

কলকাতা: সাতসকালে কলকাতায় ফের অগ্নিকাণ্ড। শনিবার ভোরে লালবাজারের কাছে এজ়রা স্ট্রিটের একটি গুদামে আগুন লেগে যায়। এখনও তা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বরং দ্রুত আগুন ছড়াচ্ছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে দমকলের অন্তত ২৩টি ইঞ্জিন। ল্যাডারের সাহায্য নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী ইঞ্জিনের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করা হতে পারে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, শনিবার ভোর ৫টা নাগাদ গুদামে আগুন লেগে যায়। বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি এবং প্রচুর বৈদ্যুতিক তার ছিল গুদামে। মজুত করা ছিল অনেক দাহ্য পদার্থ। ফলে দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ভাল করে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই আগুনের লেলিহান শিখা গ্রাস করে আকাশ। চারদিক ঢেকে যায় কালো ধোঁয়ায়।
কী ভাবে এই আগুল লাগল, তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে বৈদ্যুতিন সামগ্রী থেকেই আগুন লেগেছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হচ্ছে। কেউ কেউ শর্ট সার্কিটের সম্ভাবনার কথা বলছেন। দমকল এখনও কিছু নিশ্চিত করতে পারেনি।

স্থানীয়রা বলছেন, এজরা স্ট্রিট এমনিতেই শ্বাস নেওয়ার জায়গা নেই। উপরে জটলা করা বৈদ্যুতিক তার, দু’পাশে পর পর দোকান, মাঝখানে সরু গলি। দমকল কর্মীরা মূল আগুনের উৎসে পৌঁছতেই পারছেন না। যে বিল্ডিংয়ে আগুন লেগেছিল, তার মাঝের অংশে ঢোকার উপায় নেই বললেই চলে। সামনের আগুন নেভানো গেলেও মাঝখানের অংশে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকায় ফের শিখা ছড়িয়ে পড়ছে পাশের বাড়িগুলিতে।
আগুনের তাপ এমনই তীব্র যে দমকলকর্মীদের ঢুকতে কষ্ট হচ্ছে। এ অবস্থায় আশেপাশের বাসিন্দারাই বালতি, পাইপ, বোতল— যা পেয়েছেন তাই নিয়ে ছুটে এসে জল ঢেলে সাহায্য করছেন।
এজরা স্ট্রিটের এই বাজারে রয়েছে প্রায় ৩০০–৩৫০টি ইলেকট্রিক ও লাইটের দোকান। অনেকের মালপত্র রীতিমতো রাস্তাতেই থাকে। আগুন বাড়তেই সকাল থেকেই দেখা গেল আতঙ্কে ছুটতে ছুটতে নিজের জিনিস মাথায় তুলে, ঘাড়ে চাপিয়ে, কাঁধে নিয়ে দোকান থেকে বার করছেন ব্যবসায়ীরা। কেউ নিজের দোকানের শাটার খুলে যা পাচ্ছেন তাই ছুড়ে বার করে দিচ্ছেন।

গুদামে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা ছিল না, মেনে নিয়েছেন স্থানীয় কাউন্সিলরও। অভিযোগ, এই সমস্যা দীর্ঘ দিনের। তাই বার বার এখানে আগুন লাগে। কয়েক মাস আগেও এজ়রা স্ট্রিটে এমন অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, দাবি স্থানীয়দের। ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলি থেকে অনেককে সরানো হয়েছে।
পুলিশ ও দমকল সূত্রে খবর, ভোরে ওই গুদাম থেকে কালো ধোঁয়া বার হতে দেখে স্থানীয়েরাই দমকলকে জানান। ঘনবসতি এলকা হওয়ায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে গিয়েছে। গুদাম থেকে পাশের আবাসনেও ছড়িয়ে পড়েছে আগুন। একাধিক বাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে খবর। ভিতরে কেউ আটকে পড়েছেন কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

যে দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত— তার মালিক ভেঙে পড়েছেন কান্নায়। তাঁর কথায়, “কয়েক কোটি টাকার মাল রাখতাম এখানে। চোখের সামনে সব শেষ হয়ে গেল।”
কেবল তাঁরই নয়, আশেপাশের বহু দোকানেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের মতে, এই আগুনে কয়েকশো কোটি টাকার পণ্য পুড়ে গিয়েছে।
বেলাগাম আগুনের তাণ্ডবে গোটা বড়বাজারজুড়ে এখন কার্যত হাহাকার। দমকলের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছে ব্যবসায়ীরা, দোকানকর্মীরা, এলাকার বাসিন্দারা। কিন্তু আগুনের দাপটে সব প্রচেষ্টাই যেন ক্ষীণ হয়ে আসছে। কলকাতার অন্যতম জমজমাট বাণিজ্যকেন্দ্রে নেমে এসেছে কালো ধোঁয়ার ছায়া— আর সেই সঙ্গে অসহায়তা, উৎকণ্ঠা, আর বিপুল ক্ষতির মেঘ।

দমকলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের অভিযোগ, দমকলে খবর দেওয়া হলেও তারা দেরিতে এসেছে। ফলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন দমকলকর্মীরা। মাথায় হাত ব্যবসায়ীদের।




