মান্ডি শহর পেরিয়ে আনাদের গাড়ি ছুটে চলল মানালির পথে ৷ গাড়ির হিটার ওন করার পর কিছুটা স্বস্তি পেলাম কারন রাতের দিকে টেমপারেচার দ্রুত নামতে থাকে ৷ হঠাৎ খেয়াল হল মানালি তো যাচ্ছি কিন্তু শহরের নাম মালালী কেন একটু পড়াশোনা করে দেখি ৷ গুগল থেকে যা জানলাম তাতেবেশ রোমান্ঞ্চ অনূভব হল ৷ বিশেষত মানালীতে সবাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আকর্ষণে গেলেও এর ঐতিহাসিক দিকটাও খুব জরুরি ৷ জনশ্রুতি মহাপ্রলয়ের পর প্রজাপতি ব্রহ্মার পুত্র মনু আসেন পৃথিবীতে বসবাসের জন্য , তাই জায়গার নাম হয় মনুর আলয় অর্থাৎ তৎকালীন মানালসু ,পরে মানালী ৷ রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে ব্রিটিশদের সময় থেকে মানালীতে শুরু হয় আপেলের চাষ যা এখন বিশ্ববন্দিত ।
জানলা দিয়ে বাইরে চোখ যেতেই দেখলাম পূর্ণিমার চাঁদের আলোয় দিক দিগন্ত জুড়ে অসাধারন মানালী আমাদের অপেক্ষায় , আর বাম দিকে স্রতোস্বিনী বিপাশা নদী ৷
রাত ৯ টার দিকে মানালী পৌঁছে আমরা হোটেলে ঢুকে পরলাম ,অবসন্ন শরীর বটে কিন্তু মনে কারও ক্লান্তি নেই ৷
এই নতুন জায়গায় নতুন ভাবে মানিয়ে নিয়ে থাকার সাথে সাথে অসাধারন কিছুর জন্য অপেক্ষার অবসান ৷ সব থেকে আনন্দের বিষয় হল নিজস্ব জগৎকে দূর করে তাড়িয়ে কয়েকটা দিন যেন নিজেকে অগোছালো করে রাখা , নিজেকে অসাধারনত্বের সাথে খাপ খাইয়ে সুখস্মৃতি সঞ্চয় করে রাখা ৷
আশ্চর্য এই যে যন্ত্রটার প্রতি আমাদের তীব্র আকাঙ্খা সেই ফোনে সময় না কাটিয়ে আমরা যে ঘুরে বেড়ানোর আনন্দে মশগুল হয়ে আছি তাতে বাড়ির বড়রা বেশ খুশি ৷
পরদিন সকালে হোটেলে জানলার পর্দা সরিয়ে যা দেখলাম তাতে ক্লন্তি বিদায় নিল , কালে রংএর পাহাড়ের মাথায় একটুকরো তুষারশুভ্রতা আর তাতে সূর্যের আলোর ছটা পড়ে সোনার রং ধরেছে ৷ রেডি হয়ে বেরতে হবে জানতাম আমাদের গন্তব্য ছিল রোটাং পাস , কিন্তু কপাল মন্দ, রোটাং পাস বরফে ঢেকে গেছে প্রায় ৪০ ফুট করে তাই পুরোটা যেতে না পারলেও অনেকটাই যেতে পারব, মিলিটারি দের নির্দেশে অর্থাৎ গুলাবা নামক স্থান অবধি যাওয়া যেতে পারে নিঃশঙ্কোচে । মনটা ভেঙে গেছিলো ঠিক ই কিন্তু রাস্তা ধরে গাড়ি যখন চলতে শুরু করল তখন মন ভাল হতে সময় লাগল না । ভ্যালির মতো জায়গা দিয়ে আমরা যাচ্ছি আর আশেপাশে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে রেছে তুষারচ্ছাদিত হিমালয় পর্বত ৷ যত উপরের দিকে চলছি শোভা যেন বাড়ছে , সাথে পথ দেখিয়ে নিয়ে চলেছে চন্ঞ্চল বিয়াস নদী , বড় বড় বোল্ডার ভেঙে আপন গতিতে চলছে সে । অনেক হিন্দি ও বাংলা সিনেমার শুটিং এর দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠছিল , উপরের দিকে যত উঠছি দেবদারু আর পাইন পথ আগলে দাঁড়িয়ে পড়ছে ৷গুলাবা পৌঁছে দেখা হেল মিলিটারি দের তৈরী নিয়মে গাড়ির পর্কিং নীচে আর চলতে চলতে ই বরফের রাজ্য ঢুকে পড়লাম আমরা, তবে মাঝে এক স্থানে আমাদের বরফে যাতে জামাকাপড় না ভিজে যায় তার দন্য স্থানীয় স্নো স্যুট পড়ে নিতে হয়ে ছিল আর সাথে হান্টার বুট । বরফে হুটোপাটি ,গড়াগড়ি শুরু হল , বড়রাও বাচ্চা হয়ে বরফ নিয়ে খেলতে লেগে গেল ৷ পুরো মানালী তে বেশ ভাল মানের কেশর পাওয়া যায় গ্রহনযোগ্য
দামে ,এছাড়াও নানা রকম গাছগাছড়া থেকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন রোগের ওষুধ ও পাওয়া যায় ৷ এই স্থান থেকে হিমালয়ের চূড়াগুলি দৃশ্যমান ,আর বরফে চকচক করছে ৷ সফেদ ঘোড়া চড়ে বা কেউ পয়দলে ই কেউ কেউ পাহাড় দিয়ে ট্রেকিং করে উপরে যাওয়ার চেষ্ঠা করছেন । আমরা নীচে নামার জন্য গাড়িতে ফিরে এলাম ।গুলাবা থেকে আবার একই পথ বেয়ে চলে গেলাম সোলাং ভ্যালিতে প্রধানত এই স্থানটি ব্যাবহার হয় পিকনিক স্পট হিসাবে এছাড়াও প্যরাগ্লাইডিং, জিপ লাইন ক্রসিং, আর রোপ ক্লাম্বিং সহ অনান্য অনেক অ্যাক্টিভিটিস ৷ সোলাংপাস ট্রেকারদের জন্যও স্বর্গরাজ্য ৷ ডিসেম্বর থেকে এখানে বরফ পড়লে ও তখন সোলাং ভ্যালি পুরো সবুজে ঢাকা ৷(চলবে )