বাংলায় বাড়িভাড়া নিতেও কাটমানি লাগে, অভিযোগ মোদীর, মেট্রোপথে জুড়ল বরাহনগর-দক্ষিণেশ্বর, উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

0
765

দেশের সময়: ডানলপে জনসভার মাধ্যমে নির্বাচনী প্রচার সারলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শুরুতেই বললেন, ‘বাংলা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে।’ এদিন বাংলাতেই ভাষণ শুরু করেন তিনি। কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়নের খতিয়ানও দেন। বলেছেন, ‘রেল, মেট্রো প্রকল্পে সুবিধা হবে বাংলার।’ এদিনের বক্তব্যেও স্বজনপোষণ, কাটমানি, সিন্ডিকেট প্রসঙ্গ তোলেন তিনি। তৃণমূলকে এদিনও কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন দেশের প্রধানমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘তৃণমূল নেতাদের সম্পত্তি, চাকচিক্য বাড়ছে। তোলাবাজ থাকলে, কাটমানি কালচার থাকলে, আইনের শাসন না থাকলে পরিবর্তন হবে না বাংলায়।’ তাঁর অভিযোগ, ‘বাংলায় বাড়িভাড়া নিতে গেলেও কাটমানি লাগে। সিন্ডিকেটকে টাকা না দিলে তাও পাওয়া যাবে না।’

এদিন তিনি বলেন, ‘সরকারি একাধিক প্রকল্প থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলা। পরিশ্রুত জলের থেকেও বঞ্চনা করা হয়েছে। এখানে শিল্পের কী অবস্থা তা সকলের জানা। বাংলায় আসল পরিবর্তন দরকার। এই জন্যই বিজেপি-কে আনা দরকার।’ হলদিয়ার মতোই এখানের জনসভায় দাঁড়িয়েও তিনি মন্তব্য করেছেন, ‘এই সরকারকে মানুষ ক্ষমা করবে না।’ আলু চাষ থেকে আখচাষিদের অবস্থার কথাও প্রধানমন্ত্রীর এদিনের বক্তব্যে ঠাঁই পেয়েছে। বলেছেন, ‘একটা সময় ছিল যখন বাংলার পাট শিল্প গোটা দেশের চাহিদা মেটাত। কিন্তু, সেই শিল্পকেও বাঁচানো যায়নি। কত শত মানুষ এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই পাট শিল্পকে বাঁচাতে নতুন করে উদ্যোগী হয়েছে। হুগলির আলুচাষিদের কী অবস্থা, তাও কারও অজানা নয়। এখানকার আলু ধানচাষিদের কে লুঠ করছে তা আমার থেকে আপনারা ভালো জানেন।’

তাঁর অভিযোগ, ‘বাংলায় বিনিয়োগ করার লোকের অভাব নেই। কিন্তু এখানকার সরকার যে পরিবেশ তৈরি করেছে, যে ভাবে সিন্ডিকেটের হাতে বাংলাকে তুলে দেওয়া হয়েছে, তাতেই কেউ আর উৎসাহ দেখাচ্ছে না।’

এদিন নোয়াপাড়া ছাড়িয়ে কলকাতা মেট্রো এগিয়েছে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত। সোমবার বিকেলে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সেই সম্প্রসারিত অংশের উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তবে নোয়াপাড়া-দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর উদ্বোধন করা হলেও যাত্রীদের জন্য এর পরিষেবা শুরু হবে ২৩ ফেব্রুয়ারি, মঙ্গলবার।
শহরের মেট্রোপথে নতুন স্টেশন জুড়লেও এর সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ ভাড়ায় কোনও বদল হচ্ছে না। ফলে কবি সুভাষ থেকে ২৫ টাকাতেই পৌঁছনো যাবে দক্ষিণেশ্বরে!

