হাড়কাঁপানো ঠান্ডায় মিলল কালিম্পং-শ্রীনিকেতন , অবশেষে শীতের আমেজ বাংলায়

0
18
হীয়া রায়, দেশের সময়

সকলকে চমকে দিয়ে হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই আমূল বদলে গেল আবহাওয়া। রাজ্যের দক্ষিণবঙ্গে তরতরিয়ে নেমে গেল তাপমাত্রার পারদ।আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছিল, চলতি সপ্তাহের শেষে দক্ষিণবঙ্গে নামবে তাপমাত্রার পারদ।

৯ ফেব্রুয়ারির (১৫.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর ৪ ডিসেম্বর (১৫.৬)। ২৯৯ দিন পরে রাতের তাপমাত্রাকে ফের ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঘরে নামতে দেখল মহানগর। উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে ঢুকতে থাকা শুকনো ও ঠান্ডা বাতাসের সৌজন্যে কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের রাতের তাপমাত্রা নামতে শুরু করেছিল কয়েক দিন আগে থেকেই। কিন্তু তার পরে বঙ্গোপসাগরে পর পর দু’বার দু’টি ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছিল।

প্রথমবার ‘সেনইয়ার’ এবং দ্বিতীয় বার ‘দিতওয়াহ’। এই দুই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সদ্য পড়তে শুরু করা শীতের আমেজে ছন্দপতন ঘটেছিল। সমুদ্র শান্ত হতেই অবশ্য ফের সক্রিয়তা বেড়েছে ‘উত্তুরে’ হাওয়ার। গোটা দক্ষিণবঙ্গ নতুন করে শীতের আমেজ পেতেও শুরু করল। আলিপুর হাওয়া অফিসের প্রকাশ করা তথ্য বলছে, শীতের বাতাস শক্তিশালী হয়ে দক্ষিণবঙ্গকে শীতলতার নিরিখে পার্বত্য কালিম্পংয়ের কাছাকাছি পৌঁছে দিল। এ দিন কালিম্পংয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর শ্রীনিকেতন — ১০.৮ ডিগ্রি। তবে রাজ্যের মধ্যে শীতলতম দার্জিলিংয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

ডিসেম্বর পড়ে যাওয়ার পরেও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে উপরে থাকার জন্য রাজ্যের দক্ষিণের ১৫টি জেলাতেই ‘প্রকৃত’ শীতের বদলে ‘ছদ্ম’ শীতের অনুভূতি চলছিল। ২ ডিসেম্বর তো কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে ছিল। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই রাতের তাপমাত্রা ২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস নেমে ১৭.৭ ডিগ্রিতে এসে পৌঁছয়। আর তার পরের ২৪ ঘণ্টায় শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও ২.১ ডিগ্রি নেমে মরশুমে প্রথমবার ১৫ ডিগ্রির ঘরে পৌঁছে যায়।

কলকাতার পাশাপাশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রার দ্রুত অবনতি হয়েছে দক্ষিণবঙ্গের সব ক’টি জেলাতেই। শ্রীনিকেতনের পরে রাজ্যের সমতলে দ্বিতীয় শীতলতম ছিল কল্যাণী (১১.৬)। রাজ্যের তৃতীয় শীতলতম ও উত্তরবঙ্গের সমতলের মধ্যে শীতলতম ছিল আলিপুরদুয়ার (১২)।

শীতের আমেজ পড়তে শুরু করার পরে খুব স্বাভাবিক ভাবেই কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের বাসিন্দাদের মনে প্রশ্ন, এই অবস্থা কতদিন চলবে? এর জবাবে বৃহস্পতিবার আলিপুর হাওয়া অফিস জানিয়েছে, সামনের সাতদিন কলকাতা–সহ দক্ষিণবঙ্গের রাতের তাপমাত্রায় বড় রকমের কোনও হেরফের হওয়ার সম্ভাবনা কম।

এই সাত দিনে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৪–১৫ ডিগ্রির ঘরেই ঘোরাঘুরি করবে। অন্য দিকে পশ্চিমের জেলাগুলোতে রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি থাকবে। এই সাতদিনের মধ্যে কোথাও বৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই। একই সঙ্গে বঙ্গোপসাগরেও আগামী সাতদিন নতুন করে কোনও ওয়েদার সিস্টেম তৈরি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। তাই ‘উত্তুরে’ হাওয়ার প্রবাহে ছেদ না পড়ায় বাঙালির শীতের আমেজ উপভোগ অব্যাহতই থাকবে বলে আশা করছেন আবহবিদরা।

  • কলকাতা — ১৫.৬ (মরশুমে প্রথমবার ১৫ ডিগ্রির ঘরে)
  • সল্টলেক — ১৬.২
  • দমদম — ১৫.১
  • ব্যারাকপুর — ১৫.৮
  • দার্জিলিং — ৬.২ (রাজ্যে শীতলতম)
  • কালিম্পং — ১০.৫
  • শ্রীনিকেতন — ১০.৮ (সমতলে শীতলতম)
  • কল্যাণী — ১১.৬
  • পুরুলিয়া — ১২.৪
  • বাঁকুড়া — ১২.৯

নভেম্বরের শেষ থেকেই দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে বাড়তে শুরু করেছে শীতের দাপট। এমনকী, চলতি সপ্তাহে একাধিক জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে কমতে পারে বলে জানিয়েছে হাওয়া অফিস।

চলতি সপ্তাহের শনিবারের মধ্যে তাপমাত্রার পারদ ২-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে আসতে পারে। বিশেষ করে পশ্চিমাঞ্চলের পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম ও পশ্চিম মেদিনীপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছতে পারে ১০-১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

ডিসেম্বরের মাঝামাঝি হাওড়া, হুগলি, নদিয়া এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় সপ্তাহান্তে আরও বেশি ঠান্ডা অনুভূত হবে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকেছিল রাজ্যের প্রতিটি জেলা।
রাতের দিকেও খানিকটা কুয়াশা থাকবে। বেলা বাড়লে ঝলমলে রোদের দেখা মিলবে। হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়া সব জেলাতেই ভোরে ছিল ঘন কুয়াশা।

এদিকে, হাওয়া অফিস জানিয়েছে, কলকাতায় ১৫ ডিগ্রির নীচে পারদ নামার সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে উত্তরের জেলাগুলিতে ইতিমধ্যে ঠান্ডা রয়েছে।

সপ্তাহের শেষে তাপমাত্রা আরও নামতে পারে।হাওয়া অফিসের মতে, চলতি সপ্তাহে পারদ তো নামবেই, সঙ্গে আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক। অর্থাৎ বঙ্গের কোথাও আপাতত বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই।

উত্তরবঙ্গের ক্ষেত্রে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে ঘন কুয়াশার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি দার্জিলিং, কালিম্পং, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদায়ও কুয়াশা দেখা যাবে।

শুক্রবার শহর কলকাতার আকাশ মূলত পরিষ্কারই থাকবে। রাতের দিকে জাঁকিয়ে শীত পড়ার সম্ভাবনা শহরজুড়ে। এদিন, কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

Previous articleBangaon-Digha Bus Service: বনগাঁ-দিঘা রুটে চালু প্রিমিয়াম লাক্সারি স্লিপার বাস
Next article‘ভারত তো নিরপেক্ষ নয়…’, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পুতিনের সামনেই দেশের অবস্থান স্পষ্ট করলেন মোদী

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here