ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে…….।।
অশোক মজুমদার
রাত পোহালেই পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত নির্বাচনের ফল গণনা শুরু হয়ে যাবে। এত দিনের লাগাতার কুৎসা ও সন্ত্রাসের জবাব পেয়ে যাবেন মানুষ। প্রমাণিত হবে শত কুৎসা সত্বেও দিদির উন্নয়নের কর্মসূচির ওপর ভরসা করেছেন মানুষ। গতকাল দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অশান্ত বাংলা, নিহত গণতন্ত্র বলে পশ্চিমবঙ্গের যে বীভৎস চিত্রটি তুলে ধরেছেন তা যে কতটা মিথ্যা তা ভোটদাতারা তাদের রায়েই জানিয়ে দেবেন। গুজরাট, গোধরার সন্ত্রাস কলঙ্কিত মোদী বুঝতে পারবেন তার বাংলা জয়ের খোয়াব একটা দুরাশাই থেকে যাবে। দেশের সব রাজ্য গেরুয়া হয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে যে বিজেপি দাঁত ফোটাতে পারবেনা তা মানুষের রায়েই প্রমাণিত হবে। আমাদের সবুজ বাংলা সবুজই থেকে যাবে।
প্রতিটি মৃত্যুই দুঃখের, গণতন্ত্রে কোন নির্বাচনে একটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটবে কেন? আমার মতে, এই ঘটনা ঘটেছে ভোটে জিততে পারবে না জেনে বিজেপির পরিকল্পিত হিংসার জন্য। স্থানীয়স্তরে তাদের মদত দিয়েছে কোথাও কংগ্রেস, কোথাও সিপিএম। দিল্লিতে রাম- বাম- ডানের যতই ঝগড়া ঝাঁটি থাকুক না কেন এখানে তাদের একটাই অ্যাজেন্ডা- নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তার দায় পুরো রাজ্য সরকারের ওপর চাপিয়ে দেওয়া। এরপর তাকে কেন্দ্র করেই রাজ্য সরকারের কাছে রিপোর্ট তলব করবে কেন্দ্রীয় সরকার, বিবৃতি দেবেন প্রধানমন্ত্রী, রাজ্য সরকার জবাব দেবে কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার তা মানবে না। তারা আবার রিপোর্ট চাইবে। এই লাগাতার তরজার খেলায় রাজ্যের বাকি সব কাজকর্ম লাটে উঠবে। আপনারা একটু খেয়াল করে দেখুন গত কয়েকদিনে ঠিক এই ঘটনাগুলিই পরপর ঘটেছে। এটা বিজেপির একটা পরিচিত গেম প্ল্যান। লাশের রাজনীতি বরাবরই তাদের ভাল ডিভিডেন্ট দিয়েছে।
দিনের পর দিন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস হয়েছে বলে গত কয়েকদিন ধরে সরকার বাড়ি যে প্রচার চালাচ্ছে সেই কুৎসার কিছু জবাব দেওয়া উচিৎ। গ্রামগঞ্জের নির্দিষ্ট বুথের বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনা দেখিয়ে তারা রব তুলেছেন তৃণমূল এই সন্ত্রাসের জন্য দায়ী। অথচ সন্ত্রাসে সবথেকে বেশি মারা গেছেন তৃণমূল কর্মীরাই। দিদির কাছ থেকে কিছু বিশেষ সুবিধা দাবী করে ব্যর্থ হওয়া এই বাড়ির মালিকরা মোদীর সুরে সুর মিলিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ বুথেই যে শান্তিপূর্ণ ভাবে নির্বাচন হয়েছে তা তারা দেখেন নি। সন্ত্রাস হলে যে এত ভোট পড়েনা এই সরল সত্যটুকু বোঝার ক্ষমতা তাদের নেই। আর যে নির্বাচনে নিজেদের কাজের সুবাদেই শাসকদল ড্যাং ড্যাং করে জিতবেন সেখানে তারা সন্ত্রাস করবেনই বা কেন? মনে রাখতে হবে নির্বাচনী সংঘর্ষে তৃণমূলের কর্মীরাই সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন, সবচেয়ে বেশি মারা গেছেন। অবশ্য আমি জানি, ভোটের ফল ঘোষণার পরপরই তারা উল্টো সুরে গাইতে শুরু করবেন।
