দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ নাগরিকত্ব আইনের ও এনআরসির প্রতিবাদে এমনিতেই জেলায় জেলায় বিক্ষোভ ও হিংসার ঘটনা বিক্ষিপ্ত ভাবে ঘটছে। তার জেরে ট্রেন চলাচলে যে ভাবে বাধা পড়েছে তাতে জনজীবনে ভাল রকম প্রভাব পড়েছে। এরই মধ্যে সোমবার সপ্তাহের প্রথম দিনই কলকাতা যানজটে লণ্ডভণ্ড হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছিলেন মিছিলে হাঁটবেন তিনি। সোমবার দুপুর ১টায় বাবাসাহেব ভীমরাও আম্বেদকরের মূর্তিতে জমায়েত হয়ে গান্ধীমূর্তির পাদদেশ হয়ে মিছিল যাবে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি পর্যন্ত। সন্দেহ নেই এই মিছিলকে সামনে রেখে নিজেদের শক্তি দেখাতে চাইবে বাংলার শাসকদল। তাই অনেকেরই আশঙ্কা, মধ্য ও উত্তর কলকাতার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল সম্পূর্ণ স্তব্ধ হয়ে যেতে পারে সোমবার দুপুরের পর। সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, জওহরলাল নেহরু রোড, লেনিন সরণি, এসএন ব্যানার্জি রোডের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনেই থমকে যেতে পারে।
ওদিকে আবার রাজারহাটে রাজ্য সরকার বিদেশি বন্দিদের জন্য যে ডিটেনশন ক্যাম্প করছে তা ঘেরাওয়ের ডাক দিয়েছে সিপিএম। সেই কর্মসূচি ঘিরেও রাজারহাটের তথ্যপ্রযুক্তি পাড়ায় প্রভাব পড়তে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা।
শুধু তাই নয়, দিল্লির জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বিক্ষোভে পুলিশের লাঠি চালানোর ঘটনা নিয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউটাউন ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীরা রবিবার মধ্যরাত থেকে পথে নেমে পড়েছেন। তারা আজ সোমবারও অচল করে দিতে পারেন পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং। সেই সঙ্গে বাম ছাত্র সংগঠনগুলি আবার ডাক দিয়েছে কলকাতার মোড়ে মোড়ে নাগরিকত্ব বিল পোড়ানোর কর্মসূচি করবে। সব মিলিয়ে সোমবার দুপুর থেকে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে লণ্ডভণ্ড হতে পারে শহরের একাধিক জায়গা।
সোমবারই শেষ হচ্ছে না কর্মসূচি। মঙ্গলবার তৃণমূলের মিছিল রয়েছে যাদবপুর এইট বি বাসস্ট্যান্ড থেকে ভবানীপুরের যদুবাবুর বাজার। বুধবার আবার শাসকদল মিছিলের ডাক দিয়েছে হাওড়া ময়দান থেকে ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। এর মধ্যে আবার হুঁশিয়ারির সুরে বিজেপি বলেছে, জেলায় জেলায় অশান্তি না থামলে রাস্তায় নামবে তারাও। সব মিলিয়ে গোটা সপ্তাহটাই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সরগরম থাকবে মহানগর। থাকছে নিত্যযাত্রীদের দুর্ভোগের আশঙ্কাও। দুর্ভোগের সিঁদুরে মেঘ দেখা যাচ্ছে সপ্তাহের শুরু থেকেই।
বস্তুত গত সপ্তাহের শেষ কাজের দিনটাও মোটেই ভাল যায়নি কলকাতার। শুক্রবার দুপুরের পর থেকে লণ্ডভণ্ড অবস্থা ছিল ধর্মতলা চত্বর থেকে পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট ক্রসিং। সেই সঙ্গে উলুবেড়িয়া ও কোনা এক্সপ্রেসওয়ের উপর বিক্ষোভ, হিংসায় তীব্র দুর্ভোগে পড়েন বহু যাত্রী। ওদিকে ট্রেন চলাচল ব্যহত হওয়ায় উত্তরবঙ্গ প্রায় বিচ্ছিন্ন।
এই পরিস্থিতি রবিবার সন্ধ্যায় পুলিশ ও প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের নিয়ে রবিবার রাতে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি আগেও বলেছেন, গণতান্ত্রিক ভাবে প্রতিবাদ জানানোর অধিকার সবার রয়েছে। কিন্তু তা যেন হিংসার আকার না নেয়। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ভাঙচুর ও হিংসার ঘটনা পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও যানজটের আশঙ্কা থাকছেই। কারণ, শাসক দলই যখন রাস্তায় নামছে, তখন বোধগম্য পরিস্থিতি কী হতে পারে!
