দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ স্বাধীনতা দিবসের আগেই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষ করে বাজারে আনা হবে করোনার ভ্যাকসিন। ১৫ অগস্ট মানে হাতে খুবই কম সময়। আইসিএমআর-এর ডিজি-র নির্দেশ ঘিরে দেশে শুরু হয়েছে বিতর্ক। যা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলেছেন। এই কম সময়ের মধ্যে, ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল সম্পূর্ণ করে করোনার প্রতিষেধক বাজারে আনা কি আদৌ সম্ভব?
এমন প্রশ্ন নিয়ে যখন দেশ জুড়ে চাপ তৈরি হয়েছে তখন নিজেদের অবস্থানের ব্যাখ্যা দিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা আইসিএমআর। ওই কেন্দ্রীয় সংস্থার পক্ষে জানানো হয়েছে, প্রতিষেধক ও ওষুধ শিল্পে সংস্থার ট্র্যাক রেকর্ড দেখলেই এটা বোঝা যায় যে, মেডিক্যাল গবেষণার ক্ষেত্রে আইসিএমআর সেরা সংস্থাগুলোর মধ্যে অন্যতম।
আইসিএমআর-এর তরফে বলা হয়েছে, ‘কোভ্যাক্সিন’প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্বে সাফল্য পেয়েছে। এবার ফেজ ওয়ান ও ফেজ টু’য়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হবে। অর্থাত্ ওই ভ্যাকসিন মানবদেহে প্রয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই পর্যায়ে লালফিতের ফাঁসে যাতে কোনওরকম বিলম্ব না হয়, সেই কারণেই আইসিএমআর-এর ডিজি ওই চিঠি লিখেছেন। তবে এটা নিশ্চিন্ত থাকা
যেতে পারে যে সময় কম থাকলেও ট্রায়ালের ক্ষেত্রে কোনও প্রয়োজনীর প্রক্রিয়াই এড়িয়ে যাওয়া হবে না। সব রকম নিয়ম মেনেই যত দ্রুত সম্ভব সেই প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। আর সেই উদ্দেশ্যেই চিঠি দিয়েছেন ডিজি।
গত শুক্রবার ভ্যাকসিন ট্রায়ালের সঙ্গে যুক্ত সব সংস্থাকে আইসিএমআর-এর ডিজি বলরাম ভার্গবের দেওয়া একটি চিঠি প্রকাশ্যে আসে। সেই চিঠিতেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কোভ্যাক্সিনের ক্লিনিকাল ট্রায়াল দ্রুত শেষ করতে হবে। আগামী ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা দিবেসের দিনে ওই ভ্যাকসিন বাজারে আনাই টার্গেট। ওই চিঠিতে এও বলা হয়েছিল যে, ৭ জুলাই থেকে এই ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হবে।
সেই নির্দেশ মতো ভারত বায়োটেক ‘কোভ্যাক্সিন’ পরীক্ষার জন্য সময় পাচ্ছে ৭ জুলাই থেকে ১৫ অগস্ট মানে মাত্র ৩৯ দিন। এত কম সময়ে ট্রায়াল শেষ করা সম্ভব কিনা তা নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়। এবার তারই জবাব দিল আইসিএমআর।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই রকম ভাবে নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে ভ্যাকসিনের গবেষণা করা যায় না। এই ভাবে ট্রায়াল করে প্রতিশেধক বাজারে আনলে তা কার্যকর নাও হতে পারে। এমনকী এর ফলে ক্ষতিও হতে পারে। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের যে ওয়েবসাইট রয়েছে সেখানেও বলা আছে ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে এক বছর তিন মাস সময় লাগতে পারে। সূত্রের খবর, ভারত বায়োটেকের তৈরি কোভ্যাক্সিনের প্রি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বানরের উপরে এবং তাতে ৯৬ শতাংশ সাফল্য মিলেছে।
নিয়ম অনুযায়ী প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পরে হয় ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। প্রয়োগ করা হয় মানবদেহে। এই পর্যায়ে তিন ধরণের ট্রায়াল হয় বলে বিশেষজ্ঞদের মত। তাঁরা জানিয়েছেন, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ক্ষেত্রে সেফটি ট্রায়াল, এক্সপ্যান্ডেড ট্রায়াল ও এফিকেসি ট্রায়াল এই তিন পর্যায় থাকে। এই তিন পর্যায়ের ফলাফল বিশ্লেষণ করতে হয়। তাতে সাফল্য মিললে তবেই প্রতিষেধকের ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ম। এর পরে শুরু হবে উৎপাদন। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই দাবি করেছেন নিয়ম মেনে সব পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করতে কমপক্ষে ছয় মাস মানে ১৮০ দিন সময় দরকার।.