সোমবার হুগলি জেলার সাহাগঞ্জ সংলগ্ন ডানলপ মাঠে একটি জনসভা করেন মোদী। মোদীর সভার জন্য ওই মাঠে দু’টি মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। কারণ, এই সভা থেকে বেশ কয়েকটি সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধন করা ছাড়াও রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি।
বরাহনগর এবং দক্ষিণেশ্বর স্টেশনের উদ্বোধনের অনুষ্ঠানে মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী-সহ কয়েক জন আধিকারিককে ওই মঞ্চে ছিলেন।

এদিন সবুজ পতাকা দেখিয়ে দক্ষিণেশ্বর মেট্রোর উদ্বোধন করলেন মোদী। তিনি বলেন
এই নতুন রেল লাইনগুলি থেকে জীবন সহজ হবে। এগুলিই আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষণ।
গত ৬ বছরে পশ্চিমবঙ্গে অনেক উড়ালপুল তৈরি করা হয়েছে।
কলকাতা ছাড়াও হুগলি-হাওড়া এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলায় মেট্রোর পরিষেবার সুবিধা পাবেন মানুষজন।

দেখুন এ দিনের মোদীর বক্তৃতার ভিডিও:

ব্যান্ডেলের সাহাগঞ্জে বন্ধ ডানলপ কারখানার মাঠে রাজনৈতিক সভা করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বক্তৃতা এক নজরে—

• বাংলার মানুষ মনস্থির করে ফেলেছেন, এ বার পরিবর্তন আনতেই হবে।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে ফের রাজ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। হুগলির সাহাগঞ্জে বিশাল জনসভায় বিজেপি-র হয়ে নির্বাচনী ভাষণ বক্তৃতা করছেন তিনি। কয়লা কাণ্ডে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী-কে সিবিআই তলব করা নিয়ে এই মুহূর্তে উত্তাল রাজ্য রাজনীতি। এমন পরিস্থিতিতে মোদীর বঙ্গসফর গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
সোমবার নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রোর উদ্বোধনও করার কথা প্রধানমন্ত্রীর। তবে তৃণমূল এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিয়ে তিনি কী বলেন, এ দিন সেদিকেই তাকিয়ে সকলে। কারণ রবিবারই বঙ্গ নির্বাচন নিয়ে দিল্লিতে দিনভর বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত ছিলেন তিনি। দিন ক্ষণ ঘোষণার আগে সকলের সঙ্গে দলের নির্বাচনী রণকৌশল নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা সারেন।

’২১-এর নির্বাচন যে তাঁদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এ কথা বার বার শোনা গিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বের মুখে। তবে শুধু রাজ্য নেতৃত্বের উপর ভরসা করে বসে নেই দল। তার জন্যই নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, বাংলায় মোদী, অমিত শাহ, জেপি নড্ডার মতো গেরুয়া শিবিরের শীর্ষ নেতৃত্বের আনাগোনা ততই বাড়ছে।


বাংলা বদল চাইছে। এ ব্যাপারে মনস্থির করে ফেলেছে।


যে সব দেশ উন্নতি করেছে বা যারা উন্নতিশীল, তাদের মধ্যে অভিন্ন একটি বিষয় দেখা যায়। তা হল, এরা সকলেই আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণের পথে হেঁটেছে। সেটাই তাদের আরও আধুনিক করে তুলেছে।


আমাদের দেশেও আধুনিক পরিকাঠামো নির্মাণ করার দরকার ছিল। তা হয়নি। আমাদের এখন এক মুহূর্ত দেরি করলে চলবে না। সেই কারণেই গোটা দেশে পরিকাঠামো নির্মাণে জোর দেওয়া হয়েছে।


বাংলাতেও যোগাযোগ ও পরিবহণ সংক্রান্ত পরিকাঠামো নির্মাণে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। আমাদের সরকার তাই করেছে।
বাংলায় পরিকাঠামো নির্মাণে কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। রেল লাইনের সম্প্রসারণ ও বৈদ্যুতিকরণের কাজ চলছে। পূর্বের পণ্যবাহী করিডর থেকে বাংলার অনেক বড় লাভ হবে।

উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলি জেলার ছাত্রছাত্রী, চাকরিজীবিদের আজ আনন্দের দিন। নোয়াপাড়া থেকে দক্ষিণেশ্বর পর্যন্ত মেট্রো রেলের সম্প্রসারণের ফলে বহু মানুষের সুবিধা হবে।


এখানে যাঁরা ক্ষমতায় রয়েছেন তাঁরা পরিকাঠামো উন্নয়নের ব্যাপারে উদাসীন ছিলেন।


দেশভক্তির পরিবর্তে ভোট ব্যাঙ্ক, সবার কল্যাণের পরিবর্তে তুষ্টিকরণের রাজনীতিতে এখানে হাওয়া দেওয়া হয়েছে।
এমনকি দুর্গাপুজো করতে গিয়েও বাধা পেতে হয়েছে। বাংলার মানুষ এ সব সহ্য করবে না।
বাংলায় বিজেপি সরকার গঠন হলে, সব বাঙালি নিজের সংস্কৃতির গৌরব গান নিঃসঙ্কোচে করতে পারবেন। কেউ তাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।