রবিবার গোটা বাংলা জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় তৃণমূলের পক্ষ থেকে নেতা–কর্মীরা এনআরসি ও ক্যাবের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিল করেন।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে রবিবার বিকালে NRC ও CAB বাতিলের জন্য উত্তর ২৪পরগনার হাবড়া বিধানসভা তৃণমূল কংগ্রেসের আয়োজনে এক প্রতিবাদ মিছিলে উপস্থিতছিলেন হাবড়ার বিধায়ক তথা রাজ্যের খাদ্য ও সরবরাহ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক।
আইএনটিটিইউসি বনগাঁ শাখার উদ্যোগে বনগাঁয় এনআরসি এবং ক্যাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল সংঘটিত হলো। এদিন বনগাঁ স্টেশনের নেতাজি মোড় থেকে শুরু হয় এই মিছিল। এরপর স্টেশন রোড, যশোর রোড, কোর্ট রোড, স্কুল রোড হয়ে মিছিল শেষ হয় ত্রিকোণ পার্ক এর রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে।
এই মিছিলে উপস্থিত ছিলেন জেলা তৃণমূলের কার্যকরী সভাপতি তথা কর্মাধ্যক্ষ রতন ঘোষ, শ্রমিক নেতা নারায়ন ঘোষ, বিশ্বজিৎ রায় সহ অন্যান্যরা।
দমদমে ব্রাত্য বসু, লেক টাউনে সুজিত বসু, বিরাটিতে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে মিছিল হয়। হুগলিতেও এলাকার বিধায়করা মিছিল বের করেন।
মিছিলে ব্রাত্য বলেন, ‘বিজেপি বাংলাকে সাম্প্রদায়িকতার আঁতুড়ঘর করতে চাইছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করছি। আমাদের একটাই প্রশ্ন, বৈধ নাগরিকদের কেন আবার নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে? আমাদের প্রতিবাদ এখানেই।’ সুজিত বসু বলেন, ‘আমাদের নেত্রী প্রথম থেকেই এনআরসি ও ক্যাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছেন। সোমবার তিনি মিছিল ডেকেছেন।
আমরা সকলেই মিছিলে যাব।’ চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, ‘বিরাটিতে এদিনের মিছিলে বহু মহিলা এসেছিলেন। ঠিক হয়েছে, সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত এই তিনদিন নেত্রী যখন মিছিল করবেন, পাশাপাশি সব জেলায় মিছিল হবে।’ বেহালা পর্ণশ্রীতে মেয়র ফিরহাদ হাকিম সভা করেন।
মঙ্গলবার মমতা মিছিল করবেন যাদবপুরের ৮বি বাসস্ট্যান্ড থেকে। মিছিল শেষ হবে ভবানীপুরে যদুবাবুর বাজারের সামনে। মুখ্যমন্ত্রী দলমত নির্বিশেষে সকলকে এই পদযাত্রায় শামিল হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন। বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর মিছিল হাওড়া ময়দান থেকে। যাবে ধর্মতলার ডোরিনা ক্রসিং পর্যন্ত। মিছিল শুরু দুপুর ১টায়। হাওড়ার সব বিধায়ক, কাউন্সিলর ও দলের সর্বস্তরের নেতা–কর্মীরা থাকবেন। ধর্মতলায় থাকবেন সাংসদ, বিধায়ক ও কাউন্সিলররা।
বাংলার বিদ্বজ্জনেরা তিনদিনই মিছিলে হাঁটবেন বলে জানা গেছে। মিছিলের সময় সাধারণ মানুষের অসুবিধে যাতে না হয়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা হবে।
এদিকে, রবিবার ১৫ মিনিটের জন্য রাজ্য ছুঁয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। দুমকায় তিনি সভা করতে যান অন্ডাল হয়ে। সেখানে বিজেপি নেতা বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে দেখা করেন।
পরে জানান, তাঁরা প্রধানমন্ত্রীকে রাজ্যের বর্তমান পরিস্থিতি জানিয়েছেন। এদিন বিজেপি–র রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানান, ২৩ ডিসেম্বর কলকাতায় মহামিছিল হবে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, এনআরসি এবং ক্যাব বাংলায় হবে না৷