অরণ্য সেন, কলকাতা:
পূর্ব কলকাতার ‘কামারডাঙা সাধারণ দুর্গোৎসব সমিতি’ এবছর শতবর্ষে পদার্পণ করল। তৎকালীন পরাধীন ভারতে পূর্বকলকাতার ট্যাংরা অঞ্চলের পটারি রোডের এই ‘দুর্গা মাঠে’ জনাকয়েক হাতেগোনা পল্লীবাসীকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই দেবী দুর্গার আরাধনা।
শতবর্ষে এবারের দুর্গা ‘একশোতে একশো দশ’ রুপোর প্রতিমা। অর্থাৎ ১১০ কেজি রুপা দিয়ে তৈরি হয়েছে শতবর্ষের মাতৃ প্রতিমা। প্রতিমার আদল বাংলা ঘরানার হলেও একটু আধুনিকতার ছোঁয়াও থাকবে তাতে।
যেমন মাথায় ঘোমটা থাকলেও দুর্গার পরনে থাকবে ঘাগরা—সবই রুপোর পাতের ওপর শিল্পীদের নিপুণ কাজে তৈরি হয়েছে।
যেখানে অসুরকে বিনাশ করে শান্তির বার্তা নিয়ে মা নিজেই দাঁড়িয়ে থাকবেন অসুরের শরীরের ওপর। মায়ের কয়েক টি
হাতে থাকবে জ্বলন্ত প্রদীপ, কোনও অস্ত্র নয়। অন্য হাতে তিনি অভয় দান করবেন। প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতার রুপোর তৈরি এই দেবী দুর্গার মূর্তিতে বিভিন্ন অলংকারও থাকবে সব নিখুঁত খোদাই করা রুপোর। অশুভ শক্তির বিনাশের পর মাতৃমূর্তির এমনই ভাবনার প্রকাশ পাবে হাবড়ার শিল্পী ইন্দ্রজিৎ পোদ্দারের শিল্পকর্মে।
রুপোর এই প্রতিমা তৈরীর কাজ হয়েছে শিল্পীর নিজের জায়গা হাবড়ার বানিপুরে। ১০ জন শিল্পী ছয় মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে এই প্রতিমা তৈরি করছেন।
অন্যদিকে, মন্ডপসজ্জায় শিল্পী ইন্দ্রজিৎ তুলে ধরবেন ‘অপরূপা বাংলা মা’-কে। আমাদের এই পুজোর ভাবনায় পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলার বিশেষ –
বিশেষ শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি যেমন তুলে ধরা হবে তেমনি থাকবে কৃষি, সাক্ষরতা হার, জনসংখ্যা এবং জেলার বিশিষ্ট মনীষীদের পরিচয়। আসামের বিশেষ ধরনের বাঁশ দিয়ে দক্ষিণ দিনাজপুরের তৈরি শিল্প থাকবে মন্ডপের প্রধান প্রাবেশদ্বার। প্রত্যেক জেলার একটি সম্যক ধারণা তুলে ধরা হবে পাটের ডিজাইন এর মধ্যে দিয়ে।
কারণ এক সময় পাট ছিল পশ্চিমবঙ্গের অত্যন্ত ঐতিহ্যপূর্ণ শিল্প। পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রধান পরিচয় তার হস্তশিল্প। যেমন বাঁকুড়ার টেরাকোটা, পুরুলিয়ার ছৌ, বর্ধমানের কাঠের পেঁচা, মুর্শিদাবাদের শোলা শিল্প। এইরকম বিভিন্ন জেলার নানান উন্নতমানের শিল্প সৃষ্টি দিয়ে করা হবে মণ্ডপসজ্জা। থাকবে কলকাতার ঐতিহ্যমন্ডিত ট্রাম ও রিকশার প্রতিকৃতি।
প্রসঙ্গত,
উল্লেখ্য যে ১০জন এইচ আই ভি আক্রান্ত মেয়েও এই মণ্ডপসজ্জায় হস্তশিল্পের কাজে যোগ দিয়েছে।
প্রতিমা সহ এমনই সৃজনশীল সৃষ্টি দিয়ে সেজে
উঠবে এবারের কামারডাঙা শতবর্ষের দুর্গোৎসব। শতবর্ষে ১১০কেজি রুপোর সাজে ‘অপরূপা বাংলা মা’-কে দেখতে দেখতে আর মণ্ডপে ঘুরতে ঘুরতে কখন যেন হারিয়ে যাবেন রূপসী বাংলায়, হারিয়ে যাবেন সম্প্রীতির এই বাংলায়।কামারডাঙ্গা সাধারণ দুর্গোৎসব সমিতির সম্পাদক সমীর সাহা বলেন
এসব কিছুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমগ্র পূজামণ্ডপে থাকবে আলো-আঁধারি আলোকসজ্জার ব্যবস্থা।যা আনা হয়েছে চন্দন্নগর থেকে। প্রসঙ্গত, এবারের থিম সঙ্গীত হবে বাউল আর ঝুমুর শিল্পীদের নিয়ে। পুজোর উদ্বোধনের দিন থাকবে তাদেরই লাইভ শো। এবারের পুজোর থিম ‘অপরূপা বাংলা’।