লাইভ আপডেট : টিএমসি(TMC)ছাড়ার হিড়িক, কালীঘাটে আজ জরুরি বৈঠক মমতার

0
1356

দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ একের পর এক নেতা ছাড়ছেন তৃণমূল। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি এসেছে মেদিনীপুর থেকে। বৃহস্পতিবারই দল ছেড়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আরও অনেকে পা বাড়িয়ে। এ হেন পরিস্থিতিতে আজ দলীয় নেতৃত্বকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷

বিধানসভা ভোটের আগেই যে শুভেন্দু অধিকারী দল ছাড়বেন, তা ধরেই নিয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু, একই দিনে শুভেন্দু ছাড়াও আরও দুই নেতা টিএমসি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার পরই আজ, শুক্রবার কালীঘাটের বাড়িতে জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফলে, আলোচনায় যে দলের বিদ্রোহী বিধায়কদের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

তৃণমূল কংগ্রেসকে কটাক্ষ অধীরের:

তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস। এটাই তৃণমূলের নিয়তি। বর্ধমানে সভায় বললেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।

পুরুলিয়াতেও ভাঙন:

পুরুলিয়া জেলাতে তৃণমূল ছাড়লেন প্রথমসারির বেশ কয়েকজন নেতা। তৃণমূলের পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর পৌরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা বর্তমান পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল সাধারণ সম্পাদক ও পুরুলিয়ার বলরামপুর পঞ্চায়েত সমিতির জয়ী সদস্য সুদীপ মাহাতো।

মালদায় সংখ্যালঘু কর্মীরা তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে:

শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফার পর থেকেই মালদা জেলা তৃণমূলে ভাঙ্গন শুরু হয়ে গিয়েছে।একাধিক পঞ্চায়েত সদস্য,অঞ্চলের নেতারা পদত্যাগ করেছেন। এরকম আবহতেই এবার মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর এ তৃণমূলের সংখ্যালঘু কর্মীরা যোগ দিলেন বিজেপিতে।

শীলভদ্রও তৃণমূল ছাড়লেন, মমতাকে চিঠি লিখে ইস্তফা ব্যারাকপুরের বিধায়কের:

তৃণমূল কংগ্রেস ছাড়লেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি পদত্যাগ করলেন তিনি।

শুভেন্দু অধিকারী, কর্নেল দীপ্তাংশু চৌধুরী, জিতেন্দ্র তিওয়ারি, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের পর এবার ব্যারাকপুরের বিধায়ক শীলভদ্র দত্ত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে দলের প্রথমিক সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তিনি।
দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে শীলভদ্রের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। প্রশান্ত কিশোরের টিম তাঁর বাড়িতে গিয়েছিল। লাভ হয়নি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকও গিয়েছিলেন শীলভদ্রকে বোঝাতে। দেখাই করেননি। এবার দল ছেড়ে দিলেন তিনি।

সরল মমতার ছবি:

দল ছাড়ার পরেই শীলভদ্র দত্তের বাড়ি ও অফিস থেকে সরানো হল তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি ও ব্যানার।

এ ব্যাপারে শীলভদ্র দত্ত জানিয়েছেন তিনি এখনও কিছু ঠিক করেননি। তবে তাঁর অফিসের ভোল বদলে গিয়েছে রাতারাতি। জোড়া ফুল সরে গিয়ে গেরুয়া ব্যানারে স্বামী বিবেকানন্দের ছবি। অনেকে বলছেন, ইঙ্গিত স্পষ্ট।
গত এক-দেড় মাসে শীলভদ্রবাবুকে একাধিকবার মুকুল রায়ের সল্টলেকের বাড়িতে দেখা গিয়েছে। বহুদিন ধরেই শীলভদ্র মুকুলবাবুর ঘনিষ্ঠ। অনেকের মতে, বোঝাই যাচ্ছিল এটা হবে।

শীলভদ্র দত্তর বাঁচার কথা ছিল না:

শীলভদ্র দত্তের তো বাঁচার কথাই ছিল না। লিভারের জটিল অপারেশনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহায়তায় আরোগ্য লাভ করেন। সেই শীলভদ্র দত্ত স্থানীয় কারও সঙ্গে মতবিরোধে যদি দল ছাড়েন, তা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক,’ বললেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরাদ হাকিম।

শীলভদ্রকে কটাক্ষ কুণাল ঘোষের:

শীলভদ্র দত্ত দল ছাড়ার পরেই তীব্র কটাক্ষ করলেন তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। বললেন, ‘২০১৬ সালে যখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, আমিই ২৯৪টি আসনে প্রার্থী, তখন এঁরা সবাই কোথায় ছিলেন? তখন তো কেউ কিছু বলেননি। যাঁরা বিজেপি-তে দীর্ঘ দিন ধরে এই সব নেতাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন, তাঁরা এ বার সেই নেতাদের নিয়ে জিন্দাবাদ বলতে পারবেন তো?

