দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দিল্লির আনাজ মান্ডির জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে ১১ জনকে জীবন্ত উদ্ধার করে এখন সবার নজরে দমকলকর্মী রাজেশ শুক্লা। ভোর তখন ৫টা। চারতলা বাড়ির বিভিন্ন তলায় গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন শ্রমিকেরা। এরই মধ্যে দোতলার একটি ঘর থেকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আগুন।
ঘুমন্তরা সতর্ক হওয়ার আগেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে বাড়ির একাধিক তলায়। ধোঁয়ায় ভরে যায় চারপাশ। প্রাণ বাঁচানোর জন্য হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন ভেতরে আটকে পড়া লোকজন।
ভোর ঠিক ৫টা ২২ মিনিটে ফোন যায় দমকলের দপ্তরে। দিল্লির নানা প্রান্ত থেকে ৩০টি দমকলের ইঞ্জিন দ্রুত হাজির হয় ঘটনাস্থলে। একদল দমকলকর্মী ঝাঁপিয়ে পড়েন আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজে। বাড়ির ভেতর থেকে তখন ভেসে আসছে অগ্নিদগ্ধদের আর্তনাদ। অনেকেই আর্তি জানাচ্ছেন অগ্নিকুণ্ড থেকে তাঁদের বের করে আনার জন্য।
আর্তনাদ শুনে স্থির থাকতে না পেরে জ্বলন্ত বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে আগে ঢুকে পড়েন দমকলকর্মী রাজেশ। জীবন বিপন্ন করে একের পর এক ১১ জনকে জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে উদ্ধার করেন তিনি। এভাবে জীবন বাজি রেখে কাজ করতে গিয়ে পায়ে রীতিমতো আঘাত লাগে তাঁর। তখন আর পেরে উঠছিলেন না। শেষে রাজেশকে ভর্তি করতে হয় এলএনজেপি হাসপাতালে।
Fireman Rajesh Shukla is a real hero. He was the first fireman to entered the fire spot and he saved around 11 lives. He did his job till the end despite of his bone injuries. Salute to this brave hero. pic.twitter.com/5aebB2XLUd
— Satyendar Jain (@SatyendarJain) December 8, 2019
খবর পেয়ে হাসপাতালে গিয়ে রাজেশের সঙ্গে দেখা করেন দিল্লির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন। কথা বলেন ওই দমকলকর্মীর সঙ্গে। পরে মন্ত্রী টুইট করেন, ‘দমকলকর্মী রাজেশ শুক্লা একজন সত্যিকারের নায়ক। দমকলকর্মীদের মধ্যে জীবন বিপন্ন করে তিনিই প্রথম ওই বাড়িতে ঢোকেন এবং ১১টি মূল্যবান প্রাণ রক্ষা করেন। তাঁর এই সাহসকিতাকে আমরা সেলাম জানাচ্ছি’।
তবে একা রাজেশ নন। রবিবার ভোরে অগ্নিকুণ্ডে আটকে পড়া বিপন্নদের উদ্ধারে দক্ষতা প্রমাণ করে দিল্লিবাসীদের রীতিমতো চমকে দিয়েছেন দমকলকর্মীরা। এদিন একাধিক দমকলকর্মী আগুন ও ধোঁয়া উপেক্ষা করে জ্বলন্ত ওই বাড়ির ভেতর ঢুকে বিভিন্ন তলা থেকে কাঁধে করে বয়ে নিয়ে এসেছেন অনেক বাসিন্দাকে।
তাঁদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ রাজধানীর মানুষ। আনাজ মান্ডির ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের স্মৃতি মুছে ফেলতে অনেকদিন সময় লাগবে দিল্লিবাসীর। তবে একইসঙ্গে উজ্জ্বল স্মৃতি হিসাবে থেকে যাবে রাজেশ শুক্লা–সহ অন্যান্য দমকলকর্মীর অনন্য সাহসিকতার কাহিনি।
দমকল সূত্রের খবর, অগ্নি-নিরাপত্তা ছিলই না কারখানায়। তার ফলেই এত বড় আগুনের মুখোমুখি হতে হল। ইতিমধ্যেই ওই বিল্ডিংয়ের দুই মালিক ইমরান ও রেহানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে, কিন্তু তাঁরা আপাতত ফেরার।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মৃতদের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ইথিমধ্যেই। বিহারের যেসব শ্রমিক মৃত, তাঁদের পরিবারকে অর্থ সাহায্য করবে বিহার সরকারও। পাশাপাশি, কী করে এমন দুর্ঘটনা ঘটল, সে বিষয়ে তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে প্রশাসনের তরফে।