দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ শনিবার দুপুরে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে রাজ্যে লকডাউন ঘোষণা করেছেন মুখ্য সচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যে করোনা সংক্রমণ বাড়তে থাকায় কড়া পদক্ষেপ করল রাজ্য সরকার। রবিবার, ১৬ মে থেকে ১৫ দিন, অর্থাৎ ৩০ মে পর্যন্ত রাজ্যে কার্যত লকডাউন ঘোষণা করেছে নবান্ন। সেই সঙ্গে সরকার জানিয়ে দিয়েছে, কোভিড বিধি না মানা হলে মহামারি আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে রাজ্য সরকার।
নবান্নের তরফে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কোনও জরুরি প্রয়োজন না থাকলে কড়াকড়ি চলাকালীন রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত বাইরে বেরনো যাবে না। ওই নির্ধারিত সময়ে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি করলে পুলিশ আটক করতে পারে। এবং সে ক্ষেত্রে মহামারি আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে রাজ্য। নবান্ন সূত্রে খবর, গত বার লকডাউনের সময়ও নানা অজুহাতে বাইরে বার হচ্ছিলেন মানুষ। কিন্তু এই মুহূর্তে করোনার যা প্রকোপ, গত বছর তা ছিল না। তাই নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখেই রাত থেকে ভোর পর্যন্ত অযথা বাইরে বেরনো নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কেউ নিয়ম না মানলেই কড়া ব্যবস্থা নেবে সরকার।
রবিবার থেকে ১৫ দিনের জন্য এই লকডাউন চলবে। কী কী বন্ধ থাকবে একনজরে:
১। সমস্ত স্কুল, কলেজ, পলিটেকনিক, আইটিআই, অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
২। সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। কেবল জরুরি পরিষেবা সংক্রান্ত দফতর খোলা থাকবে। যেমন, স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ, সংবাদমাধ্যম, পুরসভা, দমকল, পশু স্বাস্থ্য, আদালত, সমাজ কল্যাণ, টেলিকম, বিপর্যয় মোকাবিলা এবং সৎকারের কাজ।
৩। শপিং কমপ্লেক্স, মল, বিউটি পার্লার, জিম, সুইমিং পুল, সিনেমা হল সমস্ত বন্ধ থাকবে।
৪। খুচরো ও পাইকারি দোকান, বাজার-দোকান সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
৫। মিষ্টির দোকান সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
৬। ওষুধের দোকান এবং চশমার দোকান খোলা থাকবে।
৭। পার্ক, চিড়িয়াখানা, অভয়ারণ্য সবই বন্ধ থাকবে।
৮। রাজ্যের মধ্যে সমস্ত লোকাল ট্রেন, বাস, মেট্রো রেল, লঞ্চ ও ফেরি সার্ভিস বন্ধ থাকবে। শুধু ইমার্জেন্সি পরিষেবার কর্মীদের জন্য কিছু পরিষেবা চালু থাকবে।
৯। বেসরকারি গাড়ি, ট্যাক্সি, অটো রিকশ চলাচল বন্ধ থাকবে। শুধু হাসপাতাল, সংবাদমাধ্যমের অফিস, বিমানবন্দরে যাওয়ার জন্য গাড়ি চলতে পারবে।
১০। সমস্ত আন্তঃরাজ্য ট্রাক চলাচল ও পণ্য সরবরাহ বন্ধ থাকবে। কেবল মেডিকেল সাপ্লাই, জ্বালানি, অক্সিজেন সাপ্লাই এবং দুধ, ডিম মাংস সরবরাহের জন্য ট্রাক বা পণ্য পরিবহণ করা যাবে।
১১। সমস্ত রকম রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক জমায়েত বন্ধ থাকবে।
১২। সমস্ত কলকারখানা ও উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। শুধু খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, ডিম, দুধ, মাংস প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্র, জরুরি সামগ্রী উৎপাদন প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে।
১৩। চা বাগানে কাজ চলতে পারে। যে হেতু বহু শ্রমিকের জীবিকা এর সঙ্গে যুক্ত। তবে প্রতি শিফটে ৫০ শতাংশ কর্মী কাজ করতে পারবেন।
১৪। জুট মিলগুলি ৩০ শতাংশ কর্মী নিয়ে কাজ করতে পারে।
১৫। ই-কমার্স ও হোম ডেলিভারি চালু থাকবে।
১৬। ব্যাঙ্ক পরিষেবা খোলা থাকবে। তবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত খোলা থাকবে।
১৭। পেট্রল পাম্প, এলপিজি সার্ভিস খোলা থাকবে।
১৮। সংবাদমাধ্যম খোলা থাকবে।
১৯। বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারবে। কিন্তু বিবাহ বাসরে ৫০ জনের বেশি থাকতে পারবে না।
২০। সৎকারে ২০ জনের বেশি যেন না থাকে।
২১। রাত ৯টা থেকে সকাল ৫টা পর্যন্ত সবরকম বাইরের মুভমেন্ট বন্ধ থাকবে। একমাত্র জরুরি পরিষেবা খোলা থাকবে। কারণ গত বার দেখা গিয়েছিল, রাতে অনেক মানুষ বেরোচ্ছে হুল্লোড়ের জন্য।