দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ চুক্তির চার বছরের মাথায় প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমান পেল ভারত। ২০১৫ সালে ফ্রান্সের সংস্থা দাসো এভিয়েশনের সঙ্গে শুধুমাত্র ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার চুক্তি করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। আজ সেই চুক্তি অনুযায়ী প্রথম বিমানটি ভারতের হাতে এল। জানুন এই বিমান সম্পর্কে কিছু তথ্য–
১। রাফেল যুদ্ধবিমান ভারতের মাটিতে থেকেও পাকিস্তানের ১০০ কিলোমিটারের মধ্যে থাকা অনেক অংশকেই ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হবে।
২। বায়ন্ড ভিজুয়াল রেঞ্জ (বিভিআর) অর্থাৎ দেখা না দেওয়া মিটিয়োর মিসাইল জেটকেও রাফেল টেক্কা দেবে। ২১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা গতিবেগে চলা রাফেলের টানা ওড়ার ক্ষমতা ১৫০০ কিলোমিটার।
৩। বিভিআর মিসাইলের রেঞ্জ ১০০ কিলোমিটার হওয়ার দরুণ ভারতীয় বিমানসেনার ক্ষমতা কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
৪। রাফেল আকাশ থেকে আকাশ এবং ভূমি থেকে ভূমি- দুই ক্ষেত্রেই একই রকম ভাবে যুদ্ধ করতে পারে। এ ছাড়া এতে স্কালপ মিসাইল এবং ক্রুজ মিসাইল বহনক্ষমতাও আছে।
৫। পাকিস্তানের কাছে এখন পর্যন্ত ৮০ কিলোমিটার রেঞ্জের বিভিআর আছে। কারগিল যুদ্ধের সময় পাকিস্তান এই বিমান কিনেছিল। সেই সময় ভারত ৫০ কিলোমিটার রেঞ্জের বিভিআর ব্যবহার করেছিল।
দশমীর দিনে প্রথম রাফাল পেয়েছে ভারত। ফ্রান্সে গিয়ে ককপিটে বসেছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। তার আগে হয়েছে শস্ত্র পুজো। রাফাল পেয়ে রাজনাথ বলেছেন, ভারতীয় বায়ুসেনার ইতিহাসে এটা ঐতিহাসিক দিন। কিন্তু এই অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমানকে যে শুধুমাত্র প্রতিরক্ষার কাজেই ব্যবহার করা হবে তা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন রাজনাথ।
রাফালের ককপিটে চড়ে উড়ানের পরে নেমে এসে রাজনাথ বলেন, ভারতীয় বায়ুসেনা এই বিমান ব্যবহার করবে দেশের প্রতিরক্ষার কাজে। অন্য দেশে আক্রমণ করার কোনও উদ্দেশ্য আমাদের নেই। তবে কেউ হামলা চালালে ছেড়ে দেওয়া হবে না। জবাব দেবে রাফাল।
অক্টোবরেই চুক্তিমাফিক প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমান ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হবে বলে ঘোষণা করেছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁ। অবশেষে বিস্তর বিতর্ক পিছনে ফেলে ভারতের হাতে এল রাফাল যুদ্ধবিমান। নতুন মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্র্যাফ্ট রাফালকে বেছে নেওয়ার পরে ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে ফ্রান্সের সরকারের সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল ভারত। মোট ৩৬টি রাফাল কেনার বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। ফ্রান্সের রাফাল নির্মাতা সংস্থা ‘দাসো অ্যাভিয়েশন’ জানিয়েছে, মোট ৫৯ হাজার কোটি টাকা দামের ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমানের মধ্যে প্রথম চারটি ভারতে পৌঁছবে আগামী বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের মে মাসে।
প্রথম রাফাল হাতে পেয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, “আমি খুব খুশি সঠিক সময়ে রাফাল আমাদের হাতে এল। এই যুদ্ধবিমান ভারতের অস্ত্রভাণ্ডারকে আরও সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী করবে।” রাজনাথ আরও বলেন, “ফরাসি ভাষায় রাফাল কথার অর্থ হল বাতাসের ঝাপটা। আমি মনে করি ভারতীয় বায়ুসেনাকে অপ্রতিরোধ্য করে তুলতে রাফাল তার নামের সার্থকতা বজায় রাখবে।”
ভারতীয় বায়ুসেনার ৮৭তম প্রতিষ্ঠা দিবসে এয়ার চিফ মার্শাল রাকেশ সিং ভাদোরিয়া বলেন, রাফাল এবং এস-৪০০ মিসাইল ভারতীয় বায়ুসেনার আক্রমণের ক্ষমতাকে এক ধাক্কায় অনেক বেশি শক্তিশালী করে তুলবে। বস্তুত, বায়ুসেনা প্রধানের নামেই প্রথম রাফাল যুদ্ধবিমানের টেল নম্বর রাখা হয়েছে ‘আরবি ০১’। রাফাল বিমান কেনার সময় ফরাসি সরকারের সঙ্গে মধ্যস্থতাকারী দলের সদস্য ছিলেন ভাদোরিয়া। বিমান বাহিনীর প্রথম অফিসার হিসাবে রাফাল চালানোর অভিজ্ঞতাও রয়েছে তাঁর।
এই মুহূর্তে পৃথিবীতে যে সব যুদ্ধবিমান সবচেয়ে শক্তিধর বলে বিবেচিত, তাদের মধ্যে অন্যতম রাফাল। এই যুদ্ধবিমান হাতে আসার পরে ভারতীয় বায়ুসেনার সক্ষমতা এক লাফে অনেকখানি বেড়ে যাবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।