দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেছিলেন, লকডাউনকে অনেকে তোয়াক্কাই করছেন না। সেইসঙ্গে রাজ্যগুলির উদ্দেশে বলেছিলেন, আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা। ঘরে থাকার আর্জি জানিয়ে এদিনও আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী,মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কে শোনে কার কথা! লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরও কলকাতার অলিতেগলিতে চলছিল আড্ডা, জটলা। আর তা ভাঙতেই সোমবার বিকেল পাঁচটার পর থেকে রাত পর্যন্ত ২৫৫জনকে গ্রেফতার করল কলকাতা পুলিশ।
কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা আবেদন জানিয়ে বলেছেন, “ঘরে থাকুন। প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা করুন।” হুঁশিয়ারির সুরে নগরপাল জানিয়ে দিয়েছেন, কলকাতার আনাচেকানাচে পুলিশি অভিযান চলবে।
গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতে ৭৫জনের শরীরে কোভিড-১৯ পজিটিভ মিলেছে। সোমবার মৃত্যু হয়েছে দু’জনের। এরপরই কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত নেয় ৩০টি রাজ্যে পূর্ণ লকডাউনের। মোট ৫৪৮টি জেলা পড়ছে লকডাউনের আওতায়।
তার মধ্যে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা থাকলেও গাইঘাটার ঠাকুরনগর গ্রামপঞ্চায়েত হওয়ায় অর্থাৎ পুরসভার আওতায় না থাকার কারণে এখানে আইনত লকডাউন ঘোষণা করেনি প্রশাসন। এই সুযোগটাকেই কাজে লাগাচ্ছেন স্থানীয় ব্যাবসায়ীরা।দিবারাত্রী খোলা থাকছে সমস্ত দোকানপাট আর সেখানে ভিড় জমাচ্ছেন সাধারণ মানুষ৷ বনগাঁ দক্ষিণের বিধায়ক সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের তৃণমূলের কর্মী সহ স্থানীয় ক্লাবের সদস্যরা বারংবার সমস্ত ব্যাবসায়ীদেরকে করোনা সতর্কতার কথা বলা সত্বেও তাঁদের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই৷ বিষয়টি লিখিতভাবে অতিরিক্ত জেলাশাসক সহ রাজ্যের খাদ্য মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক কে জানানো হয়েছে। তিনি আরও জানান ঠাকুরনগর এলাকায় প্রায় পঁচিশ হাজার মানুষ বসবাস করেন এবং অনেক মানুষ বাইরে বিভিন্ন কাজের জন্য থাকেন, তাঁদের অনেকেই এই সময় মতুয়া মেলার জন্য বাড়ি ফিরেছেন৷ তাঁরা কোথায় কিভাবে রয়েছেন সেটাই বিশেষ চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় টেরাকোটা শিল্পী আশিষ বিশ্বাস জানান, তাঁর টেরাকোটার কারখানায় অনেক মহিলা শ্রমিক কাজ করেন, তাঁদেরকে অনেক আগেই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে,কিন্তু খুবই আতঙ্কের বিষয় ঠাকুরনগরবাসীদের কেন ঘুম ভাঙছে না এখনও!এত গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় করোনা কে উড়িয়ে দিয়ে অন্য সাধারণ দিনের মত চলাফেরা করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছেন বলেই ধারনা৷
স্থানীয় বিধায়ক পুলীন বিহারী রায়কে টেলিফোনে যোগাযোগ করা যায়নি এদিন৷
কলকাতায় এক করোনা আক্রান্তের মৃত্যু হয়েছে সোমবার। পরিস্থিতি যখন ক্রমশ জটিল হচ্ছে তখনও জনগণের একাংশের মধ্যে উদ্বেগের লেশমাত্র নেই।
রবিবার জনতা কার্ফুর দুপুর থেকেই একের পর এক রাজ্য লকডাউন ঘোষণা করতে শুরু করে দেয়। কিন্তু তা ছিল আংশিক। বাংলাতেই যেমন বেছে বেছে এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করেছিল নবান্ন। কিন্তু সোমবারের অভিজ্ঞতা দেশজুড়ে বিশেষ ভাল না। রাজ্যের যেসব জায়গায় লকডাউন ছিল না সেসব জায়গায় দেখা গিয়েছে বাজার-হাট, চায়ের দোকানে ভিড় জমিয়ে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
খেলার মাঠে চলছে চুটিয়েখেলাধূলা। সন্ধের পর থেকেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করে বাংলার বহু জেলায়। জটলা দেখলেই লাঠি নিয়ে তাড়া করে.পুলিশ। বহু জায়গায় নামানো হয় কেন্দ্রীয় বাহিনীও। কলকাতায় গ্রেফতারির সংখ্যা দেখেই ঠাওর হচ্ছে প্রশাসন ঠিক কতটা কড়া হাতে করোনাভাইরাস মোকাবিলা করতে চাইছে।
সোমবার রাতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের ড্যাশবোর্ড অনুযায়ী ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছে গিয়েছে ৪৭১-এ। এরমধ্যে রয়েছেন ৪১জন বিদেশি নাগরিক। অনেকের বক্তব্য ভারতে করোনা ভাইরাস তৃতীয় স্টেজ অর্থাৎ গোষ্ঠী সংক্রমণে ঢুকে গিয়েছে। এদিন বিকেলেই ডোমেস্টিক তথা অভ্যন্তরীণ বিমান পরিষেবাও বন্ধ করে দিয়েছে কেন্দ্র। এবার লকডাউনকে সম্পূর্ণ করতে রাস্তায় নেমে পড়ল প্রশাসন।
সীমান্ত শহর বনগাঁয় পুরসভার উদ্যোগে করোনা নিয়ে সচেতনতার মাইক প্রচার চলছে দিন রাত্রি।সীল করে দেওয়া হয়েছে পেট্রাপোল সীমান্ত।