এমন বাংলা গড়ব যেখানে সবার কল্যাণ হবে কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের প্রতি তুষ্টিকরণ হবে না।

এমন বাংলা গড়ব যেখানে কোনও তোলাবাজি থাকবে না।


স্বাধীনতার আগেও বাংলা অগ্রসর জনপদ ছিল। কিন্তু এখানে যাঁরা শাসন করেছে তাঁরা উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।
তৃণমূলের নেতারা শান আর সম্মান বেড়ে চলেছে আর গরিবরা আরও গরিব হয়ে যাচ্ছে।
স্রেফ রাজনীতির জন্য বাংলায় আয়ুষ্মান যোজনা প্রকল্প বাস্তবায়িত করা হয়নি।


দেশের সব পরিবারের বাড়িতে পাইপ লাইনে জল সরবরাহের জন্য কেন্দ্র জল জীবন মিশন চালাচ্ছে। বাংলার জন্য এই মিশন আরও জরুরি। কারণ এখানে দেড় থেকে পৌনে দুই কোটি গ্রামীণ ঘরের মধ্যে স্রেফ ২ লাখ ঘরে পাইপ লাইনে জল পৌঁছয়। বলুন তো বাংলার কী অবস্থা করে রেখেছে!


ভারত সরকার পিছনে লেগে থেকে থেকে এখনও পর্যন্ত মাত্র ৯ লক্ষ ঘরে পাইপ লাইনে জল পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পেরেছে। এরকম চললে কত বছরে বাংলার সব ঘরে জল পৌঁছনো যাবে ভগবান জানে।

আমি আপনাদের প্রশ্ন করতে চাই, বাংলার লোকেদের শুদ্ধ পানীয় জল পাওয়ার অধিকার রয়েছে কি নেই?
এখানকার সরকারের সেই লক্ষ্যে কাজ করা উচিত কিনা।


কেন্দ্রের সরকার ১৭০০ কোটি টাকা জলের জন্য তৃণমূল সরকারকে দিয়েছিল। এর মধ্যে মাত্র ৬০০ কোটি টাকাই খরচ করেছে। বাকি ১১০০ কোটি টাকা নিয়ে বসে রয়েছে।
বাংলার মা-বোনের এতে অসুবিধা হচ্ছে কিনা! বাংলার মেয়েদের সঙ্গে অন্যায় যারা করেছে তাদের কি মাফ করে দেওয়া যায়?


বাংলায় তাই আসল পরিবর্তন আনতে হবে। তার আশায় বাংলার নতুন প্রজন্ম রয়েছে।
হুগলিতে গঙ্গার তীরে লোহা আর ইস্পাতের কারখানা ছিল। সেই কারখানা গমগম করত। সেই সব কারখানার আজ কী অবস্থা! এখন বাংলার লোকেদের কাজের জন্য অন্য রাজ্যে যেতে হচ্ছে।


বাংলায় শিল্পায়ণের নীতিতে পরিবর্তন আনবে, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, যাতে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

এক সময়ে পাট শিল্পে বাংলায় প্রথম স্থানে ছিল। এখন সেই শিল্পের প্রতিও এখানকার সরকার উদাসীন।


হুগলির আলু চাষীদের দুরবস্থার কথাও কারও অজানা নয়। তাদের কে লুটছে তাও সবাই জানে। যতদিন এখানে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র গড়ে উঠছে ততদিন চাষীদের কল্যাণ হবে না।
বাংলার মানুষের উদ্যমের অভাব নেই। সমস্যা হল এখানে উন্নয়নের পরিবেশ নেই।
কাটমানি, সিন্ডিকেটের চক্করে এখানে উন্নয়ন থমকে রয়েছে।


ভাড়ায় বাড়ি নিলেও কাটমানি দিতে হয়। এরা দুদিক থেকেই কাটমানি নেয়।

Previous articleমার্চের প্রথম সপ্তাহেই ভোটের দিন ঘোষণা, ইঙ্গিত প্রধানমন্ত্রীর
Next articleপ্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ হাইকোর্টের, ভোটের আগে বড় ধাক্কা খেল রাজ্য-সরকার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here