আমার কথা শুনে আমাকে টিএমসি বলে মনে হলে আমার কিছু করার নেই। কারন, আমি যা বলছি, তা আমার তিরিশ বছরের সাংবাদিক জীবনের অভিজ্ঞতার ওপর ভিত্তি করেই বলছি। কারণ, আমরা কেউই রাজনীতির বাইরে নয়। আমরা সবাই রাজনীতির মধ্যে আছি। রাজনীতি না করাটাও একধরণের রাজনীতি। দিদির নেতৃত্বে রাজ্যের যে উন্নয়ন হয়েছে তা যে কোন কান্ডজ্ঞান সম্পন্ন মানুষ স্বীকার করবেন। আমিও তাই করছি। মোদী রাজ্যের উন্নয়ন নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। অথচ তার সরকারেরই বিভিন্ন মন্ত্রক নানা ক্ষেত্রে রাজ্যের সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছে, প্রশংসা করেছে রাজ্যের কাজের। এমনকি পুরস্কারও দিয়েছে। এটা যদি রাজনীতি না হয় তাহলে কাকে রাজনীতি বলবো? প্ররোচনা দেওয়া বিজেপির একটা শয়তানি খেলা। বিস্তীর্ণ গ্রামাঞ্চলের রাজনীতি অনভিজ্ঞ টিএমসির কিছু তরুণ কর্মীকে তারা এ খেলায় জড়িয়ে নিয়েছে। পায়ে পা বাঁধিয়ে ঝগড়া লাগানোর পর তাদের ওপর আক্রমণ চালানো হয়েছে। তারপর দোষ চাপানো হয়েছে তাদেরই ওপর। রাম-বাম-ডান ত্রহ্যস্পর্শ যোগেই রাজ্যে এ ঘটনা ঘটছে।
ভোটে হিংসার ঘটনায় দিদি সত্যিই দুঃখ পেয়েছেন। কারণ, হিংসায় অল্প সময়ের জন্য হলেও ভাল কাজ ও সাফল্যগুলো পিছনে চলে যায়। যিনি উদয়াস্ত রাজ্যের প্রতিটি প্রান্তে ছুটে বেড়িয়ে উন্নয়নের কাজ করে চলেছেন এ ঘটনায় তো তাঁর বিচলিত হওয়ারই কথা। আবার তিনি যখন দেখেন তার কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তখন তার এ দুঃখ আরও বাড়ে।
একটা কথা আমার মনে হয় কিছু ব্যাপারে এখনই সতর্ক হতে হবে। গণমাধ্যমের সম্প্রচার ব্যবস্থা ও সোশ্যাল মিডিয়া এখন টেকনিক্যালি খুবই দক্ষ। একটা মোবাইলে তোলা ছবি দিয়ে সামান্য ঘটনাকে বড় করে তোলা যায়। পরিবেশনার কারসাজিতে মার খাওয়া মানুষটি হয়ে ওঠেন হিংস্র আক্রমণকারী। এই ব্যাপারটা সব কর্মীকে মাথায় রাখতে হবে। এবারে পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই ঘটনাটা বিরাট ভাবে ঘটেছে। শুনতে খারাপ লাগলেও বলে রাখা ভাল বিজেপি নামক প্রতিপক্ষটি ভয়ানক কৌশলী। তাদের টাকা, প্রযুক্তি, গুন্ডা বাহিনী সবই বেশি। এদের সঙ্গে লড়াইয়ে নির্বোধ, মাথাগরম, অসহিষ্ণু কর্মীদের কোন জায়গা নেই। তারা সরকার বাড়ির ছবি ও খবরের খোরাক হবেন, সবচাইতে বেশি আক্রমণ হবে তাদের ওপর।
আমার মা বলছিল, মেয়েটা এত পরিশ্রম করছে তবুও ওর পিছনে ওরা লাগছে কেন? ওর জন্য আমার ভয় হয়। মাঝে মাঝে মাকে কথায় পায়, আজও পেয়েছে। বললো, তোর দিদি এত কাজ করল তবুও কিছু লোক ওর সমালোচনা করেই চলেছে। ভাল কাজের কি কোন দাম নেই? আমি জবাব দিলাম না। কারণ জানি, রাত পোহালে ভোটের ফলেই মা এই প্রশ্নের জবাব পেয়ে যাবে। উন্নয়নের অস্ত্রেই বিজেপি, সিপিএম, কংগ্রেসের সন্ত্রাস ঠেকিয়ে দেবেন দিদি। পঞ্চায়েত নির্বাচনে আগের চেয়েও বেশি সাফল্য পাবে তৃণমূল।
নদী থেকে সাগরে গিয়ে পড়বে রাজ্যের উন্নয়নের ডিঙ্গা।