দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর যুদ্ধট্যাঙ্ক মোতায়েন করছে ভারত। চুমার-ডেমচকে সারি সারি টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক ও সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। বিএমপি-২ দ্বিতীয় প্রজন্মের ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকল ও টি-৭২ ট্যাঙ্কও প্রস্তুত রেখেছে ভারতীয় বাহিনী। ভিডিওতে দেখা গেছে এমনটাই।
এই ভিডিওর সূত্র কী সেটা জানা যায়নি। তবে লাদাখ সীমান্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি দেখা গেছে এই ভিডিওতে। দিনকয়েক আগে চুসুল সীমান্তে চিন ও ভারত সেনা কম্যান্ডার পর্যায়ের বৈঠকের পরেও বরফ গলেনি। সীমান্ত থেকে সেনা সরাতে (ডিসএনগেজমেন্ট)সায় দেয়নি চিনের বাহিনী। ভারতও স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, জবরদস্তি অনুপ্রবেশের চেষ্টা হলে ছেড়ে কথা বলবে না ভারতীয় জওয়ানরা। আঞ্চলিক সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যে কোনও পদক্ষেপ নিতে পারে ভারতীয় বাহিনী।
গত ২৯ ও ৩০ অগস্টের উপগ্রহ চিত্রে দেখা গিয়েছিল, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা তথা এলএসি থেকে ২০ কিলোমিটার দূরত্বে প্যাঙ্গং হ্রদের দক্ষিণে যুদ্ধট্যাঙ্ক নামিয়েছে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি। সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে কালা টপের নীচ দিয়ে চুসুল, থাকুং এলাকার দিকে এগোচ্ছে তারা। প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণে কালা টাপ সহ একাধিক পাহাড়ি এলাকা এখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
সেনা সূত্রের খবর, কালা টপের দখল নিতে না পেরে চিনের বাহিনী এখন পাহাড়ি পাদদেশগুলোতে নিজেদের যুদ্ধট্যাঙ্ক সাজাচ্ছে। মলডো থেকে হেভি ওয়েট ট্যাঙ্ক, আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে থাকুং-এর দিকে এগোতে দেখা গেছে তাদের।
#WATCH Indian Army deploys T-90 & T-72 tanks along with BMP-2 Infantry Combat Vehicles that can operate at temperatures up to minus 40 degree Celsius, near Line of Actual Control in Chumar-Demchok area in Eastern Ladakh.
— ANI (@ANI) September 27, 2020
Note: All visuals cleared by competent authority on ground pic.twitter.com/RiRBv4sMud
প্যাঙ্গং লেকের দক্ষিণ প্রান্ত স্প্যানগুর গ্যাপের উঁচু পাহাড়ি এলাকায় চিন ও ভারত দুই দেশের বাহিনীই টহল দেয়। গত শনিবার চুমার এলাকা দিয়ে ভারতের নিয়ন্ত্রণাধীন এলাকায় ঢুকে আসার চেষ্টা করেছিল লাল ফৌজ। তাদের লক্ষ্য ছিল কালা টপ ও হেলমেটের দখল নিয়ে নেওয়া। চেপুজি ক্যাম্প থেকে কয়েকটি আর্মড ভেহিকলকে বের হতে দেখেই সতর্ক হয়ে যায় ভারতীয় বাহিনী। চিনের চেষ্টা রুখে দেওয়া হয়। এরপরেই চুসুলের কাছে ভারতের ট্যাঙ্ক রেজিমেন্ট প্রস্তুত হয়ে যায়।
নিশানা স্থির করে বসে টি-৯০ যুদ্ধট্যাঙ্ক। ভিডিওতে দেখা গেছে, এই চুমার ও ডেমচল এলাকার কাছেই বিএমপি-২ ইনফ্যান্ট্রি ফাইটিং ভেহিকলও তৈরি রেখেছে ভারত। বিএমপি-২ জলে ও স্থলে দু’জায়গাতেই চলতে পারে। এই আর্মড ভেহিকল থেকে অ্যান্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল ছোড়ার প্রযুক্তিও আছে।
১৪ নম্বর কোরের চিফ স্টাফ মেজর জেনারেল অরবিন্দ কাপুর বলেছেন, সীমান্ত এলাকা ও প্যাঙ্গং হ্রদের দুই পাড়েরই পাহাড়ি এলাকায় যুদ্ধট্যাঙ্ক মোতায়েন করা হচ্ছে। শীতের আগেই এই প্রস্তুতি সেরে রাখছে ভারতীয় বাহিনী। কমব্যাট ভেহিকলও তৈরি। প্রয়োজন হলে প্রচন্ড গুলির লড়াইতেও জবাব দেওয়া যাবে চিনের লাল সেনাকে।
১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধ ছিল বিশ্বের অন্যতম বড় ট্যাঙ্ক যুদ্ধ। এরপর থেকেই নিজেদের ট্যাঙ্কবাহিনীকে আরও শক্তিশালী করে তোলার লক্ষ্য স্থির করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক। ২০০১ সালে রাশিয়ার থেকে কেনা হয় এই টি-৯০ ট্যাঙ্ক। প্রথম ধাপে ৩১০ টি টি-৯০ কেনে ভারত। রুশ প্রযুক্তিতে তৈরি টি-৯০ ট্যাঙ্ক টি৭২বি-এর আপডেটেড ভ্যারিয়ান্ট। এর অনেক ফিচারের সঙ্গেই মিল আছে তৃতীয় প্রজন্মের টি-৮০ইউ ট্যাঙ্কের সঙ্গে। বিশাল ওই যুদ্ধ-ট্যাঙ্ক ১৯৭৬ সাল থেকে রুশ বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
রাশিয়ান টি-৯০ ট্যাঙ্কের প্রযুক্তিতে অনেক বদল এনেছেন ভারতীয় প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। এই ট্যাঙ্ক এখন আরও বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী। ভারতে এই টি-৯০ ট্যাঙ্কের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ভীষ্ম’ । সূত্রের খবর, সীমান্তে চিনা সেনার আগ্রাসনের আগে থেকেই পূর্ব লাদাখে এই শক্তিশালী ট্যাঙ্ক মোতায়েন করার কাজ চলছিল। চিনা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ার পরে এই ট্যাঙ্ক যে কোনও পরিস্থিতির জন্য তৈরি রাখছে ভারতীয় বাহিনী।