরকার ছাড়া কর্মচারীদেরও সেই অধিকার দেওয়া হল। এমএসএমই–র জন্য অ্যাপ বেসড্ ইনভয়েস ফিনান্সিং করা হবে। এমএসএমই–র ঋণদারদের জন্য নতুন প্রকল্প। আইডিবিআই এবং এলআইসি–তে নিজের অংশীদারিত্ব বিক্রি করবে সরকার।
ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে ৩,৫০০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করল সরকার। ২০২০–২১ সালে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ১০ শতাংশ। প্রবাসীরাও সরকারি বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ করতে পারবেন। ৩.৩ শতাংশ জিডিপির বদলে আর্থিক ঘাটতির হার ৩.৮ শতাংশ ধরা হয়েছে। ২০২১ অর্থবর্ষে পর্যালোচনার পর ব্যয় খাতে ২৬.৯৯ লক্ষ কোটি ধরা হয়েছে। ঘোষণা করলেন নির্মলা।
পরিবহনে ১.৭ লক্ষ কোটি, পর্যটনে ২৫০০ কোটি বরাদ্দ
পরিবহন এবং পর্যটনে এবার জোর দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। পরিবহন ক্ষেত্রে ১.৭ লক্ষ কোটি টাকা বরাদ্দ করলেন তিনি। নির্মলার ঘোষণা, উড়ান প্রকল্পে ২০২৪ সালের মধ্যে অতিরিক্ত ১০০টি বিমানবন্দর তৈরি করা হবে। মুম্বই–আহমেদাবাদ দ্রুত গতির ট্রেন চালু করা হবে।
সৌরশক্তিতে ট্রেন চালানোর উদ্যোগ নিয়েছে কেন্দ্র। সেজন্য রেললাইন বরাবর রেলের যে সব জমি আছে তার উপর সৌর প্যানেল বসাবে রেল। তেজসের মতো ট্রেন তৈরি হবে ভারতেই। আরও পর্যটন কেন্দ্রিক শহরকে ওই ধরনের ট্রেনের মাধ্যমে জোড়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পিপিপি মডেলে চারটি রেল স্টেশন তৈরি করা হবে এবং ১১৫০ ট্রেন চালানো হবে। পিপিপি মডেলেই কিষাণ রেল তৈরি করবে রেল মন্ত্রক।
কৃষিজাত বিনাশশীল পণ্য পরিবহনে চলবে কিষাণ রেল। ৬০০০ কিলোমিটার হাইওয়ে তৈরি করা হবে। ২০২৩–র মধ্যে দিল্লি–মুম্বই এক্সপ্রেসওয়ের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।পর্যটনে বরাদ্দ করলেন ২৫০০ কোটি টাকা। এজন্য রাখিগড়ি, হস্তিনাপুর, শিবসাগর, ঢোলাবীরা এবং আদিচানাল্লুর, এই পাঁচটি স্থানকে দেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসেবে উন্নত করা হবে। পিপিপি মডেলে পাঁচটি স্মার্ট সিটি তৈরি করা হবে।
তপশিলি খাতে কেন্দ্রের বরাদ্দ ৮৫ হাজার কোটি
৮৫,০০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হল তপশিলি জাতি–উপজাতি ও অনগ্রসরদের জন্য। একইসঙ্গে আদিবাসীদের কল্যাণের জন্য রাখা হল ৫৩,০০০ কোটি টাকা। এই পদক্ষেপ কি অত্যন্ত সচেতন একটি পদক্ষেপ নয়? যে সরকারের কাছে জাতপাতের ভেদাভেদ এত গুরুত্বপূর্ণ, তারা ২০২০–র বাজেটে হঠাৎ এই উদারতা দেখাচ্ছে! ভাবার বিষয়।
যে সরকারের আমলে রোহিত ভেমুলা আত্মহত্যা করতে বাধ্য হলেন, যে সরকারের আমলে নিজের জাতের কারণে তিনি পড়াশোনা করতে পারলেন না, সেই মোদি সরকার তার দ্বিতীয় পর্যায়ে বাজেট পেশের সময়ে অত্যাচারিত জাতের জন্য বরাদ্দ করল ৮৫,০০০ কোটি টাকা।
শনিবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন দ্বিতীয় মোদি সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট পেশ করলেন সংসদে। জানালেন, ‘তপশিলি জাতি ও আদিবাসীদের ত্রাণ ও উন্নয়নের কথা মাথায় রেখে ২০২১ সালের জন্য ৮৫,০০০ কোটি ও ৫৩,০০০ কোটি টাকার একটি প্রস্তাব রাখছি আমরা।’
আশা করা যায়, দেশের তপশিলি জাতি–উপজাতি, অনগ্রসর ও আদিবাসীদের উন্নতির জন্যেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া। নিজেদের ভোটব্যাঙ্কের জন্য নয়।