দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ দলের সমস্ত সাংগঠনিক দায়িত্ব ছাড়লেন কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী। বললেন, ‘‘আমার ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন। শেষবেলায় এসে অনেক অপমান সহ্য করেছি। আর নয়। এবার দলের সাংগঠনিক সমস্ত দায়িত্ব থেকে আমি সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।’’ শনিবার সাংবাদিক বৈঠক করেন মিহিরবাবু। সেখানেই এই ঘোষণা করেন তিনি।
তৃণমূলের জেলা ও ব্লক কমিটির তালিকা প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই কোচবিহারে দলের অন্দরে শুরু হয় তুমুল বিক্ষোভ। জেলা কমিটি তৈরি নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়ায় দলের বিধায়কদের মধ্যেও। বিধায়কদের মতামত ছাড়াই জেলা কমিটি তৈরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মিহিরবাবু। কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক দক্ষিণ বিধানসভার অন্তর্গত। তাই এখানকার বিধায়ক হিসেবে মিহিরবাবু যাঁদের নামের তালিকা পাঠিয়েছিলেন তাঁদের স্থান দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।
প্রেস বিবৃতি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘দলীয় অনুশাসন অনুযায়ী সাংগঠনিক বিষয়ে বিধায়কদের প্রস্তাব মেনে নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা লঙ্ঘন করা হয়েছে। কেবল ব্লক কমিটি নয়, জেলা কমিটি নিয়েও বিধায়কদের সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করা হয়নি। গত ১৮ তারিখ দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে আমার প্রস্তাব জানিয়ে দিয়ে এসেছি। কিন্তু তাতে যে কোনও ফল হয়নি তা খুবই স্পষ্ট। আমার মনে হচ্ছে দলে এখন আর আমার মতো মানুষ একেবারেই উপযুক্ত নয়। তাই সমস্ত সাংগঠনিক পদ থকে আমি অব্যাহতি নিলাম।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘এখন যাঁরা দলবিরোধী কাজ করছে তাঁরাই দলের নানা পদ অলঙ্কৃত করছেন। যে নীতির প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এতদিন দলনেত্রীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পথ চলেছি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে এখন আর তা দলে নেই। স্বজনপোষণ ও গোষ্ঠী রাজনীতির চূড়ান্ত জায়গায় পৌঁছে যাওয়ার পর এখন এই দল থেকে আর আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই।’’
নেত্রীর নির্দেশ পেলে বিধায়ক পদ থেকেও তিনি ইস্তফা দিতে তৈরি আছেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির এই নেতা।
মিহির গোস্বামী এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন আন্দাজ করে শনিবার সকাল থেকেই তুমুল ব্যস্ততা শুরু হয় জেলা তৃণমূল শিবিরে। বারবার তাঁর কাছে ফোন আসে কলকাতা থেকেও। কিন্তু কোনও কিছুই টলাতে পারেনি এই বর্ষীয়ান নেতাকে। গোটা কোচবিহারেই অত্যন্ত স্বচ্ছ ভাবমূর্তি তাঁর। কোনওদিন সরকারি নিরাপত্তা পর্যন্ত নেননি মিহিরবাবু। তাঁর এমন সিদ্ধান্তে তুমুল আলোড়ন দলে। রাজ্যের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘এই ঘটনায় দলের বড় ক্ষতি হবে।’’