বিশেষ প্রতিবেদন দেশের সময় -মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশির্বাদের হাত যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের উপর থেকে উঠে যাচ্ছে,তাঁর বিদায় যে কোন দিন হতে পারে বলে দেশের সময়ে একাধিক প্রতিবেদনে বার বার জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।তাই মন্ত্রী ও মেয়র পদ থেকে শোভনের বিদায়ের খবর প্রত্যাশিতই ছিল।দেশের সময় মাস খানেক আগেই জানিয়ে রেখেছিল যে শোভন চট্টোপাধ্যায়ের বিদায় শুধু সময়ের অপেক্ষা।দেশের সময়ের খবরের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ার পর আমরা আর একটা বিশেষ খবরের ইঙ্গিত দিয়ে রাখতে চাইছি,আর তা হল শোভনের এই বিদায় পর্বের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এক বড় চক্রান্তের গল্প।তৃণমূলের অন্দর মোহল থেকেই সেই চক্রান্তের বিজ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল।কোনরকম দুর্নিতীর দায়ে শোভনকে দল থেকে বাদ দেওয়া হয়নি,বরং তাঁকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করার পেছনে রয়েছে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক।মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সুপ্রিমো শোভনকে বার বার প্রেম ছেড়ে দলের কাজে মন দিতে বলেছিলেন।বার বার তাঁকে সতর্ক করা হয়েছিল যে তিনি যেন ব্যক্তিগত সম্পর্কের জেরে দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি না করেন।তবে শোভন মনে করেছিলেন,যে তিনি তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও রাজনীতিকে আলাদা রাখতে পারছেন,তার অবস্থান যে দলের ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে তা তিনি মানতে রাজি ছিলেন না।এই অবস্থানে অনড় থেকে গিয়ে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারকে বিপদের মুখে ফেলে দিয়েছেন শোভন।তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত এই মুহূর্তে অনিশ্চিত।মন্ত্রীত্ব গেছে,মেয়র পদ গেছে,দল থেকে বিতারিত হতে পারেন।কিন্তু কী কারণে নিজের কেরিয়ার নিয়ে এমন মারাত্মক খেলায় মেতে উঠতে পারেন শোভন,কেন নিজের এতদিনের মমতা ভক্তিকে তিনি দূরে সরিয়ে দিতে পারলেন?বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কী এমন গভীরতায় চলে গেছিল যেখান থেকে স্বয়ং মমতা বল্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁকে ফেরাতে পারলেন না!যে মমতাকে তিনি রাজনৈতিক জীবনের প্রায় ত্রিশ বছর ধরে আদর্শ মেনে এসেছেন সেই মমতার সঙ্গেও দুরত্ব তৈরি করে নিতে পারার মত সম্পর্ক কী ভাবে হল বৈশাখীর সঙ্গে?আর এখানেই এক গভীর ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে বলে অনেকের অনুমান।কোন কোন সূত্র বলছে আসলে গভীর এক চক্রান্তের বলি হতে হয়েছে শোভনকে।চক্রান্তে ফেঁসে গিয়ে আর বেরিয়ে আসতে পারেন নি শোভন।শোভন বৈশাখীর বন্ধুত্বের কথা বার বার বলেছেন,কিন্তু শুধু মাত্র বন্ধুত্বের জন্য শোভনদের মত রাজনীতিকরা এত বড় ঝুঁকি নিয়ে নেবেন তা কারোর পক্ষেই বিশ্বাস করা শক্ত।বিষয়টা এমনও হতে পারে সম্পর্কের মাত্রাটা এমন একটা জায়গায় গেছিল,সেখান থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইলেও শোভন তা পারেন নি।আর সম্পর্কটা সেই জায়গায় নিয়ে যেতে প্রথম থেকেই সচেষ্ট ছিলেন শোভনের দলেরই এক শোভন বিরোধী গোষ্ঠী।মমতার সঙ্গে শোভনের সু সম্পর্ককে নষ্ট করতে সক্রিয় ছিলেন তো অনেকেই,তাদের মধ্যেই কেউ কেউ শোভনের সঙ্গে বৈশাখীর সম্পর্ককে ব্যবহার করে শোভনকে ক্রমশ দলে কোণঠাসা করতে উঠে পড়ে লেগেছিল বলে খবর।শোভন আবেগের বশে একটা সম্পর্কে জড়িয়ে গিয়ে পড়ে হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন ভুল হচ্ছে,কিন্তু তাঁর ভুল শুধরে নেওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।এমনটাও হতে পারে যে সম্পর্কের কিছু প্রমাণ ও তথ্য এমন করে রেখে দেওয়া হয়েছিল যা দিয়ে শোভনকে ব্ল্যাকমেল করা যায়।শোভনকে মমতার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার একটা চক্র যে আছে তা আমরা যারা রাজনৈতিক খবর সংগ্রহ করতে যাই তারা সবাই জানি।তাই এটা আশ্চর্যের নয় যে শোভনকে সম্পর্কে জড়িয়ে দিয়ে তাঁকে ক্রমাগত সেদিকে ব্যস্ত হয়ে থাকতে বাধ্য করে দলনেত্রীর কাছে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করে তার বিদায়ের রাস্তা প্রশস্ত করতে কেউ কলকাঠি নেড়েছেন।বিধানসভায় শোভন ভুল তথ্য দিয়েছেন,যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী একেবারে বিধানসভাতেই মুখ খুলেছেন।এখন প্রশ্ন হল এই ভুল তথ্য তাঁকে তার দপ্তর কেন দিল?মন্ত্রীতো সব তথ্য সব সময় মনে রাখতে পারেন না,তাঁকে তথ্য জোগায় তো তাঁর সচিবরা,তাহলে কেন আবাসন সচিব মন্ত্রীকে ভুল তথ্য দিলেন?এই প্র্শ্নটা কিন্তু উহ্য থেকে যাচ্ছে।এমনটাও হতে পারে এটাও ষড়যন্ত্রেরই একটা অংশ।একান্ত প্রতিক্রিয়ায় শোভন ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর বিরুদ্ধে দলেরই একাংশ নোংড়া চক্রান্ত করেছে।শোভনের অভিযোগ এ কথায় উড়িয়ে দেওয়া যায় না,কারণ তৃণমূলে নানা গোষ্ঠী নানা কৌশল করে যাচ্ছে,সেই কৌশলের পেছনের খেলাটা কী কেউ জানে না।শোভনের বিদায়ের পেছনে যে শুধু সম্পর্ক জনিত কারণই একমাত্র কারণ নয় তা এই ঘটনার তাত্পর্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়।আগামীদিনে সেই সব কারণ সামনে আসতে থাকলে সংবাদ মাধ্যমে একেবারে নতুন রং লাগবে তা বলাই যায়।শোভনের বিদায় নিয়ে আর চাঞ্চল্যকর সংবাদ সামনে আসার অপেক্ষায়, তা এখনই বলে দেওয়া যায়।