দেশের সময় ওয়েবডেস্কঃ কলকাতায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত চতুর্থ রোগীর হদিশ মিলল। সল্টলেকের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ওই ব্যক্তি কয়েক দিন আগে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁর বয়স ৫৪ বছর। বাড়ি দমদমে। জানা গিয়েছে, সাম্প্রতিক কালে তিনি বিদেশ ভ্রমণে যাননি। দেশের মধ্যে কোথাও গিয়েছিলেন কিনা তা অবশ্য এখনও পরিষ্কার নয়। তবে এটা বলা যেতে পারে, যে কলকাতায় তথা বাংলায় এই প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কারও খোঁজ মিলল যাঁর দেহে ভাইরাসের সংক্রমণ দেশে বা এই রাজ্যেই থেকেই হয়েছে। ডাক্তারদের কাছে সেটাই সবথেকে উদ্বেগের।
সূত্রের খবর, ওই ব্যক্তির প্রবল শ্বাসকষ্ট রয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে এটা খুবই সাধারণ। তা থেকেই চিকিৎসকদের সন্দেহ হয়। তার পর তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। শনিবার তাঁর টেস্ট রেজাল্ট করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির শারীরিক পরিস্থিতি বেশ সঙ্কটজনক।
শুকনো কাশিজনিত সমস্যা নিয়ে গত ১৩ মার্চ থেকে ভুগছিলেন ওই ব্যক্তি। তার পর কাশি ও শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় তাঁকে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু তিন দিন হাসপাতালে ডাক্তারদের পর্যবেক্ষণে থাকার পরেও তাঁর উপশম বিশেষ হয়নি। বরং শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকে। ১৯ মার্চ শ্বাসকষ্ট বেড়ে এমনই হয় যে তাঁকে ভেন্টিলেটরে রাখতে হয়। ডাক্তাররা তাঁকে ইসিএমও সাপোর্টে রাখার পরামর্শ দেন।
তবে তখনও তাঁর শরীর নমুনা সংগ্রহ করে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়নি। পরে তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য নাইসেড এবং এসএসকেএম হাসপাতালে পাঠানো। তাতেই পজিটিভ রেজাল্ট ধরা পড়ে।
স্বাস্থ্য ভবনের একটি সূত্রের মতে, তাঁর শরীরে সত্যিই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে কিনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতেই দু’বার নমুনা পরীক্ষা করা হয়।
তবে এখন অন্য প্রশ্নও স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের মাথায় ঘুরতে শুরু করেছে। তা হল, ওই রোগীকে কোভিড-১৯ আক্রান্ত সন্দেহ না করে চিকিৎসা করছিল বেসরকারি হাসপাতাল। সে ক্ষেত্রে হাসপাতালের কেউ যদি অসাবধানতায় তাঁর সংস্পর্শে আসেন তা হলে তাঁর দেহেও সংক্রমণের আশঙ্কা থাকবে।
তবে সল্টলেকের ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য ভবনকে জানিয়েছে, ওই রোগীকে যে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য কর্মীরা দেখভাল করছিলেন তাঁরা সবরকমের সতর্কতা নিয়ে চলছিলেন। ওই রোগীকে এখন ইনটেসিভ কেয়ার ইউনিটে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। তাঁর শারীরিক পরিস্থিতির উপর প্রতি মুহূর্তে নজর রেখে চলেছেন ডাক্তাররা।
শনিবার সকালেই রাজ্যের তৃতীয় করোনা আক্রান্তের হদিশ পাওয়া গিয়েছিল। হাবড়ার বাসিন্দা ওই তরুণী সদ্য স্কটল্যান্ড থেকে ফিরেছিলেন। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স অব বিজনেস নিয়ে পড়াশোনা করছেন তিনি। পরিবারের দাবি দেশে ফেরার পর নিজের প্রথমে সেলফ আইসোলেশনে ছিলেন ওই তরুণী। পরে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে যান বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে। তাঁর লালারসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা-নিরিক্ষায় পাঠানো হয়। রিপোর্ট আসে পজিটিভ। জানা যায়, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন এই তরুণী। আপাতত বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এই তরুণী।
এর আগে আরও দু’জনের শরীরে মিলেছিল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। সেই দুই তরুণই লন্ডন থেকে সদ্য দেশে ফিরেছিলেন। বিমানবন্দরের থার্মাল স্ক্রিনিংয়ে প্রাথমিক ভাবে সংক্রমণ ধরা পড়েনি। তবে কদিন পরেই নানা উপসর্গ দেখা দেয়। টেস্ট করার পর রিপোর্ট আসে পজিটিভ। সারা পৃথিবীতে ত্রাস তৈরি করেছে মহামারী করোনাভাইরাস। সতর্কতার খাতিরে বিভিন্ন নির্দেশিকাও জারি করা হয়েছে। তবে সেসব না মেনে এই দুই তরুণ শহরে চষে বেরিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গত কয়েকদিন এই কাণ্ডে তোলপাড় হয়েছে গোটা বাংলা। এই দু’জনও ভর্তি রয়েছেন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে।
প্রথম আক্রান্তের পরিবারের সদস্যদের রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও দ্বিতীয় আক্রান্ত বালিগঞ্জের যুবকের পরিবারের চার সদস্যকে শনিবার সকালে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিন সকালে বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেওয়ায় এই চারজনকে রাজারহাটের কোয়ারেন্টাইন থেকে আনা হয়েছে বেলেঘাটা আইডিতে। তাঁদের নমুনাও পাঠানো হয়েছে পরীক্ষা-নিরিক্ষার জন্য।