রেকর্ড বৃষ্টিতে দেবীপক্ষের দ্বিতীয়াতেই বানভাসি তিলোত্তমা, রাজপথে নেমে নাকাল শহরবাসী

0
10

শারদোৎসবের সময় এমন নজিরবিহীন বৃষ্টি আগে দেখেনি কলকাতা। টানা পাঁচ ঘণ্টার রেকর্ড বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত গোটা শহর। জলমগ্ন শহরের সিংহভাগ রাস্তা। কলকাতা এবং শহরতলির নীচু এলাকাগুলি প্লাবিত। মাঝরাত থেকে মঙ্গলের ভোর পর্যন্ত যে তুমুল পরিমাণ বৃষ্টি শহরে হয়েছে তার তুলনা টানা যায় মেঘভাঙা বৃষ্টির সঙ্গে।

পুরসভা বলছে, সাম্প্রতিক অতীতে এত কম সময়ে এত ভারী বৃষ্টি দেখা যায়নি। ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই কলকাতার একাংশ জলে ডুবে যায়। তার দ্বিগুণ বৃষ্টি হয়েছে সোমবারের রাত থেকে মঙ্গলের ভোরে। জলমগ্ন শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মর্মান্তিক মৃত্যু সাত শহরবাসীর।

কলকাতা পুরসভার একটি সূত্র জানাচ্ছে, ইতিমধ্যে কলকাতা শহরে অতিরিক্ত বর্ষণের কারণে ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করা হয়েছে। কারণ, মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় আবার লকগেট বন্ধ করতে হবে। জমা জলের পরিস্থিতিতে লকগেট বন্ধ করা প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দুপুর ১২ টার পর গঙ্গায় ছ’মিনিটের জন্য একটি জোয়ার আসবে। যে কারণে লকগেট বন্ধ করা আবশ্যিক হয়ে পড়েছে।

জলবন্দি শহরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু
জলবন্দি শহরে দুর্ভোগের পাশাপাশি বাড়ছে প্রাণের আশঙ্কাও। এই জমা জলের কারণেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সকাল থেকে সাত কলকাতাবাসীর মৃত্যু হয়েছে। একবালপুর, বালিগঞ্জ প্লেস, কালিকাপুর, গড়িয়াহাট, বেনিয়াপুকুর ও নেতাজী নগরে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। সূত্রের খবর, নেতাজী নগরে একজন সাইকেল আরোহীর মৃত্যু হয়েছে। জমা জলের মধ্যে সাইকেল চালাতে গিয়ে ব্যালেন্স হারিয়ে তিনি বিদ্যুতের খুঁটি ধরতে যান। সেই সময়েই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে জানা গিয়েছে।

একটানা পাঁচ ঘণ্টার ধাক্কায় শহরের রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে গলি, চত্বর, সব জায়গায় হাঁটুজল । কলকাতা ও সংলগ্ন বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। বহু বাড়ির একতলা ভেসে গেছে জলে। বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। রেললাইনে জল জমায় ব্যাহত হয়েছে ট্রেন চলাচল। সবচেয়ে বেশি ধাক্কা খেয়েছে পুজোর প্রস্তুতি। কোথাও মণ্ডপ ভেঙে পড়েছে, কোথাও ভেসে গিয়েছে সাজসজ্জার সামগ্রী। অনেকেই বলছেন, সাম্প্রতিক কালে এমন দুর্যোগের সাক্ষী হননি তাঁরা। ফলে মেঘভাঙা বৃষ্টি হয়েছে কি না তা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা।

আবহাওয়া দফতর আগেই প্রবল বৃষ্টির সতর্কতা দিয়েছিল, তবে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা আঁচ করতে পারেননি কেউই। সোমবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হলেও মধ্যরাতের পর তীব্রতা বেড়ে যায়। টানা বৃষ্টিতে দ্রুতই নীচু এলাকাগুলি ডুবে যায়। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, পুজোর প্রস্তুতির জন্য বিভিন্ন জায়গায় মণ্ডপের সামগ্রী জমে থাকায় নিকাশিনালা আটকে গিয়েছিল, যা জল জমার পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করেছে।