অন্যদিকে পুরুলিয়াতেও তৃণমূলে ভাঙন। দল ছাড়লেন রঘুনাথপুর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান ভবেশ চট্টোপাধ্যায়। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকেও ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। শুভেন্দু অনুগামী বলে পরিচিত তৃণমূলের প্রাক্তন নেতা। সম্প্রতি পুরুলিয়ায় শুভেন্দুর দুটি সভাতেও হাজির ছিলেন রঘুনাথপুর পুরসভার প্রাক্তন পুর প্রধান। বছরখানেক আগে দলের সঙ্গে মতান্তরের জেরে তাঁকে পুর প্রধানের পদ থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
কার্যত তৃণমূল ছাড়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে জেলায় জেলায়। বিধায়ক, জেলা পরিষদের সদস্য, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি, ব্লক সভাপতি জেলায় জেলায় চলছে ইস্তফা। অনেকের মতে, এঁরা সবাই হয়তো তাকিয়েছিলেন শুভেন্দু অধিকারীর দিকে। দেখা যাচ্ছে শুভেন্দু দল ছাড়ার পরেই তা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।

সূত্রের খবর, দলের ভাঙন ঠেকানোর রাস্তা খুঁজতেই কালীঘাটের বাড়িতে শুক্রবার বিকেলে জরুরি এই বৈঠক ডেকেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ভোট কুশলী প্রশান্ত কিশোরকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। উপস্থিত থাকবেন সুব্রত বক্সি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিমের মতো শীর্ষ নেতারাও। এই ভাঙনের সময় দলকে কী করে একসূত্রে বাঁধা যায়, সেই কৌশল খুঁজবেন তৃণমূল নেত্রী।

শুভেন্দু অধিকারী ঘনিষ্ঠ মহলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তাঁর সঙ্গে আরও ১০ বিধায়ক তৃণমূল ছাড়বেন। বৃহস্পতিবার শুভেন্দু ছাড়াও দলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন আসানসোলের বিদায়ী মেয়র, পুর প্রশাসক তথা পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক জিতেন্দ্র তিওয়ারি ও রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী, বাঁকুড়া জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়।

আসানসোলের পুর প্রশাসক জিতেন্দ্র তিওয়ারি বিদ্রোহ করার পরেই বুধবার উত্তরবঙ্গ থেকে আসানসোলের পুর প্রশাসককে সরাসরি ফোনে ধরেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন, মাথা ঠান্ডা রাখতে। ১৮ ডিসেম্বর তিনি নিজে কথা বলবেন। কিন্তু, মমতার সেই আর্জি উপেক্ষা করেই জিতেন্দ্র সমস্ত পদ-সহ তৃণমূল ছেড়ে দেন।

কয়েকদিন আগেই উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগরে মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীনই উত্তর ২৪ পরগনার জেলা পরিষদের খাদ্য কর্মাধ্যক্ষের পদ থেকে পদত্যাগ করেছিলেন তৃণমূল নেতা রতন ঘোষ। তিনি তাঁর পদত্যাগপত্র জেলা পরিষদের সভাধিপতির অফিসে এবং জেলাশাসকের দফতরে জমা দেন। পদের পাশাপাশি দল থেকেও তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। আর প্রত্যাশামতোই তারপরই তিনি যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। কলকাতা হেস্টিংসের বিজেপি কার্যালয়ে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, এ রাজ্যের পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সায়ন্তন বসুদের হাত থেকে বিজেপির পতাকা তুলে নেন রতন ঘোষ। তবে শুধু তিনি নন, সেদিন তাঁর সঙ্গে উত্তর ২৪ পরগনার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতা যোগ দেন বিজেপি শিবিরে। এছাড়াও হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরের বেশ কয়েকজনও যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে।

এখানেই বিদ্রোহের ইতি নয়। বর্ধমান পূর্বের সাংসদ সুনীলকুমার মণ্ডলও বিজেপি-তে যোগ দিতে পারেন বলে খবর। আরও কয়েক জন বিধায়কের গতিবিধি সন্দেহজনক ঠেকছে শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে। শুধু বিধায়ক, সাংসদরাই নন, শাসক দলের উদ্বেগ বাড়িয়ে নিচুতলার অনেক নেতার গলাতেও ক্ষোভের সুর শোনা যাচ্ছে। উঠছে উপেক্ষা, বঞ্চনার অভিযোগ। এমতবস্থায় শুক্রবার বিকলের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

তৃণমূল নেত্রী মুখে যদিও বলছেন, তিনি বিদ্রোহীদের গুরুত্ব দিতে নারাজ। যাঁরা বেরিয়ে যাওয়ার বেরিয়ে যাক। তৃণমূলের শীর্ষ নেতারাও সুপ্রিমোর সুরে একই কথা বলছেন। কিন্তু, বিধানসভা ভোটের মুখে একে-একে দলছুটের সংখ্যা বাড়ায়, অশুভ সংকেত দেখছে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই দলের মধ্যে ক্ষোভ প্রশমন করে, কী ভাবে ভাঙন রোধ করা যায়, সেই রণকৌশল স্থির করতেই শুক্রবারের এই বৈঠক। বিজেপি-র মোকাবিলা করার থেকেও তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ এখন ভাঙন ঠেকানো।

Previous articleফোটো ফাইট:Photo fight//Editor’s Choice Picture
Next articleকৈলাস-মুকুল-অর্জুনদের মতো বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে দমনমূলক ব্যবস্থা নয়: রাজ্যকে সুপ্রিম কোর্ট

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here