রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয় সস্ত্রীক রাজ্যপাল!

0
794

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির কালীপুজোয়, সস্ত্রীক রাজ্যপাল মিশে গেলেন সেই উদযাপনে , সাংবিধানিক গণতন্ত্রে এর থেকে বড় সৌজন্যের ছবি আর কী হতে পারে!

এই নিমন্ত্রণ অবশ্য রাজভবনের চেয়ে নেওয়া। তাঁর বাড়ির কালীপুজোয় যেন নিমন্ত্রণ পান সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে একরকম আবদারই করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। ভ্রাতৃদ্বিতীয়ায় ফোঁটাও নিতে চেয়েছিলেন দিদির কাছে। ভাইফোঁটায় নেমন্তন্ন অবশ্য পাননি তিনি। তাতে খেদ নেই। কালীপুজোর নিমন্ত্রণ পেয়েই রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় দিদির বাড়িতে সস্ত্রীক পৌঁছে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল।

কালীপুজোর সন্ধ্যায় দিদির বাড়ি যেমন হয়। জমজমাট। দিদির যেন দশ হাত থাকলে ভাল হতো। নিজেই ভোগ রান্না করছেন, নিজেই পুজোর জোগাড় করছেন। কখনও আবার অন্য কাজের তদারকি করছেন। ওদিকে বাইরের উঠোনে অতিথি-অভ্যাগতদের ভিড়। তাঁদের আপ্যায়ন করা, নাড়ুটা, সন্দেশটা খেয়েছেন কিনা খোঁজ নেওয়া। অথচ সকাল থেকে কিন্তু তাঁর নিজের উপোস!

এমন পরিস্থিতিতে রবিবার সন্ধ্যায় রাজ্যপাল পৌঁছতেই দিদি নিজে এগিয়ে এসে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান। কালী মায়ের প্রতিমার সামনে নিয়ে যান। তার পর তাঁর নিজের ঘরে রাজ্যপালকে নিয়ে যান মুখ্যমন্ত্রী। কারণ, পুজো হয় উঠোনে।রাজ্যপালকে তো আর উঠোন থেকে বিদায় দেওয়া যায় না। তাই সৌজন্য দেখিয়েই সম্ভবত ঘরে নিয়ে যান তাঁকে। রাজ্যপালের পাশে মুখ্যমন্ত্রী বসে গল্পও করেন বেশ কিছুক্ষণ। হয়তো বোঝাচ্ছিলেন বাড়ির কালীপুজো সম্পর্কে। কবে থেকে শুরু এই পুজো, কী বা তার বৈশিষ্ট্য।

এর মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে এসে পৌঁছন যুব তৃণমূল সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যপালের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করেন তিনি। পরে দলের মহা চিব তথা শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বলেন রাজ্যপালকে সঙ্গ দিতে। দেখা যায়, উপস্থিত বাকি অতিথিদের উদ্দেশে কখনও এক হাত, কখনও বা দু’হাত নেড়ে তার পর চেয়ারে গিয়ে বসেন ধনকড়।

পার্থবাবুর সঙ্গে জগদীপ ধনকড়ের বাগযুদ্ধের বহর সাম্প্রতিককালে বাংলার রাজনীতিতে চর্চার বিষয় হয়ে উঠেছে। বাংলায় আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতি, বাকস্বাধীনতা, সাংবিধানিক পরিবেশ নিয়ে ইদানীং কালে রাজ্যপাল যতবার সমালোচনা করেছেন, দিদি পার্থবাবুকেই ঠেলে দিয়েছেন প্রতিক্রিয়া দিতে। তাতে শঠে শাঠ্যং হয়েছে। বেশ জবরই হয়েছে। তা নিয়ে আবার রাজ্যপাল প্রকাশ্যে অসন্তোষ জানাতেও ছাড়েননি।

সে সব বিষয় যথাস্থানে রেখেই এ দিন যেন দিদির বাড়িতে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। পার্থবাবুকে দেখেই তিনি আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলেন। অচেনা কারও সঙ্গে দেখা হলেও জগদীপ ধনকড় একাই তাঁর সঙ্গে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতে পারেন। তিনি এতটাই মিশুকে। পার্থবাবুর সঙ্গেও এ দিন দৃশ্যত খোশগল্প জুড়ে দেন তিনি।

পার্থবাবু উঠে যেতে রাজ্যপালের পাশে গিয়ে কখনও বসেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, কখনও বা মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা, কখনও তৃণমূলের শিক্ষা সেলের নেতা ওমপ্রকাশ মিশ্র।

কিন্তু দীপাবলির সন্ধ্যায় দিদির বাড়িতে এই মহানাটকীয় ঘটনা এখানেই শেষ হয়নি। একসময়ে দেখা যায়, দলের নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষ যাঁরা এসেছেন তাঁদের সঙ্গে দেখা করে হাত মেলাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যপাল তা দেখেই উঠে চলে যান মুখ্যমন্ত্রীর পাশে। দিদিকে তিনি কী বলেন তা বোঝা যায়নি। তবে দেখা যায়, এর পরে তাঁদের সঙ্গে হাত মেলাতে শুরু করেন রাজ্যপালও।

পরে বেরিয়ে যাওয়ার সময় রাজ্যপাল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে কালীপুজোয় উপস্থিত থাকতে পেরে আমি খুবই খুশি। অসাধারণ অভিজ্ঞতা হল।”

রবি-সন্ধ্যার এই ছবিতে রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান ও প্রশাসনিক প্রধানের মধ্যে যে বন্ধুত্বের সম্পর্ক দেখা গেল, তা এক কথায় অনন্য ও বিরল। গত দু’দশকে অন্তত এ রাজ্যে এহেন ছবি দেখা যায়নি। বাম জমানার মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে তৎকালীন রাজ্যপাল গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর বন্ধু সম্পর্ক থাকলেও এমন নাটকীয়তা দেখা যায়নি।

তবে এমন একটা সুন্দর সন্ধ্যার পরেও তৃণমূল কিন্তু সন্দিহান। এদিন দিদির বাড়িতে রাজ্যপালকে দেখার পরেও তাঁরা ঘরোয়া আলোচনায় বলছেন, এর মানে এই নয় যে রাজ্যপাল সরকারের সমালোচনা করা থামিয়ে দেবেন। বরং হতে পারে উনি কৌশলমাফিকই এটা করেছেন।

রাজ্যপাল হয়তো দেখাতে চাইছেন, ব্যক্তিগত পরিসরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর কোনও বৈরিতা নেই। তাঁর সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতেই তিনি চান। কিন্তু সাংবিধানিক প্রশ্নে তিনি আপস করবেন না।

Previous articleশক্তির আরাধনায় মেতে উঠেছে সীমান্ত শহর বনগাঁঃ
Next articleমার্কিন হানায় কুকুরের মতো মরেছে আইসিস চিফ – বাগদাদী! বললেন ট্রাম্প

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here