দেশের সময়, বাগদা: হাসপাতালের মর্গ থেকে সাপে কাটা রোগীর মৃতদেহ`কে মনসা মন্দিরের থানে নিয়ে এসে ঝাড়ফুঁক মন্ত্র পাঠের সাহায্যে ফের বাঁচিয়ে তোলা যাবে ওই মৃত মানুষটিকে। ওঝার এমন কথা শুনেই প্রিয়জনকে বাঁচাতে হাসপাতালের মর্গ থেকে মৃতদেহ এনে মনসার থানে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন পরিবারের সদস্যরা। দেখুন ভিডিও:
https://www.facebook.com/103850228487039/posts/174727164732678/
বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানার সাগরপুর গ্রামে। পাশাপাশি বাগদা থানার দেহালদহ গ্রামের এক ওঝার এমন দাবিতে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়, প্রতিবাদে সরব হয়েছে বিজ্ঞাণ ও যুক্তিবাদী মঞ্চ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানাগিয়েছে, বৃহস্পতিবার বাগদা থানার সাগরপুর গ্রামের বাসিন্দা আয়না দাস (৪০) নামে এক গৃহবধূকে বাড়িতেই সাপে কামড়ায় বিষয়টি বুঝতে পেরেই বাড়ির পরিজনেরা তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে বাগদা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর তাঁর দেহ বনগাঁ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
অন্যদিকে, ওই গৃহবধূর সাপের কামড়ে মৃত্যুর কথা শুনতেই বাগদার দেয়ালদহ গ্রামের বাসিন্দা ভোলা সরদার নামে এক ওঝা ছুটে আসেন সাগরপুর গ্রামে এবং তিনি দাবি করেন যে, সম্প্রতি তিনি মা মনসার স্বপ্নাদেশ পেয়েছেন। মায়ের সেই স্বপ্নাদেশ অনুযায়ী কোনও সাপে কামড়ানো রোগীর মৃতদেহ মা মনসার থানে নিয়ে এসে ফেলতে পারলেই তাঁর জীবন ফিরিয়ে দিতে পারবেন ওই ওঝা। যদিও এর আগে তিনি একজনকেও এভাবে বাঁচানোর ঘটনা ঘটাতে পারেন নি বলে দাবি স্থানীয় গ্রামবাসিদের।
মৃত ওই গৃহবধূর স্বামী নিমাই দাসের কথায়, ওই ওঝা যখন বলেছেন যে আমার মৃত স্ত্রীকে বাঁচিয়ে দিতে পারবেন, তাই তার কথায় বিশ্বাস করে আমরা মৃত স্ত্রী আয়নার দেহ বনগাঁ হাসপাতালের মর্গ থেকে এনে ওই ওঝার মনসা মন্দিরের থানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।
এদিকে, ওই ওঝার কথা ছড়িয়ে পড়তেই সরব হয়েছে বিজ্ঞাণ ও যুক্তিবাদী মঞ্চ। এই সংগঠনের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সভাপতি সজল ভদ্র বলেন, এটা সম্পূর্ণ এক বুজরুকি। কুসংস্কারকে সঙ্গী করে এভাবেই গ্রামের এক শ্রেণীর মানুষ ফায়দা তোলার চেষ্টা করছে। সাধারণ মানুষের বোঝা উচিত, একবার কেউ মারা গেলে তাঁকে আর কোনভাবেই বাঁচিয়ে তোলা যায় না, আমরা প্রশাসনের কাছে বারং বার এই সমস্ত বুজরুকিরদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যাবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছি ।
সজল বাবু আরও বলেন,যুক্তিবাদী মঞ্চের পক্ষ থেকে তাঁদের দাবি, অবিলম্বে কুসংস্কার বিরোধী বিষয় পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করে ছাত্রাবস্থাতেই কুসংস্কারের ব্যাপারে সচেতন করে তোলা হোক ছাত্রছাত্রীদেরকে। আর তাহলেই কুসংস্কারমুক্ত হবে সমাজ। পাশাপাশি এই ওঝা বা বুজরুকির কঠিন শাস্তির দাবিও জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনের কাছে৷