ভোরের পরে বৃষ্টির দাপট খানিকটা কমলেও পুরোপুরি থামেনি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, আরও বৃষ্টি হতে পারে। ফলে যেসব এলাকা ইতিমধ্যেই জলের তলায়, সেগুলির অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা। পুরসভা ভোর থেকেই পাম্প চালিয়ে জল নামানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু বৃষ্টির পরিমাণ এত বেশি যে, জল সরে যেতে সময় লাগবেই বলে মনে করছেন পুরকর্তারা।

এমনিতেই কয়েক সপ্তাহ ধরে বারবার নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টি বেড়েছে। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, সপ্তাহান্তে পুজোর শুরুতেই আরও এক নিম্নচাপ তৈরি হবে। তার ফলে ফের প্রবল বর্ষণের সম্ভাবনা।

পুর প্রশাসনের হিসাবে, দক্ষিণ কলকাতায় বৃষ্টি হয়েছে উত্তর কলকাতার তুলনায় বেশি। তাই দক্ষিণ শহরতলির জীবনযাত্রা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। মঙ্গলবারও সারাদিন আকাশ মেঘলা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি চলবে বলেই অনুমান। তবে ভারী বৃষ্টি নামলে দুর্ভোগ আরও বাড়বে কলকাতার মানুষের।

নিম্নচাপের অবস্থান ও গতিপ্রকৃতি
অন্ধ্র এবং ওড়িশা উপকূলের মাঝামাঝি এলাকা বরাবর বঙ্গোপসাগরের বুকে একটি নিম্নচাপ গতকাল থেকে আকার নেওয়া শুরু করেছে। আগামী কালের মধ্যে তা গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আগেই অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলের মাঝে কোনও অংশে তা স্থলভাগে প্রবেশ করে যাবে।


নিম্নচাপের বিস্তার
যে নিম্নচাপটি তৈরি হয়েছে, তার ব‍্যাসার্ধ ৭০০ কিলোমিটার। তাই কেন্দ্রস্থল থেকে দু’পাশের প্রায় ১৪০০ কিলোমিটার এলাকার আবহাওয়াকে এই নিম্নচাপটি নিয়ন্ত্রণ করছে।

প্রভাব ক’দিন?
আপাতত বলা যেতে পারে, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ আগামী কাল, বুধবার আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়ার দাপট দেখা যেতে পারে। ২৮ তারিখ পর্যন্ত বৃষ্টি চলতে পারে।

পরবর্তী নিম্নচাপ অপেক্ষায়
এই নিম্নচাপ কাটলেই আরও একটি নিম্নচাপ তৈরি হবে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে। মায়ানমার ও বাংলাদেশ উপকূলের মাঝামাঝি এলাকা বরাবর। সেই নিম্নচাপ ক্রমে পশ্চিমে সরে এসে ওড়িশা ও পশ্চিমবঙ্গ উপকূলের মাঝামাঝি কোনও এলাকা দিয়ে স্থলভাগে ঢুকবে। সেই নিম্নচাপটির ব‍্যাসার্ধও বেশ বড় হবে।

পরবর্তী নিম্নচাপের আভাস ?
সমুদ্রপৃষ্ঠে জলভাগের তাপমাত্রার ঢাল দেখে নিম্নচাপ ঘনীভূত হওয়ার আভাস মেলে। নিম্নচাপ তৈরি হওয়ার তিন-চার দিন আগে থেকেই বোঝা যায় তার আকার বিস্তার কেমন হতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস
বর্তমান নিম্নচাপটির প্রভাব ২৮ তারিখ পর্যন্ত থাকতে পারে। ২৯ ও ৩০ তারিখ আবহাওয়া পরিষ্কার থাকতে পারে। তার পর থেকেই ফের পরবর্তী নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টি শুরু হয়ে যাবে।

Previous articlePapakat Adds a Festive Twist with the Exciting Puja Offer – Puchka Khao, Phuket Jao!
Next articleদুর্গাপূজার আগে প্রকাশিত ‘নবদুর্গা মাতৃরূপেণ সংস্থিতা’-র ট্রেলার

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here