৬২ বছর আগের আইনে মতুয়া উৎসবের অনুমতি, বাতিল করলেন বিচারপতি অমৃতা সিনহা,১৯ মার্চের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে নির্দেশ কোর্টের

0
16

প্রায় ৬২ বছর আগে বাতিল হয়ে গিয়েছিল আইন। সেই আইন দেখিয়ে মতুয়া উৎসবের অনুমতি দিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদ। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরের অনুগামীদের দেওয়া হয় ঠাকুরনগর উৎসবের অনুমতি। ওই একই অনুষ্ঠানের অনুমতি চেয়ে হাইকোর্টে মামলা করেন বিজেপির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর। বৃহস্পতিবার সেই মামলার জমা পড়া নথি দেখে বিচারপতি অমৃতা সিনহা মমতাবালার সেই অনুমতি বাতিল করে দেন।

বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ১৯৭৩ সালে রাজ্য পঞ্চায়েত আইন আসার পর ১৯৬৩ সালের জেলা পরিষদ আইন অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তার পরেও জেলা পরিষদের আইনকে দেখিয়ে একপক্ষকে অনুমতি দিয়েছে জেলা পরিষদ। তাই ওই অনুমতি বাতিল করল আদালত। একই সঙ্গে নতুন করে দু’পক্ষকে আবেদন করতে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের মেলা আয়োজনের অনুমতির বিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিককে সিদ্ধান্ত নিতে বলল কলকাতা হাই কোর্ট।

বনগাঁর বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর এবং তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ মমতাবালা ঠাকুর দু’পক্ষের আবেদন নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন তিনি। বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিংহ নির্দেশ দিয়েছেন, দু’পক্ষের আবেদন বিবেচনা করে মেলার অনুমতি দেওয়া বা বাতিল করার প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নিতে হবে জেলা পরিষদকে। আগামী ১৯ মার্চের মধ্যে ওই সিদ্ধান্ত জানাতে হবে।

পাশাপাশি হাই কোর্টের পর্যবেক্ষণ, জেলা পরিষদের কাছে একটি আবেদনই সরাসরি জমা পড়েছে এবং সেটি বিবেচনাধীন রয়েছে। ফলে কর্তৃপক্ষকে আইন মোতাবেক পুরো বিষয়টিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানান বিচারপতি।

বর্তমানে ঠাকুরনগরের ঠাকুর পরিবারে দুই গোষ্ঠীর আকচাআকচি সর্বজনবিদিত। আগামী ২৭ মার্চ থেকে ঠাকুরনগরে মতুয়া মহাসঙ্ঘের মেলা শুরু হওয়ার কথা। সাধারণত এই মেলা আয়োজনের জন্য জেলা পরিষদ সভাধিপতি অনুমতি দিয়ে থাকেন। শান্তনুর দাবি, চলতি বছরের মেলার আয়োজন করতে চেয়ে তিনিও সেইমতো আবেদন করেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি আবেদন জানান। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তা নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত কর্তৃপক্ষ জানাননি বলে দাবি শান্তনুর। এই পরিস্থিতিতে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি।

শান্তনুর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার হাই কোর্ট, জেলা পরিষদের সভাধিপতির অবস্থান জানতে চেয়েছিল। মেলা আয়োজনের অধিকার কোন পক্ষের রয়েছে, তা নিয়ে জেলা পরিষদের সভাধিপতিকে জানাতে বলেছিল আদালত। সেইমতো বৃহস্পতিবার হাই কোর্টে বক্তব্য জানান জেলা পরিষদের অতিরিক্ত কার্যনির্বাহী আধিকারিক। তিনি আদালতে জানান, শান্তনু আবেদনের সপক্ষে তথ্য এবং নথি জমা দেননি। তাই সেই আবেদনটি বিবেচনাধীন রয়েছে। অন্য দিকে, মমতাবালা পর্যাপ্ত নথি দিয়েছেন এবং তাঁর আবেদনটি গৃহীত হয়েছে।

যদিও এ ক্ষেত্রে শান্তনুর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্যের পাল্টা বক্তব্য, জেলা পরিষদের কাছে মেলা করার বিষয়ে কোনও আবেদনই করেননি মমতাবালা। তৃণমূল সাংসদ গাইঘাটা থানায় আবেদন জানান বলে দাবি শান্তনুর আইনজীবীর। তাঁর বক্তব্য, ওই আবেদনপত্রই জেলা পরিষদে গৃহীত হয়। বেআইনি ভাবে ওই আবেদন গৃহীত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, ১৯৭৩ সালের পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী ওই মেলার অনুমতি দিতে পারেন কেবলমাত্র জেলা পরিষদের সভাধিপতি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে মমতাবালা জেলা পরিষদে আবেদন না করে থানায় আবেদন জানান। থানা থেকে ওই আবেদনপত্রটি গত ৩ মার্চ জেলা পরিষদে যায়। বিল্বদল আদালতে জানান, মমতাবালার আবেদন পৌঁছোনোর আগেই শান্তনু কর্তৃপক্ষের কাছে মেলার বিষয়ে আবেদন জানিয়েছেন। এই পরিস্থিতি আদালত জানিয়েছে, আইন মোতাবেক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

বিচারক ১৯ মার্চ এর মধ্যে তা বিবেচনা করে নতুন করে অনুমতি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা পরিষদকে।

এ ব্যাপারে মমতাবালা ঠাকুর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি এখনও কিছু জানি না, আমার কাছে কোনও তথ্য আসেনি, তাই এই বিষয়ে কিছুই বলতে পারব না। আমি এখন দিল্লিতে আছি। ফিরে সবকিছু জেনে বলতে পারব।’ জেলা পরিষদের তরফে যদিও এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।

Previous articleHoli Festival 2025 সম্প্রীতির বার্তা দিতে দোলের আগেই বসন্ত উৎসবে মাতল পেট্রাপোল সীমান্তের বাণিজ্য মহল : দেখুন ভিডিও
Next articleBASANTA UTSAV2025 : বর্ণিল আয়োজনে হাবড়ার লোকনাথ বি.এড. কলেজের বসন্ত উৎসব উদযাপিত

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here