
যারা ভারতীয় নারীদের কপালের সিঁদুর মুছেছিল,যারা ‘ভারতমাতা’র উপর আক্রমণ করেছিল, অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে তাদের সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ।

রবিবার উত্তরপ্রদেশের লখনউয়ে সুপারসনিক ক্রুজ় মিসাইল ব্রহ্মসের কারখানা উদ্বোধন করতে গিয়েছিলেন রাজনাথ। সেখানে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও ছিলেন। তিনিই জানান, অপারেশন সিঁদুরের ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছিল ভারতীয় সেনা। কারখানা উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজনাথ বলেন, ‘‘অপারেশন সিঁদুর সন্ত্রাসবাদকে নির্মূল করতে ভারতের ইচ্ছাশক্তি এবং সামরিক শক্তির দৃঢ়তার প্রদর্শন। অপারেশন সিঁদুর শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং কৌশলগত ইচ্ছার প্রতীক।’’

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সংযোজন, ‘‘অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদীদের কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে। তারা বুঝে গিয়েছে, সীমান্তের ও পারেও তারা নিরাপদ নয়। আজ গোটা দেশ ভারতীয় সেনাকে স্যালুট করছে।’’
প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘‘ভারতীয় সেনা পাকিস্তানের সাধারণ নাগরিকদের কখনওই নিশানা করেনি। নিশানা করেছিল জঙ্গিঘাঁটিগুলিকে। কিন্তু পাক সেনা ভারতের সাধারণ নাগরিকদের নিশানা করেছিল। ভারতে মন্দির, গুরুদ্বার, চার্চ ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনা তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। ভারতের ক্ষমতা রাওয়ালপিন্ডি টের পেয়েছে, যেখানে পাক সেনার সদর দফতর রয়েছে।’’

ভারতের মিসাইল ভাণ্ডারের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হলো ব্রহ্মস। ভারতের ব্রহ্মস কিন্তু গতিতে আমেরিকা এবং চিনকেও টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে বলেই অনেকের দাবি। পৃথিবীতে যত রকমের ক্রুজ় মিসাইল রয়েছে, তার মধ্যে ব্রহ্মস সবচেয়ে দ্রুতগামী। এই মিসাইল তৈরির জন্য রবিবার ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিটের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। উত্তরপ্রদেশের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল করিডরে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০ হেক্টর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে ব্রহ্মস তৈরির এই ইউনিট। রবিরার এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সশরীরের উপস্থিত ছিলেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত প্রকল্পেরও উদ্বোধন করা হয়েছে।
ভারত ও রাশিয়ার যৌথ উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে এই ব্রহ্মস মিসাইল। স্থল, জল এবং আকাশ-তিন জায়গা থেকেই লঞ্চ করা যায় এই মিসাইল। এই মিসাইলের রেঞ্জ ৩০০ থেকে ৪৫০ কিলোমিটার। আর দীর্ঘ রেঞ্জের ব্রহ্মস মিসাইল তৈরির কাজও চলছে। তবে এই মিসাইল প্রচণ্ড দ্রুতগতির। আমেরিকা, চিনের হাতে যে সংস্ত দ্রুতগতির মিসাইল রয়েছে, এর স্পিড তার থেকেও বেশি। এর সর্বোচ্চ গতি মাক ২.৮। অর্থাৎ শব্দ যে বেগে ছোটে তার থেকেও ২.৮ গুণ বেশি গতি এই মিসাইলের। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দুরন্ত গতির জন্য ইজ়রায়েল এবং আমেরিকার হাতে থাকা ডিফেন্স সিস্টেমের পক্ষেও এই মিসাইলকে রুখে দেওয়া কঠিন।

পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর অপারেশন সিঁদুরের মাধ্যমে পাকিস্তানে আক্রমণ করেছে ভারত। সেই অভিযানে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে একাধিক জঙ্গি ঘাঁটি। পাক সেনার একাধিক এয়ারবেসও ভারতীয় বায়ুসেনার হামলায় বিধ্বস্ত হয়েছে। এই কাজে ব্রহ্মস মিসাইলও ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা যাচ্ছে সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত কিছু প্রতিবেদনে। যদিও সেনার তরফে এ সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা এখনও পর্যন্ত করা হয়নি। তবে ব্রহ্মস তৈরির ইউনিটের উদ্বোধনে গিয়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তা ব্যবহার করা হয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। ওই বক্তৃতায় পাকিস্তানেরও সমালোচনা করেছেন তিনি।