‘শুভ-বিজয়া’- কেন এই বার্তা?কেনইবা সিঁদুর খেলা হয়, জানুন:

0
1388

সোমা দেবনাথ, দেশের সময়: দুর্গাপুজোর দশমী থেকে ‘শুভ-বিজয়া’ বার্তা দেওয়া হয় কিন্তু কেন!

সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে দেখা না করেও চলছে বিজয়া পালন। সবাই সবাইকে ‘শুভ-বিজয়া’ বার্তা পাঠাচ্ছেন।
‘শুভ-বিজয়া’ কেন হয়ে ওঠে শুভেচ্ছা জানানো ভাষা?

বিজয়ার যে ছবিটা আমাদের চোখের সামনে ভাসে, তা তো প্রতিমার চলে যাওয়া। এর মধ্যে কোথায় বিজয়? আনন্দ উৎসবের মহাপার্বণ পার করার পরে বিষাদের বদলে কেন ‘শুভ-বিজয়া’ বলা হয়?

এই প্রসঙ্গে বনগাঁ রামকৃষ্ণ মিশনের এক উপাচার্য বলেন, “পুজোর দিনগুলিতে পুরোহিতের মন সর্বগতা চিন্ময়ী দেবতাকে আরাধ্য প্রতিমাতে জাগ্রতরূপে বিরাজমানা চিন্তা করে। সহজ কথায় এর নাম ‘আবাহন’ আর সেই চিন্তা থেকে পুরোহিতের মনের নিবৃত্ত হওয়াই বিসর্জন। আর বিজয়ার বলা হয় অন্য কারণে।”

শরৎকালে সীতা উদ্ধারের জন্য শ্রীরামচন্দ্র অকালবোধন করে দেবীর পুজো করেছিলেন। দেবীর আশীর্বাদে রাবণকে নিহত করে সীতাকে উদ্ধার করেছিলেন। তাই প্রচলিত প্রথা অনুসারে ‘বিজয়া’শ্রীরামচন্দ্রের বিজয়ের দিন। বিজয় উৎসব থেকেই‘বিজয়া’ কথাটি এসেছে।
উপাচার্য আরও বলে, “সাধন জগতে ‘বিজয়া’ কথাটির তাৎপর্য হলো— মহাদেবীর বিশেষ আবির্ভাব ক্ষণে তাঁরই প্রসাদে তাঁরই প্রসন্নতায় ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষলাভ। যাঁরা শ্রেয়কাম, তাঁরা সংসার বন্ধনরূপ অজ্ঞানতার প্রতি বিজয়প্রাপ্ত হয়ে মোক্ষলাভ করেন। অশুভের পরাজয়ে শুভের উদ্ভব এদিন থেকেই। সেকারণে বিজয়া আনন্দের দিন, উৎসবের দিন। প্রীতি ও সম্প্রীতির দিন।”

রাবণের পরাজয় এবং মৃত্যু ছাড়াও এই দিনে ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে যুদ্ধে আহ্বান করে বধ করেছিলেন। এই যুদ্ধে বিষ্ণু ইন্দ্রের রথের সারথি ছিলেন আর মরুদ্গমন ছিলেন সহকারী।

বৈদিক যুগে হওয়া ইন্দ্রের ওই বৈষ্ণবী শক্তির আশ্রয়ে বৃত্রবিজয়ী লীলাই মহামায়ার পুজোকেও অসুর বিসর্জনের এক পদ্ধতি মানা হয়। এই পরম্পরা এখনও পালন করা হয় সারা দেশে। এই দিন দশেরা উৎসবে অনুষ্ঠিত হয় রাবণবধের অনুষ্ঠান।
দুর্গা পুজোর দশমীর দিনে মণ্ডপে মণ্ডপে সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন মেয়েরা। বাংলায় মেয়েদের এ এক বিশেষ অনুষ্ঠান। দেবীকে সিঁদুর দানের পাশাপাশি একে অপরকে সিঁদুর পরিয়ে দেওয়ার রীতি। শুধু সিঁথিতেই নয়, গালে, কপালে, হাতে সর্বত্র সিঁদুর লেপে দেওয়া যেন আর শুধুই ধর্মীয় আচার নয়, সামাজিক পরব।

দুর্গাপুজোর অঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে গিয়েছে সিঁদুর খেলা। শুধু বিবাহিতারা নন, কুমারীরাও সিঁদুর খেলেন বাংলয়। হিন্দু বিবাহ রীতিতে সিঁদুরদান একটিলৌকিক আচার মাত্র। তবে প্রাচীন কাল থেকেই বিবাহিত নারীরা স্বামীর মঙ্গলকামনায় সিঁথিতে সিঁদুর পরে আসছেন। দেবী দুর্গাও বিবাহিত নারী। তাই তিনিও সিঁদুর ব্যবহার করেন। দুর্গা পুজোয় যে সব উপচার দেবীকে দান করতে হয়, তার মধ্যে সিঁদুর রয়েছে। দেবীর কাছে প্রার্থনা জানিয়ে বলা হয়– ‘‘সর্বলোকের রঞ্জন পরমসৌন্দর্যযুক্ত সিন্দুর তিলক তোমার কপালকে মণ্ডিত করুক।’’

‘ভবিষ্য পুরাণ’-এ বলা হয়েছে, সিঁদুর স্বয়ং ব্রহ্মের প্রতীক। বিবাহিত নারী সিঁথিতে সিঁদুর দিয়ে পরম ব্রহ্মকে আহ্বান করেন। সবের পিছনেই রয়েছে স্বামীর মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনা।

‘শ্রীমদভাগবত’-এ কাত্যায়নী ব্রত উপলক্ষ্যে গোপিনীদের সিঁদুর খেলার বিবরণও পাওয়া যায়। সেটা অবশ্য প্রিয়তম কৃষ্ণের মঙ্গল কামনায়।

মনে করা হয়, সিঁদুরের দেবতা পরমব্রহ্ম সংসারের সকল দুঃখ বাধা কষ্ট দূর করেন। সুখ উপহার দেন ভক্তদের। তাই তো আজকের যুগেও দশমীর দিনে সিঁদুর খেলার এত আয়োজন। মা দুর্গা পুজো পান দেবী রূপে, বিদায় নেন কন্যা রূপে। কিন্তু বিদায় বেলায় এয়োস্ত্রীরা নতুন বস্ত্রে বরণ করেন দেবীকে। দেবীবরণ শেষে নিজের স্বামীর মঙ্গল ও দীর্ঘায়ু কামনায় সিঁদুর খেলা করেন বিবাহিত মেয়েরা৷

Previous articleবাগবাজারের বিজয়াদশমী
Next articleউমা চললেন ,ঘাটে ঘাটে বিসর্জনের ভিড়: দেখুন ভিডিও

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here