দেশের সময় ওযেবডেস্কঃ আজ সপ্তম দফার ভোটগ্রহণ। সকাল সাতটা থেকে পাঁচ জেলার ৩৪টি আসনে শুরু হয়েছে ভোট। এদিনের ভোটেও প্রতি বুথে মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
এদিন যে পাঁচটি জেলায় ভোটগ্রহণ হচ্ছে সেগুলি হল, দক্ষিণ দিনাজপুর, পশ্চিম বর্ধমান, মালদহ, মুর্শিদাবাদ, কলকাতা। দক্ষিণ দিনাজপুর এবং পশ্চিম বর্ধমানের সব আসনে আজ ভোটগ্রহণ। বাকি তিন জেলার ক্ষেত্রে আংশিক। বাকি আসনে ভোট হবে অষ্টম তথা শেষ দফায়।
কলকাতার চারটি কেন্দ্রে আজ ভোট হচ্ছে। ভবানীপুর, বালিগঞ্জ, কলকাতা বন্দর এবং রাসবিহারী। কমিশনের সূচি অনুযায়ী আজ ৩৬টি কেন্দ্রে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্ত মুর্শিদাবাদের দুই কেন্দ্র সামশেরগঞ্জ এবং জঙ্গিপুরের কংগ্রেস ও আরএসপি প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ভোট স্থগিত হয়ে গিয়েছে। ১৬ মে ভোট হবে এই দুই কেন্দ্রে। মুর্শিদাবাদ জেলার মোট ৯ টি বিধানসভা কেন্দ্রে ভোট হবে এদিন।ভোটের আগের রাত থেকেই কিছু বিক্ষিপ্ত অশান্তির খবর পাওয়া গিয়েছে।
ভোটের আগের রাত থেকে উত্তেজনা ছড়িয়েছে কড়েয়া থানা এলাকার মসজিদ লেনে। গতকাল রাতে ১৫টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে এলাকায়। ঘটনাকে ঘিরে আতঙ্ক ছড়িয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, মসজিদ লেনের কাছে একটি পরিত্যক্ত ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশে খবর দেন বাসিন্দারা। ওই ব্যাগ খুলেই দেখা যায় ভেতরে ১৫টি বোমা রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই খবর যায় বম্ব স্কোয়াডের কাছে। বোমাগুলি নিষ্ক্রিয় করে ফেলা হয়েছে বলে খবর। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে বিশাল পুলিশ বাহিনী।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, ভোটে গণ্ডগোল করার জন্যই বোমা মজুত করে রাখা হয়েছিল। এলাকায় আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করার জন্যই বোমা রাখা হয়েছে বলে অনুমান বাসিন্দাদের।
এদিকে কলকাতা বন্দর বিধানসভার পশ্চিম বন্দর থানা এলাকা থেকেও বোমা উদ্ধার হয়েছে গতকাল রাতে। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে রাতে এলাকায় অভিযান চালায় লালবাজারের গোয়েন্দা শাখা ও পশ্চিম বন্দর থানার পুলিশ। সূত্রের খবর, জুটমিলের কাছ থেকে ১৯টি তাজা বোমা উদ্ধার হয়েছে।
মুর্শিদাবাদের তেঁতুলিয়ায় ভোটের আগের রাত থেকে চলছে বোমাবাজি। অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে। যদিও শাসক দলের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
সপ্তম দফায় আজ পাঁচ জেলার ৩৪ আসনে ভোটগ্রহণ চলছে। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতার ভবানীপুর, বালিগঞ্জের মতো নজরকাড়া কেন্দ্রে। এই দফায় ৩৬ আসনে ভোট হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সামশেরগঞ্জ ও জঙ্গিপুরে দুই প্রার্থীর মৃত্যুর পর ওই দুই আসনে ভোট স্থগিত রাখা হয়েছে। কলকাতার চার আসন যথা কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী, বালিগঞ্জে ভোট হচ্ছে আজ। দক্ষিণ দিনাজপুর এবং পশ্চিম বর্ধমানের সব আসনে আজ ভোটগ্রহণ। বাকি তিন জেলার ক্ষেত্রে আংশিক। বাকি আসনে ভোট হবে অষ্টম তথা শেষ দফায়।
