দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শুভেন্দু অধিকারী কখনও তাঁর বিশ্বস্ত ছিলেন না, এমনটাই এ বার দাবি করলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই শুভেন্দু অধিকারী, যিনি তৃণমূলের টিকিটে ২০০৯ ও ২০১৪ সালে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন, ২০১৬ সালে বিধায়ক ও মমতার মন্ত্রিসভায় সদস্য হয়েছিলেন এবং এক সময়ে তৃণমূলের যুব সভাপতিও হয়েছিলেন।গত বছর ডিসেম্বরে তৃণমূল ছেড়ে শুভেন্দু অধিকারী যোগ দেন বিজেপি-তে।
রাজনীতির পাকেচক্রে এ বারের বিধানসভা ভোটে নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর বিরুদ্ধে বিজেপির প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারী।
বৃহস্পতিবার এক টেলিভিশন-সাক্ষাৎকারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘ও (শুভেন্দু) কখনও আমার বিশ্বস্ত ছিল না। নন্দীগ্রামে মিটিং করতে গিয়েছি, স্টেজ থেকে নেমে গিয়েছে।’ শুধু তাই নয়, ২০০৭ সালের নভেম্বরে নন্দীগ্রামে ‘অপারেশন সূর্যোদয়’ তথা সিপিএমের এলাকা পুনর্দখল অভিযানের সাফল্যের পিছনেও শুভেন্দু ও তাঁর বাবা শিশির অধিকারীর দিকে এ দিন অভিযোগের আঙুল তুলেছেন মমতা, অবশ্য পিতা-পুত্র কারও নাম না-করে। তাঁর কথায়, ‘বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নন্দীগ্রামে বাপ-ব্যাটাকে কনফিডেন্সে নিয়ে সূর্যোদয় করেছিলেন। পরে আমি বিশদে সব জানতে পেরেছি। দরকার হলে লক্ষ্মণ শেঠকে জিজ্ঞেস করুন। দলে ছিল। তাই সহ্য করেছি।’
এর আগে নন্দীগ্রামে ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ পুলিশের গুলিতে জমি রক্ষার আন্দোলনে যোগ দেওয়া ১৪ জনের প্রাণহানি নিয়েও নাম না-করে শিশির-শুভেন্দুকে বিঁধেছিলেন মমতা। নন্দীগ্রামে ভোটের ঠিক আগে মমতা মন্তব্য করেন, সেই ১৪ মার্চ পুলিশ বাহিনীকে নন্দীগ্রামে ঢুকতে সাহায্য করেন ‘বাপ-ব্যাটা’।
এ দিনের টেলিভিশন-সাক্ষাৎকারে মমতা এটাও জানিয়েছেন, এ বার, নন্দীগ্রামে ভোটের দিন তিনি সেখানকার বয়ালে একটি প্রাথমিক স্কুলের বুথ আগলে টানা দু’-আড়াই ঘণ্টা পড়েছিলেন রিগিং রুখতেই। অর্থাৎ এ ক্ষেত্রেও প্রকারান্তরে তিনি দায়ী করেছেন নন্দীগ্রামের বিজেপি প্রার্থী শুভেন্দু অধিকারীকে।
এ দিন মমতা বলেন, ‘নন্দীগ্রামে ১০ টি বুথে রিগ করেছে (বিজেপি)। আমি তিন ঘণ্টা বয়ালে বসে না-থাকলে ৭০টি বুথে ওরা রিগ করার পরিকল্পনা করেছিল। এমনি এমনি আমি ওখানে বসেছিলাম না। ওখানে আমাদের এজেন্টকে বসতে দেয়নি। মেরে মুখ ফাটিয়ে দিয়েছে।’ তাঁর কথায়, ‘কেন্দ্রীয় বাহিনী বুথের গেটে দাঁড়িয়ে ছিল। পরিচয়পত্র দেখছিল। কেন্দ্রীয় বাহিনী কেন পরিচয়পত্র দেখবে?’
বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘নন্দীগ্রামে ১৪ মার্চ কী হয়েছিল, সেটা ওঁর মুখ দিয়েই বেরিয়ে গিয়েছে। এখন শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন। সিবিআই তদন্ত করে কী বলেছি, তা উনি কী জানেন না?’
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলছেন, ‘যতদিন যাবে, তৃণমূল নেত্রীর অভিযোগের তালিকা আরও দীর্ঘ হবে। পুলিশ-প্রশাসন ওঁর হাতে রয়েছে, তার পরেও বিজেপি রিগিং করেছে, এই অভিযোগ কেউ বিশ্বাস করবে? রাজ্যের মানুষ এতটা অচেতন নয়। রিগিং কারা করে, সেটা মানুষ তো সেই পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই দেখে আসছে।’
তৃণমূল নেত্রী এ দিন স্বীকার করেন যে, কিছুটা আবেগতাড়িত হয়েই তিনি নন্দীগ্রামে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তবে তাঁর কথায়, ‘নন্দীগ্রামের ফল কী হবে, সেটা মানুষ ঠিক করবে। মানুষ যে ফল দেবে, হবে। মানুষের উপর আমার বিশ্বাস রয়েছে। নন্দীগ্রামের ফল কী হবে, দেখতে পাবেন।’
সারা রাজ্যেই তৃণমূল ফের বড় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করবে বলে এ দিন দাবি করেছেন তৃণমূল নেত্রী। তাঁর কথায়, ‘মানুষের উপর আমার বিশ্বাস রয়েছে। এই লড়াই বাংলা মায়ের ইজ্জত রক্ষার লড়াই। এই ভোটে মা-বোনেরা বড় ভূমিকা পালন করবেন। তাঁরা তৃণমূলকে সমর্থন করবেন। তৃণমূল দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবে।’