সংবিধানের ৩৭০ ধারা রদ করে দেওয়া অসাংবিধানিক নয় বলেই মন্তব্য করছেন সংবিধান বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার তার এক্তিয়ারের মধ্যে থেকেই এই পদক্ষেপ করেছে।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিশিষ্ট সংবিধান বিশেষজ্ঞ সুভাষ কাশ্যপ বলেন, “আমি এ টুকু বলতে পারি সরকার যে পদক্ষেপ করেছে তাতে সাংবিধানিক ভাবে কোনও ভুল নেই। কোনও আইনি বা সাংবিধানিক ত্রুটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার খুব সর্তক হয়ে সাত পাঁচ বিষয় বিবেচনা করে যা করার করেছে”। তাঁর কথায়, “যতদূর রাজনৈতিক প্রভাব ও প্রতিক্রিয়ার প্রশ্ন,- এ ব্যাপারে আমার কিছুই বলার নেই।”
সংবিধানের ৩৭০ ধারার মোতাবেক গত সাড়ে ৬ দশক ধরে বিশেষ মর্যাদা পেয়েছে জম্মু ও কাশ্মীর। সেখানকার নাগরিকরাও বিশেষ কিছু সুবিধা পেয়েছে। সোমবার মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই ধারা বিলোপ করার পথে হেঁটেছে মোদী সরকার। সেই সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরকে দু’টুকরো করে দুটি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনেরও প্রস্তাব পেশ করেছে সংসদে।
সরকারের এই আচরণকে সাংবিধানিক হারাকিরি বলে মন্তব্য করেছে তৃণমূল। কংগ্রেস বলেছে, সংবিধানকে খুন করা হল।
কিন্তু বিশিষ্ট আইনজীবী তথা সংবিধান বিশেষজ্ঞ হরিশ সালভেও বলেছেন, সরকার কোনও অসাংবিধানিক কাজ করেনি। সরকারের এই এক্তিয়ার রয়েছে। তিনি বলেন, ৩৭০ ধারার ৩ নম্বর অধি নিয়মেই বলা হয়েছে যে রাষ্ট্রপতি চাইলে (সরকার পরামর্শক্রমে) এই ধারার প্রয়োগ রদ করতে পারে। এ দিন রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে সরকার তা করেছে। এ বার সংসদে তা পাশ করিয়ে নেওয়া হবে।
অন্যদিকে, সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি অশোক কুমার গঙ্গোপাধ্যায়ও এ দিন বলেছেন, “সংবিধানের ৩৭০ ধারা অনুযায়ী জম্মু ও কাশ্মীরকে সাময়িক ভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। তা অনন্ত কাল ধরে চলতে পারে না”। তাঁর কথায়, “রাজনৈতিক ভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা সুবিবেচকের মতো কাজ হয়েছে তা বলতে পারব না, তবে এটুকু বলতে পারি জম্মু ও কাশ্মীরকে যে সাময়িক যে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল তা সত্তর বছর ধরে চলেছে। আর কত?”
সরকারের এই পদক্ষেপকে কংগ্রেসের তৃণমূলের অনেকেই অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হওয়ার কথা বলছে। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি বলেন, “বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ালে নিশ্চয়ই আরও গভীর ভাবে পর্যালোচনা করা হবে। তবে আপাত ভাবে অসাংবিধানিক কিছু দেখতে পাচ্ছি না”।
তাঁর কথায়, জম্মু কাশ্মীরে বিধানসভা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এখন রাষ্ট্রপতি শাসন চলছে। ফলে আইনসভার সব ক্ষমতা এখন রাষ্ট্রপতির হাতেই রয়েছে।