সপ্তম ও অষ্টম দফায় ভোট মুর্শিদাবাদ জেলায়। শুরুটা হল সোমবার। এই লড়াইকে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে কংগ্রেসের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। আরও বেশি করে প্রদেশ কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর লড়াই। বহরমপুরের সাংসদ গত লোকসভা নির্বাচনে নিজে জয় পেলেও জেলার অপর দুই আসন মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুরে জয় পায় তৃণমূল। বিজেপি-ও ভোট প্রাপ্তির হিসেবে অনেকটাই এগিয়েছে জেলায়। তাই অধীর-গড় মুর্শিদাবাদে এ বারের লড়াই যে কঠিন তা মানছে কংগ্রেসও।
২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই জেলায় কংগ্রেস ১৪টি আসনে জিতেছিল। সেখানে তৃণমূল ও বামফ্রন্ট ৪টি করে আসন পায়। কিন্তু ২০১৯ সালের ফল অনেকটাই বদলে যায়। লোকসভা নির্বাচনের ফলের নিরিখে জেলার ২২টি আসনের মধ্যে ১৭টিতে এগিয়ে তৃণমূল। ৪টিতে কংগ্রেস। ১টিতে বিজেপি। কংগ্রেসের একাংশ অবশ্য মনে করছে ২০১৯ সালের লোকসভা এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ফারাক বিস্তর। তাঁদের দাবি, এ বারের নির্বাচনে তৃণমূলের দাপট যেমন কমেছে, তেমন কিছুটা হলেও শক্তি বেড়েছে কংগ্রেসের। সেই সঙ্গে পাশে আছে বাম ভোট।
এই জেলার ভোটেও বড় প্রভাব থাকতে পারে শুভেন্দু অধিকারীর। তৃণমূলের কাছে তিনি যেমন অভাব বিজেপি-র কাছে প্রাপ্তি। দীর্ঘ সময় মুর্শিদাবাদ জেলায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক ছিলেন শুভেন্দু। সেই সুবাদে তাঁর পরিচিতি এবং প্রভাব নিয়ে এখনও তৃণমূল নেতাদের একাংশের মধ্যে চিন্তা রয়েছে। সেই সময় কংগ্রেসের হাতে থাকা জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত একে একে দখল করেছিল তৃণমূল। ২০১৬ সালে শুভেন্দুর নেতৃত্বেই ওই জেলায় ৪টি আসনে জেতে তৃণমূল। লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ আসন জয়ের পিছনে শুভেন্দুর বড় অবদান রয়েছে বলেও দাবি করেন তাঁর অনুগামীরা। শুভেন্দুর হাত ধরে অনেক নেতা, কর্মীও এসেছেন বিজেপি-তে।
তবে বিজেপি কেমন ফল করবে তার আন্দাজ না পাওয়া গেলেও এটা ঠিক যে মুর্শিদাবাদ নিয়ে রীতিমতো আশাবাদী তারা। ৬৫ শতাংশ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত মুর্শিদাবাদে ৫ জন মুসলিম প্রার্থী দিয়েছে গেরুয়াশিবির। ২০১৬ সালেও বিজেপি এই জেলায় মাত্র ৪টি আসনে ২০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছিল। সেখানে ২০১৯ সালে ৭ আসনে ৪০ হাজারের বেশি ভোট পেয়েছে। জঙ্গিপুর, সুতি, নবগ্রামে ভাল ভোট পেলেও সবার আগে থেকে চমকে দিয়েছিল মুর্শিদাবাদ আসনে। তাই খাতা খোলার আশা দেখেছে বিজেপি-ও।
নবাবের জেলায় যখন উত্তাপ তখন তার থেকে অনেকটাই দূরে থাকতে হচ্ছে এবারের লড়াইয়ে কংগ্রেস সেনাপতি অধীরকে। করোনায় আক্রন্ত হয়ে তিনি এখন ঘরবন্দি। শেষ কয়েকদিন প্রচারেও নামতে পারেননি। অধীর ঘনিষ্ঠদের কথায়, ‘‘দাদা এই শেষবেলার প্রচারের সুযোগ না পাওয়াটা লড়াই কঠিন করে দিল। ভোটের দিনও তিনি রাস্তায় নামতে পারবেন না।’’অধীর যদিও তেমনটা মানতে চাইছেন না। ঘনিষ্ঠদের কাছে তিনি তাঁর মতামত প্রকাশ করে জানিয়েছেন, গত লোকসভা নয়, গত বিধানসভা নির্বাচনের মতোই ফল করবে কংগ্রেস।
কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার আসানসোল-দুর্গাপুরে ১৫৪, দক্ষিণ দিনাজপুরে ১০৮, জঙ্গিপুরে ১০২, মুর্শিদাবাদে ১০২ কোম্পানি বাহিনী মোতায়েন রয়েছে। কলকাতা দক্ষিণের ৪টি আসনে মোতায়েন থাকছে ৬৩ কোম্পানি বাহিনী আর মালদহ জেলায় ১২২ কোম্পানি। কমিশন সূত্রে আরও জানা গিয়ছে, ষষ্ঠ দফার মতো সোমবারের ভোটেও সাড়ে ৬০০-র বেশি সেক্টর অফিস থাকছে। প্রতিটি সেক্টর অফিসে একজন এসআই বা কিংবা এএসআই পদমর্যাদার পুলিশ আধিকারিক দায়িত্বে থাকবেন। সঙ্গে থাকবেন চারজন কনস্টেবল।